সাতক্ষীরায় অ্যান্টিভেনম সংকটে প্রাণ গেল শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ এন.এল. দাসের ভাতিজির
তাপস কুমার ঘোষ, কালিগঞ্জ: সাতক্ষীরায় অ্যান্টিভেনম (Antivenom) সংকটের কারণে অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী অহনা দাশের (১৪) করুণ মৃত্যুতে জেলাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অহনা দাশ কালিগঞ্জ উপজেলার ধুলিয়াপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নরেন্দ্র নাথ দাশের একমাত্র কন্যা এবং জেলার খ্যাতনামা শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ এন. এল. দাসের ভাতিজি।
জানা যায়, গত ১৩ আগস্ট সন্ধ্যায় কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামে নিজ বাড়ির রান্নাঘরে চা বানানোর সময় হঠাৎ একটি ব্যাঙের পেছনে ধাওয়া দেওয়া সাপ অহনাকে ছোবল দেয়। প্রথমে স্থানীয়ভাবে কবিরাজি চিকিৎসা নেওয়া হলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এরপর তাকে নেওয়া হয় কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসিইউ না থাকায় তাকে দ্রুত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে টানা তিনদিন আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১৬ আগস্ট দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে এই কিশোরী।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাপের বিষে আক্রান্ত রোগীর জন্য অ্যান্টিভেনমই একমাত্র কার্যকর প্রতিষেধক। অথচ জেলায় অ্যান্টিভেনম সংকট থাকায় অহনার জীবন রক্ষা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় চিকিৎসক মহলসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “উপকূলীয় উপজেলা হিসেবে কালিগঞ্জে অ্যান্টিভেনম থাকার কথা। তবে যে সময়ে রোগীকে ভর্তি করা হয়েছিল, তখন হয়তো সরবরাহ ছিল না। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম রয়েছে।
এদিকে, শনিবার দুপুরে সনাতন ধর্মীয় নিয়মে অহনার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। শ্মশানে তাকে শেষ বিদায় জানাতে সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-স্বজন থেকে শুরু করে এলাকার অসংখ্য মানুষ উপস্থিত হন। সর্বত্র শোকের আবহ নেমে আসে।
অহনার অকাল মৃত্যু সাধারণ মানুষকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে— যদি একজন চিকিৎসকের পরিবারই পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পায়, তবে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী? দ্রুত সরকারি পর্যায়ে প্রত্যন্ত উপজেলা পর্যায়েও পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।