অপরাধআইন আদালতশ্যামনগরসাতক্ষীরা জেলা

শ্যামনগরে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে পুকুরে বিষ প্রয়োগের মিথ্যা নাটক সাজিয়ে থানায় অভিযোগ

মোঃ ইসমাইল হোসেন, শ্যামনগর: শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব ধানখালী গ্রামে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে পুকুরে বিষ প্রয়োগের মিথ্যা নাটক সাজিয়ে থানায় অভিযোগ দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকার সুন্দরবন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জি এম মাছুম বিল্লাহ অভিযোগ করেছেন, তার প্রতিবেশী আব্দুল করিম অবৈধভাবে বসতবাড়ির পাশে পোল্ট্রি খামার স্থাপন করে এলাকাবাসীর জনজীবন বিপন্ন করে তুলেছেন। এ বিষয়ে তিনি বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনি খাতুনের নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ম. আসাদুজ্জামান স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে করিমকে অবৈধ পোল্ট্রি খামার বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু করিম সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পুনরায় খামারটি চালু করেন।

জি এম মাছুম বিল্লাহ জানান, “আমি তাকে আইন মেনে পরিকল্পিতভাবে খামার পরিচালনার পরামর্শ দিলে করিম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন। পরবর্তীতে ৮ অক্টোবর তার স্ত্রী খাদিজা বেগমকে বাদী করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭/১১৭(গ) ধারায় আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। এরপর ২৪ অক্টোবর তিনি থানায় অভিযোগ করেন যে, আমি তার পুকুরে বিষ প্রয়োগ করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “এটি একটি সাজানো নাটক। আমাকে ফাঁসানোর জন্যই এমন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে মাছের রোগ ছড়িয়ে পড়েছে, যার প্রভাবে একাধিক পুকুরে মাছ মারা যাচ্ছে। সেটিকেই সুযোগ হিসেবে নিয়ে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।”

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আব্দুল করিম একজন ধুরন্ধর প্রকৃতির লোক। ইউনিয়ন ও উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার তাকে নিষেধ করেছে, কিন্তু তিনি কারও কথা শোনেন না। পূর্বে মাদ্রাসা ও এতিমখানা নামে সরকারি চাল উত্তোলন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের হাতে ধরা পড়েছিলেন। অন্যদিকে মাছুম বিল্লাহ এমন কাজ করতে পারেন—এ কথাও পুরোপুরি অস্বীকার করা যায় না। এলাকায় এখন অনেক পুকুরেই মাছের রোগ দেখা দিয়েছে, এটি তারই অংশ হতে পারে।”

স্থানীয়ভাবে সহিদ, রুহুল আমিন মোড়ল, ভবতোষ মণ্ডল, নিখিল ও শাহিন শেখসহ একাধিক মাছ চাষির ঘেরে দেখা গেছে—বিশেষ ধরনের এক রোগে মাছ হঠাৎ করে মারা যাচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল করিম বলেন, “আমার মুরগির খামার বন্ধ করে দেওয়া এবং ক্ষতি করার হুমকি দেওয়ায় আমি বাধ্য হয়ে অভিযোগ করেছি।”

শ্যামনগর থানার এএসআই অলিউর রহমান জানান, অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত চলছে। উভয় পক্ষের বক্তব্য বিবেচনায় নিয়ে সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় চলছে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা। প্রশাসন বলছে—যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীকে আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *