অনলাইনজীবনযাপনতালাসদরসাতক্ষীরা জেলা

সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল রক্ষা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও সুপেয় পানির দাবীতে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল রক্ষা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও সুপেয় পানির দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১০ টায় সাতক্ষীরা পাকাপুল সংলগ্ন পাসপোর্ট অফিসের সামনে এ মুভমেন্ট কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় বক্তারা বলেন- সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খাল জেলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাধার। ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় জমিদার প্রাণনাথ রায়চৌধুরী শহরের উন্নয়ন, নৌযোগাযোগ এবং কৃষিকাজের সুবিধার্থে ১৮৬০ থেকে ১৮৬৫ সালের দিকে খালটি খনন করেন। তার নামানুসারেই খালের নামকরণ হয় “প্রাণসায়ের খাল। খালটি একসময় মরিচ্চাপ নদী থেকে নৌখালি খাল বা বেতনা নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে সাতক্ষীরা শহর ও আশপাশের গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যে নৌযান চলাচল, সেচ এবং বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এটি শহরের পানি নিষ্কাশন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করেন এক্টিভিস্টা সাতক্ষীরা, ইয়ুথ এ্যালায়েন্স সাতক্ষীরা, জেলা নাগরিক কমিটি, প্রথম আলো বন্ধু সভা, নদী বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি, বিডি ক্লিন, স্বদেশ, সাতক্ষীরা সাইবার ক্রাইম এ্যালার্ট টিম, বারসিক, ভিবিডি, ক্রিসেন্ট, ল স্টুডেন্ট ফোরাম, উত্তরণ, প্রাণসায়ের ও পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ, টিআইবি, গ্রীণম্যান. জনকল্যান সংস্থা ও শরুব ইয়ূথ টিম।

বক্তারা আরও বলেন- বর্তমানে খালটির বড় অংশ দখল, আবর্জনা ফেলা, অবৈধ ও অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ এবং বড় বাজারের বর্জ্য ফেলার কারণে খালটি মারাত্মকভাবে দূষিত ও অস্তিত্ব সংকটে। খালের তলদেশ ভরাট হওয়া ও নিয়ম মাফিক খনন না হওয়ার কারনে পানি প্রবাহ কম হচ্ছে। এর সংযোগ খালগুলো সুইচ গেটের মাধ্যমে জোয়ার-ভাটা বন্ধ হয়ে খালটি মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে শহরের জলাবদ্ধতা, দুর্গন্ধ, মশা-বাহিত রোগসহ নানাবিধ স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। বর্তমানে এটি পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং নগর পরিকল্পনার অন্তভুর্ক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রাণসায়ের খাল শুধু একটি জলপথ নয় এটি সাতক্ষীরা শহরের ঐতিহ্য, পরিচয় এবং পরিবেশগত ভারসাম্যের প্রতীক। এর পুনরুদ্ধার শহরের জীবনযাত্রা, অর্থনীতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যদি স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পৌরসভা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম, নাগরিক ও যুব সমাজ একসাথে কাজ করলে প্রাণসায়ের খাল আবারও ফিরে পেতে পারে তার হারানো নান্দনিকতা ও জীবনীশক্তি। খালের নান্দনিকতা ও পরিবেশ সুরক্ষা,খালের দুইপাড়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো। বৃক্ষরোপণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষিত সবুজ বেষ্টনী , যথাযথ স্থানে পর্যাপ্ত ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিন স্থাপন ও নিয়মিত বর্জ্য অপসারন এবং খালের দুপাশ দিয়ে সুরক্ষা ও সবুজায়ন করতে হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার, খাল সংলগ্ন ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন। জলবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন। অবৈধ দখল উচ্ছেদ, পৌরসভা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় খালের অবৈধ দখলমুক্তকরণ ও নিয়মিত মনিটরিং, যুবসহ নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে তদারকি কমিটি গঠন, স্থানীয় যুব সমাজ ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের অংশগ্রহনে খালের পরিচর্যা ও উন্নয়নের জন্য তদারকি কমিটি গঠন। কসাইখানা স্থানান্তর, দূষণকারী স্থাপনা স্থানান্তর, অবৈধ দখল অপসারন করা। খালের সংযোগ অবমুক্ত ও জনমত গঠন, খালের বর্তমান চিত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে সংযোগ খালগুলোর বাধাগুলো মুক্ত করতে হবে এবং এই সামাজিক আন্দোলন গতিশীল করার জন্য জনমত গঠন করাসহ বিভিন্ন দাবী করেন।

এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও তালা উপজেলায় সুপেয় পানির সংকট রয়েছে, উক্ত সমস্যা সমাধানকল্পে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে যাতে পানির অধিকার উক্ত উপজেলার মানুষের জন্য নিশ্চিত করা হয়। পানির বানিজ্যিকীকরণ বন্ধ করে পানির অধিকার নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। একই সঙ্গে আমরা দাবী জানাচ্ছি সকল মানুষের পানির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মানববন্ধন পরবর্তী প্রাণসায়ের খালের অস্তিত্ব রক্ষা সুপেয় পানির দাবিতে সাতক্ষীরার মাননীয় জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

প্রাণসায়ের খাল রক্ষার এই আন্দোলন শুধু একটি পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ নয়, এটি আগামী প্রজন্মের টিকে থাকার সংগ্রাম। আমরা চাই, আপনাদের সার্বিক সহযোগিতায় ফিরে আসুক প্রাণ সায়েরের গতিময়তা এবং নান্দনিক ও দূষণমুক্ত হোক প্রাণের শহর সাতক্ষীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *