অনলাইনআইন আদালতইতিহাস ঐতিহ্যজীবনযাপনফিচারলিডসদরসাতক্ষীরা জেলাসারাবাংলা

সাতক্ষীরায় আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসের আলোচনা সভা: ১২ দফা সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার: আমাদের নদীগুলো, আমাদের ভবিষ্যৎ” এই স্লোগানে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস ২০২৫ উপলক্ষে সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় জেলার নদী ও খালের নাব্যতা সংকট, অবৈধ দখল, অপরিকল্পিত খনন ও পরিবেশগত বিপর্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বক্তারা। নদী সুরক্ষায় সমন্বিত আন্দোলন গড়ার আহ্বান জানিয়ে ১২টি সুপারিশ গৃহীত হয়।

মঙ্গলবার ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা ম্যানগ্রোভ সভাঘরে নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্বদেশের পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্তের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বাপা সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ, জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এড. আজাদ হোসেন বেলাল, খাল বাঁচাও আন্দোলনের প্রফেসর মোজাম্মেল হোসেন, সাবেক প্রেসক্লাব সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপ্পী, বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, পরিবেশ কর্মী, নারী নেত্রী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরা নদীবেষ্টিত জেলা হলেও এখনকার নদীগুলো দখল, দূষণ ও খননজনিত সমস্যায় বিপর্যস্ত। জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা বাড়ছে, কৃষি ও জীবিকা হুমকির মুখে। টিকে থাকতে হলে টেকসই পরিকল্পনা ও স্থানীয় অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নদী সুরক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে।

আলোচনার ভিত্তিতে নিচের ১২ দফা সুপারিশ গৃহীত হয়:

১. সমন্বিত উদ্যোগ ও সহযোগিতা: প্রতিযোগিতার বদলে একসাথে কাজ করার আহ্বান।
২. সচেতনতা ও গণসম্পৃক্ততা: সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে নদী রক্ষার আন্দোলন জোরদার করা।
৩. সাধারণ নীতি ও নমনীয়তা: সবার জন্য প্রযোজ্য নীতি ও স্থানীয় বাস্তবতা অনুযায়ী প্রয়োগযোগ্য গাইডলাইন তৈরি।
৪. গবেষণা ও নদী তালিকা: নদীর সংযোগ, উৎস, নাব্যতা ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা।
৫. স্থানীয় প্রেশার গ্রুপ: সাংবাদিক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কার্যকর সামাজিক চাপ সৃষ্টি।
৬. আইন বাস্তবায়ন: নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা ঘোষণা অনুযায়ী বাস্তবায়ন এবং আদালতের রায় কার্যকর করা।
৭. প্রশাসন-রাজনীতি-বাণিজ্য সংযুক্তি: এই তিন পক্ষকে নদী রক্ষায় জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
৮. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: নদী প্রকল্পের অর্থব্যবহার ও অগ্রগতি মনিটরিং।
৯. আন্তসীমান্ত নদী সমস্যা: ভারতের খনি ও প্রকল্পের প্রভাব মোকাবেলায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও কূটনৈতিক উদ্যোগ।
১০. নিয়মিত পর্যালোচনা: চলমান কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে কেন্দ্রীয় ফলোআপ কাঠামো।
১১. মিডিয়া ও জনমত গঠন: গণমাধ্যম ও সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে নদী বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি।
১২. জনমতের অন্তর্ভুক্তি: নদী প্রকল্পে জনগণের মতামত ও বাস্তব অভিজ্ঞতা যুক্ত করার আহ্বান।
বক্তারা বলেন, নদী রক্ষার এই আন্দোলন শুধু পরিবেশ নয়, বরং একটি ন্যায্য ও টেকসই সমাজ গঠনের সহায়ক। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই দায়িত্ব বর্তমান প্রজন্মকেই নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *