অনলাইনঅপরাধআইন আদালতকালিগঞ্জসাতক্ষীরা জেলা

কালিগঞ্জে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে চরম ভোগান্তিতে জনজীবন

মাসুদ পারভেজ, কালিগঞ্জ: কালিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত গলঘেসিয়া নদীর জেগে ওঠা চরে মাছ চাষের অজুহাতে চলছে অবৈধ বালির ব্যবসা। ভূমি অফিস থেকে একসনা বন্দোবস্ত নেওয়া হলেও বাস্তবে বালিই প্রধান পণ্য হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও ভূমি অফিসের নীরব সহযোগিতায় দখল কার্যক্রম দিন দিন বাড়তে থাকায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ, পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চরসংলগ্ন ভূমিহীন প্রকল্পের বাসিন্দারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাত্র তিন বছর আগেও কালিকাপুর মৌজার চরটি ছিল উন্মুক্ত ভূমি। চরসংলগ্ন ভূমিহীন প্রকল্পে বসবাসরত পরিবারগুলো গৃহপালিত পশুপাখির চারণভূমি হিসেবে ব্যবহার করতেন। কিন্তু কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি মোজাম ঢালীর ছেলে হাবিবুর রহমান তার প্রতিবন্ধী ভাই মেহের আলীর নামে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ভূমি অফিস থেকে শর্তসাপেক্ষে বন্দোবস্ত নেন। শর্ত ছিল রক্ষণাবেক্ষণ ও মাছ চাষ। কিন্তু বাস্তবে সেখানে শুরু হয় বালির ব্যবসা, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

প্রকল্পবাসীদের অভিযোগ, প্রতিদিন শত শত ট্রলি ও ড্যাম্পার নদীর চর থেকে বালি বহন করছে। এর ফলে তীব্র ধুলাবালি ও শব্দদূষণে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ পথচারীরা বিপাকে পড়ছেন।

এছাড়া জিওব্যাগ ফেলে কৃত্রিমভাবে মাটি ভরাট করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে শুধু নদী সংকুচিত হচ্ছে না, আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশও ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়ছে।

স্থানীয় শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ভূমি অফিসের নীরব ভূমিকা না থাকলে এ ধরনের বন্দোবস্ত সম্ভব হতো না। মাছ চাষের নামে নদীর চরে দখল করে বালির ব্যবসা চলছে, এতে পরিবেশ ও নদী দুটোই ধ্বংসের মুখে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় অভিযোগ করেন, বিশেষ সুবিধা নিয়ে ভূমি অফিস যত্রতত্র বন্দোবস্ত দিচ্ছে। ফলে প্রভাবশালীরা সুযোগ নিচ্ছে এবং দখল কার্যক্রম দ্রুততর হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে হাবিবুর রহমান দাবি করেন, কালিকাপুর মৌজার ১নং খতিয়ান ও ৪৫৫৫ দাগের এক একর জায়গা আমি বৈধভাবে ভূমি অফিস থেকে একসনা বন্দোবস্ত নিয়েছি। বৈধ ব্যবসাই করছি। তবে প্রকল্পবাসীদের মতে, বৈধতার আড়ালে যেভাবে বালির ব্যবসা চলছে তাতে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, চলাচলের ভোগান্তি এবং পরিবেশ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডল বলেন, মাছ চাষের বন্দোবস্ত নিয়ে কেউ বালির ব্যবসা করতে পারবেন না। বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। সরেজমিন তদন্ত করে এবং কাগজপত্র যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় সচেতন মহলের আশঙ্কা, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে গলঘেসিয়া নদী সংকুচিত হয়ে পড়বে। এতে শুধু প্রকল্পবাসী নয়, বৃহত্তর অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *