অনলাইনঅপরাধকালিগঞ্জজীবনযাপনসাতক্ষীরা জেলাসারাবাংলাস্বাস্থ্য

স্বামীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে এ্যম্বুলেন্স খাদে, প্রাণ গেল স্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার: এ্যম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে তাসলিমা সুলতানা ময়না (৪৫) নামের এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টার দিকে সাতক্ষীরা- খুলনা সড়কের ডুমুরিয়া নতুন রাস্তার পাশে মোল্লা বাড়ির সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় এম্বুলেন্সে থাকা রোগী আরিফুল ইসলামসহ তিনজন জখম হয়েছেন। তবে এম্বুলেন্সের চালকরুপী নলতা ডায়াবেটিকস হাসপাতালের দালাল নূর ইসলাম বাবু পালিয়ে যায়।

নিহত তাসলিমা সুলতানা ময়না সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব মৌতলা গ্রামের আরিফুল ইসলামের স্ত্রী। আহত আরিফুল ইসলাম ও রিয়াজুল ইসলাম পূর্ব মৌতলা গ্রামের মানাউল্লাহ মোল্লার ছেলে। অপর জখম আব্দুস সালাম একই গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে ও আরিফুলের ভাগ্নে।

কালিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব মৌতলা গ্রামের আরিফুল ইসলাম জানান, পিঠে টিউমার আক্রান্ত ছোট ভাই আরিফুল ইসলামকে খুলনা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য নলতা ডায়াবেটিকস হাসপাতালের নিয়ন্ত্রনাধীন মৌতলা গ্রামের আনছার আলীর ছেলে শাহীনুর রহমানের এ্যম্বুলেন্সটি(ঢাকা মেট্রো-ছ-৭১-২২২৩) সাড়ে চার হাজার টাকায় ভাড়া করেন তিনি। সে অনুযায়ি তিনি নিজে, ভাই আরিফুল, ভাইয়ের স্ত্রী তাসলিমা সুলতানা ময়না ও ভাগ্নে আব্দুস সালাম বুধবার সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। এম্বুলেন্স চালাচ্ছিল ভদ্রখালি গ্রামের শওকত আলীর ছেলে নূর ইসলাম বাবু। সকাল ৯টার দিকে ডুমুরিয়া নতুন রাস্তার মোড়ের পাশে মোল্লা বাড়ির সামনে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে একটি লাইট পোষ্টে ধাক্কা মারে। এ্যম্বুলেন্সটি উল্লে যেয়ে পাশর্^বর্তী পানিভর্তি খাতে পড়ে। এতে তার ভাইয়ের স্ত্রী তাসলিমা সুলতানা ময়না মারা যায়। তারা দুই ভাই ও ভাগ্নেকে পানির ভিতর থেকে উদ্ধার করে ডুমুরিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও চালক পালিয়ে যায়। রাত ৮টার দিকে তারা তাসলিমা খাতুন ময়নার লাশ, অসুস্থ ভাই আরিফুল ইসলামকে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছান। নিহতের ভাই বিদেশ থেকে ফেরার পর বৃহষ্পতিবার পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে।

দেবহাটা উপজেলার মাটিকুমড়া গ্রামের খলিলুর রহমান জানান, মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতনে তিনি এক বছর যাবৎ নলতা ডায়াবেটিক হাসপাতালের এ্যম্বুলেন্স চালিয়ে আসছিলেন। এ্যম্বুলেন্সটির ফিটনেস ছিল না। বেতনের বকেয়া ৩২ হাজার টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে নলতা ডায়াবেটিক হাসপাতালের মালিক মিলন হোসেন তাকে গত ২৩ জুলাই তাড়িয়ে দেন। এরপরও টাকা না দিয়ে বিভিন্নভাবে টালবাহান করে আসছেন। তিনি প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার তাকে পাঁচা হাজার টাকা করে দেওয়ার জন্য বলেন। এমনকি বুধবার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও মিলন হোসেন তাকে আগামি শুক্রবার আসতে বলেন।

নলতা ডায়াবেটিক হাসপাতালের একাধিক কর্মচারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চালক খলিলুর রহমানকে বিতাড়িত করার পর ফিটনেসবিহীন এ্যম্বুলেন্সটি চালানোর জন্য কয়েকদিন ধরে প্রশিক্ষণ নেয় ক্লিনিকের দালাল ভদ্রখালি গ্রামের নূর ইসলাম বাবু। এ ধরণের লোক দিয়ে এ্যম্বুলেন্স চালানোর ফলে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাসলিমা সুলতানা ময়নার মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে রোগীসহ আরো তিনজন । পিঠ বাঁচাতে নূর ইসলাম বাবুকে আত্মগোপনে রেখেছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে নলতা ডায়াবেটিক হাসপাতালের মালিক মিলন হোসেন এম্বুলেন্স চালক প্রকৃত পক্ষে লাইসেন্সধারী চালক ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যেয়ে বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত এম্বুলেন্সে থাকা রোগী ও যাত্রীদের চিকিৎসা ব্যাপারে তিনি খোঁজ খবর নিচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *