কলারোয়ায় পরপর কন্যা সন্তান হওয়ায় নবজাতককে খালে ফেলে হত্যা, মা গ্রেপ্তার
গাজী হাবিব: অবিশ্বাস্য হলেও সাতক্ষীরায় এবার মায়ের হাতেই শেষ হলো মাত্র পাঁচ দিন বয়সী নবজাতক কন্যার জীবন! সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পরপর কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ায় হতাশা থেকে নিজের নবজাতক কন্যাকে খালে ফেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মা শারমিন আক্তারের (৩২) বিরুদ্ধে। পুলিশ ইতোমধ্যেই ওই মাকে গ্রেফতার করেছে।
হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটেছে সোমবার (২০ অক্টোবর) রাত পৌনে ১২টার দিকে কলারোয়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকালে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শিশুটির বাবা ইব্রাহিম খলিল (৪২) সোমবার রাত ৮টার দিকে থানায় এসে তার নবজাতক কন্যা নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে চান। কিন্তু তার বক্তব্য পুলিশের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটির মা শারমিন আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে শারমিন ভেঙে পড়েন এবং স্বীকার করেন, তাদের ইতোমধ্যে দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে- তাদের একজনের বয়স পাঁচ বছর, অন্যজন দেড় বছরের। সমাজ ও পারিবারিক চাপের মুখে তিনি আবারও কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়াকে মানতে পারেননি। সেই ক্ষোভ থেকেই সোমবার রাতে নবজাতকটিকে কোলে করে বাড়ির পাশের খালে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেন।
পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, পুলিশ বাড়ির পাশের সরকারি খালের কচুরিপনার ভেতর থেকে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করে। রাতের আঁধারে কচুরিপনার নিচে ভেসে থাকা সেই ক্ষুদ্র দেহটি উদ্ধারকালে উপস্থিত সকলে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
শিশুটিকে উদ্ধার করে দ্রুত কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক নবজাতকটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। শিশুর দাদি খাদিজা খাতুন বাদী হয়ে কলারোয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত মা শারমিন আক্তারকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিঠুন সরকার, ডিবি ও পিবিআই কর্মকর্তারা।
স্থানীয় হেলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার মুনসুর আলী বলেন, সন্ধ্যা থেকেই শিশুটিকে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে মা-বাবা দাবি করছিলেন। কিন্তু তাদের আচরণ ছিল অস্বাভাবিক। পরে পুলিশ ও ডিবি যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে খাল থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে।
জানা গেছে, শিশুর বাবা ইব্রাহিম খলিলের বাড়ি শ্যামনগর উপজেলায় হলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে কলারোয়ার রঘুনাথপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করতেন।
গ্রামের মানুষের মুখে এখন একটাই প্রশ্ন- কীভাবে পারে একটি মা তার নিজের সন্তানের প্রাণ নিতে? শিশুটির মৃত্যুতে গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

