জীবনের সাথে খাদ্যের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য: নিরাপদ খাদ্যের চেয়ারম্যান মোঃ জাকারিয়া
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোঃ জাকারিয়া বলেছেন, জীবনের সাথে খাদ্যের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। যতদিন জীবন আছে, খাদ্য তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকবে। আমরা জীবনধারণ এবং সুস্বাস্থ্যের জন্যই খাদ্য গ্রহণ করি।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরা শহরের লেকভিউ রিসোর্টে আয়োজিত দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রশিক্ষণে জেলার ৪০ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অংশ নেন।
তিনি বলেন, আমরা সাধারণত বলি “আগুন থেকে রক্ষা করবে ফায়ার সার্ভিস।” কিন্তু আসলেই কি তাই? আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়, তবে মূলত নিজেদের সুরক্ষা প্রথমে আমাদেরই নিতে হয়। ঠিক তেমনি, চিকিৎসা ব্যবস্থার কাজ হলো আপনি যখন বিপদে পড়বেন তখন সেখান থেকে আপনাকে উদ্ধার করা। কিন্তু নিজের স্বাস্থ্য রক্ষা করার দায়িত্ব প্রথমে আমাদেরই।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সবাই সুস্বাস্থ্য চাই। সুস্বাস্থ্যের মূলনীতি দুটি হলো যে খাদ্য গ্রহণ করবেন তা যেন নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর হয় এবং সুস্বাস্থ্যের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। এই দুটি বিষয় মানা না হলে, চিকিৎসক যতই চেষ্টা করুন না কেন, আপনার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জেলা কার্যালয় সাতক্ষীরার উদ্যোগে এ প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়। কারিগরি সহযোগিতা দেয় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি। প্রশিক্ষণে শিশুদের জন্য নিরাপদ খাদ্যের প্রাথমিক ধারণা, করণীয়-বর্জনীয়, মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি এবং হাত ধোয়ার পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। শিক্ষকরা এই জ্ঞান শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শেখাবেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান, সচিব ও STIRC প্রকল্পের পরিচালক শ্রাবস্তী রায়, প্রকল্পের টিম লিডার আতসুশি কইয়ামা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল আমীন ও জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার দীপংকর দত্ত।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, প্রায় সব স্কুলের বাউন্ডারি ওয়ালের বাইরেই সারি সারি দোকান। এসব দোকানে ঝালমুড়ি, ফুচকা, চটপটি, আইসক্রিমসহ নানা ধরনের মুখরোচক খাবার বিক্রি হয়। স্কুল শেষে কিংবা টিফিনের ফাঁকে বাচ্চারা অভিভাবকসহ এ খাবার খেতে ভিড় জমায়।
তিনি বলেন, কিন্তু যদি একটু গভীরভাবে দেখা যায়, দেখা যাবে এসব খাবারের কোনো সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ফুচকা বিক্রেতারা এক বালতি পানি দিয়েই সারাদিনের সব কাজ সারছে ,সেই একই পানি দিয়ে প্লেট ধোয়া, হাত ধোয়া, এমনকি ঘাম মোছার কাজও করছে। এরপর একটিমাত্র গামছা দিয়ে সারাদিন সব মুছে নিচ্ছে। এসব আমরা চোখের সামনে দেখেও সেই অনিরাপদ খাবার খাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে যাদের সামর্থ্য বেশি, তারা তথাকথিত “জামফুট” খাচ্ছেন, যেখানে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও অস্বাস্থ্যকর উপাদান ব্যবহার করা হয়। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা কোথাও দাঁড়িয়ে নেই। শিক্ষকদের সবসময় মনে রাখতে হবে দুটি শব্দ “Food Security” এবং “Food Safety”। শুধু খাবারের প্রাপ্যতাই নয়, খাবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও এখন সময়ের দাবি।