সাতক্ষীরায় ভূমি অফিসের জারিকারক সাইদুরের বিরুদ্ধে ফাইল আটকে হয়রানীর অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরা সদর ভূমি অফিসের জারিকারক সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ফাইল আটকে ঘুষ গ্রহণ ও নানা হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তিনি নিয়ম অনুযায়ী মাঠে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের হাতে নোটিশ পৌঁছে না দিয়ে অফিসে বসেই নামজারি কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। বিনিময়ে নেন টাকা। এতে শুধু অফিসিয়াল অনিয়মই হচ্ছে না, বরং সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ফলে বদনাম হচ্ছে ভূমি অফিসের।
কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, নামজারী বা নামপত্তনের জন্য ফাইল প্রতি ৬ হাজার থেকে ৭ টাকা চুক্তির মিল হলেই খুব সহজেই নামজারী হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া, নামজারী করার জন্য নোটিশ হাতে না পাওয়ায় অনেকেই আইনগত প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত হতে পারছেন না। ফলে অজান্তেই অনেক ভূমি বিরোধ ও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। নোটিশ দেওয়ার জন্য মাঠে যাওয়ার কথা থাকলেও সাইদুর রহমান অফিসে বসেই ঘুষের মাধ্যমে কাজ করেন। যারা ঘুষ দিতে রাজি হন না, তাদেরকে দিনের পর দিন অফিসের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরতে হয়। তবুও হয়না কাজ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান- তিনি দালালের সহায়তা ছাড়া ৬ সেপ্টেম্বর নামজারির জন্য আবেদন করেছিলেন। ১৪ সেপ্টেম্বর নোটিশ জারির এসএমএস পেলেও হাতে নোটিশ পাননি। পরে ২১ সেপ্টেম্বর শুনানির দিনে অফিসে গেলে সার্ভেয়ার নোটিশ দেখাতে বলেন। তখন জারিকারক সাইদুর রহমানের কাছে গেলে তিনি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখান এবং প্রশ্ন করেন, এতদিন কোথায় ছিলেন? আগে থেকে খোঁজ নিতে হতো। পরে তাকে হাতে নোটিশ দিয়ে অন্যান্য ওয়ারিশদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে বলেন। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এ কাজ সরজমিনে গিয়ে জারিকারকেরই সম্পন্ন করার কথা।
ভুক্তভোগীরা জানান, সরকার অনলাইনে নামজারির ব্যবস্থা চালু করেছে যাতে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি কমে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নামজারির জন্য সর্বোচ্চ ফি ১১৭০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও বাস্তবে দালাল ও ঘুষের কারণে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনের ওপর আস্থা হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা যখন অভিযোগের বিষয়ে সাইদুর রহমানের বক্তব্য জানতে চান, তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনার কাজ কী? আমি অফিসে কাজ করি না, ফিল্ডে থাকি। আপনার সাথে আমি কেন বলব? আপনি আমার অফিসে স্যারের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে অশোভন আচরণও করেন।
এ বিষয়ে কথা হলে সাতক্ষীরা সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বদরুদ্দোজা বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে কোনো কর্মচারী যদি নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ করে থাকে বা জনগণের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করে থাকে, তবে তা গুরুতর অপরাধ। ভূমি অফিস জনগণের সেবা প্রদানের জায়গা, হয়রানির নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে, প্রমাণ পাওয়া গেলে জারিকারকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আপনি উক্ত ভুক্ত ভোগীকে আমার সাথে দেখা করতে বলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়- জমির নামপত্তন বা নামজারী করার জন্য ৫-৭ হাজার টাকা দিলেই ফাইলে সমস্যা থাকেনা। অফিসে বসেই সকল কাজ সম্পন্ন করে দেন সাইদুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া ভূমি অফিসে দালাল চক্রের কথা কারো অজানা নয়। পদস্থ অন্যান্য কর্মচারীদের যোগসাজশে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা ভূমি অফিসে কর্মরত অধিকাংশের কাজ। সাধারণ মানুষ যেন দালাল বা ঘুষ ছাড়া সরকারি সেবা নিতে পারেন, সেজন্য ভূমি অফিসে নিয়মিত নজরদারি ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানো এখন সময়ের দাবি।