অনলাইনঅপরাধজীবনযাপনতালাসদরসাতক্ষীরা জেলাস্বাস্থ্য

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালামের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও অফিস ঘেরাও

গাজী হাবিব: সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. আঃ সালামের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা শহরের খুলনা মোড়ে সাতক্ষীরা জেলাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন শেষে সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাও করা হয়।

এদিকে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিকে সাতক্ষীরার স্বাস্থ্য বিভাগে সিভিল সার্জন আব্দুস সালাম ও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফয়সাল আহম্মেদ এর আধিপত্য বিস্তারের লড়াই বলে বিশিষ্ঠজনেরা মনে করছেন।

সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোডের মোড়ে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা ভূমিহীন সমিতির সভাপতি কওছার আলী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাদাম,কলেজ শিক্ষক ইদ্রিস আলী, বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সদস্য ফারুক হোসেন, ভূমিহীন নেত্রী নাজমা আক্তার নদী, হাফিজুর রহমান, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক শাওন প্রমুখ।

মানববন্ধন শেষে অংশগ্রহণকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করে সিভিল সার্জন অফিসের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় “দুর্নীতিবাজ সিভিল সার্জনের অপসারণ চাই”, “নারী নির্যাতনকারীর বিচার চাই”, “সাতক্ষীরার স্বাস্থ্য প্রশাসন বাঁচাও” ইত্যাদি শ্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে।

বক্তারা বলেন, আমাদের নারীরা এখন সিভিল সার্জন অফিসে নিরাপদ না। একজন নারী কর্মী যদি সিভিল সার্জনের অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে তাকে অন্য জায়গায় বদলি বা চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কিভাবে কাজ করবো? যিনি দায়িত্বে থেকে মানুষকে সেবা দেওয়ার কথা, তিনি বরং আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। নারী কর্মীর মেয়ের সাথে যে অনৈতিক কাজ করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। তার বিরুদ্ধে নানান দুর্নীতি, অনৈতিক আচরণ, মদ্যপান ও ক্ষমতার অপব্যবহারেরঅভিযোগ রয়েছে। প্রশাসন নীরব থাকলে এই অন্যায়ের দায় তাদেরও নিতে হবে।

মানববন্ধনকারীরা বলেন, সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অপেশাদারী আচরণ করে থাকেন। নারী কর্মীদের দিয়ে তিনি ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে থাকেন। কোন নারী কর্মী তার কথা না শুনলে তাকে বদলীর ভয় দেখানো হয়। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে সদর হাসপাতালে কর্মরত সাতজন সে¦চ্ছাসেবককে কর্মচ্যুত করার অভিযোগ রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা জনস্বার্থে কাজ করলেও জেলা প্রশাসকের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের পেটে লাথি মারা হয়েছে। তারা অবিলম্বে সিভিল সার্জনের অপসারন দাবি করেন।

বক্তারা আরো বলেন, ডা. আব্দু সালাম প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারি হাসপাতালগুলোকে ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। তার কর্মকান্ডে অতীষ্ঠ সাধারন কর্মচারীরা। সাতক্ষীরায় আমরা চাই একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক স্বাস্থ্য প্রশাসন। কিন্তু বর্তমান সিভিল সার্জন সেই জায়গা কলঙ্কিত করেছেন। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালামকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং স্বাস্থ্যখাতকে রাজনৈতিক প্রভাব ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত রাখতে হবে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুস সালাম বলেন, সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফয়সাল আহম্মেদ গত তিন মাসে ১২ দিন স্বল্প সময় করে(আধ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা) অফিস করেছেন। তাকে ডেকে ডেকে অফিসে আনতে হয়। তার হাজিরার বিষয়টি ডিজিটাল হাজিরায় প্রমাণ রয়েছে। এ ছাড়া ডাঃ ফয়সাল জরুরী বিভাগে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে হাসপাতালের রোগী নিজের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান হার্ট ফাউ-েশনে ভর্তি করিয়ে থাকেন। ওইসব স্বেচ্ছাসেবকরা হাসপাতালেও অনিয়ম দূর্ণীতির সঙ্গে জড়িত। একারণে হাসপাতলে স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি স্বেচ্ছাসেবকদের দালাল হিসেবে চিহ্নিত করে তাদেরকে কাজ না করার জন্য নোটিশ দিতে বলা হয়। তিনি নোটিশ করে তাদেরকে কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। এতে ডাঃ ফয়সাল আহম্মেদ তার ব্যবসায়িক ক্ষতি বুঝতে পেরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার স্বেচ্ছাসেবকদের স্বার্থে অফিসে এসে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। বিষয়টি তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালে সোমবার কিছু ভূমিহীন লোকজনকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফয়সাল আহম্মেদ তার প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্চছাসেবকদের দিয়ে হাসপাতাল থেকে রোগী ভর্তি করানো ও সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মানববন্ধনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে আয়ুর্বেদ ডাক্তার ও হোমিও ডাক্তার দিয়ে ১৫০ জন করে ৩০০ রোগী দেখার বিরোধিতা করা নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর সিভিল সার্জনের সঙ্গে তার বচসা হয়। শাহ আলম নামের এক সাংবাদিকের সঙ্গে সিভিল সার্জনের বিরোধকে কেন্দ্র করে ধরণের মানববন্ধন হতে পারে বলে মনে করেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামিনুল হক জানান, শান্তি রক্ষার্থে তিনি সিভিল সার্জন অফিসে গিয়েছিলেন।

মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা ভূমিহীন সমিতির সহ-সভপতি শেখ হাফিজুর রহমান, জেলা শ্রমিক দলের একাংশের আহবায়ক রেজাউল ইসলাম রেজা, নদী, বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সাংগঠনিক সম্পদাক ফারুক হোসেন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক শাওন, জেলা তরুণ দলের সাবেক সভপতি আব্দুর রউফ রাজা, জেলা ভূমিহীন সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম রবিউল ইসলাম প্রমূখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *