অনলাইনসাতক্ষীরা জেলাসারাবাংলাসাহিত্য

প্রয়ান দিবসে শিশু-বৃদ্ধের উচ্চারিত কন্ঠস্বর ‘রবীন্দ্রনাথের অবস্থান বাংলার পুরো আকাশের সমান’

বিশেষ প্রতিনিধি: চুরাশিতম প্রয়াণ দিবসে শিশুর গানে, তরুণের কবিতায়, অধ্যাপকের জীবন আলেখ্যের আলোচনায় উঠে আসে সমুচ্চারিত বার্তা ‘রবীন্দ্রনাথের অবস্থান বাংলার পুরো আকাশের সমান’।

সাতক্ষীরার শিল্পকলা একাডেমিতে বুধবার সকাল দশটায় অনুষ্ঠিত কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস ১৪৩২ এর আয়োজনে ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’ সঙ্গীতে কন্ঠ মিলিয়ে শত শত নারী পুরুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ‘স্মরণ শোভাযাত্রা’ যে শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি করে তাতে অনেক বেশী স্পষ্ট হয় বাঙালীর আপনের আপন হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

আয়োজক সংগঠন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সাতক্ষীরা শাখার সদস্য নয়ন ভট্টাচার্য্য জানান, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও সংগঠকরা বিশ^কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রদ্বীপ প্রজ্জ্বলন ও পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করে শুরু করে দিনের আয়োজন। এরপর প্রতিষ্ঠানের শিশু-কিশোর বিভাগের বিদ্যার্থীরা গান, নাচ ও আবৃত্তি করে হৃদয়ের গভীর থেকে তুলে আনেন কবির জীবন কর্ম। কবির জীবন আলেখ্য ও আলোচনাতে তীব্রভাবে উচ্চারিত হয় রবীন্দ্রনাথের জীবন আদর্শ।

অনুষ্ঠানের আলোচক শুভ্র আহমেদ বলেন, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিনিধি। বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তিনি নির্দেশকের ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আমাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীত স্রষ্টা। চিত্রকর, সমাজচিন্তক এবং মানবতাবাদী দার্শনিক হিসেবেও রয়েছে তার বিশ্বখ্যাতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের একজন প্রভাবশালী লেখক, সুরকার, এবং চিত্রশিল্পী। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর লেখালেখির হাতেখড়ি হয়েছিল। তিনি বাংলা সাহিত্য ও সংগীতে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন। তাঁর বিভিন্ন রচনা, যেমন- কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘গুরুদেব’, ‘কবিগুরু’ ও ‘বিশ্বকবি’ অভিধায় পরিচিত। তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবদানের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এই প্রয়াণ দিবসে, আমরা তাঁর অবিস্মরণীয় সাহিত্যকর্ম ও দর্শনকে স্মরণ করি এবং তাঁর আদর্শে নিজেদের জীবনকে আলোকিত করি।

সংস্কৃতিজন মোস্তফা নুরুজ্জামান বলেন, রবীন্দ্রনাথের অনবদ্য সৃষ্টি ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি তা আমাদের জাতীয় সংগীত হয়। বাংলার মানুষ তাই সংকট উত্তরণে প্রেরণা নেন রবীন্দ্র সাহিত্য থেকে। তিনি বাংলার বাউলদের ভাববাদী চেতনার সমন্বয় সাধন করে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেন। অহেতুক যুদ্ধ-সংঘাত, প্রতিক্রিয়াশীল উত্থান, জাতীয়তাবোধের সংকীর্ণতা, শ্রেণিবৈষম্য হানাহানি- এসবের কারণে বর্তমান বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন উলে¬খ করে তিনি বলেন, রবীন্দ্র সাহিত্য আমাদের পাঠ করতে হবে প্রাত্যহিক জীবনবোধের আলোকে। তিনি তৎকালীন পূর্ববঙ্গে আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে। তার জমিদারির দরিদ্র প্রজাদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, সমবায়নীতি ও কল্যাণবৃত্তি চালু করে তাদের ভিতর প্রণোদনা জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। তার প্রবর্তিত সমবায় ব্যাংক, ক্ষুদ্র ঋণের প্রচলন পরবর্তীকালে গ্রামীণ উন্নয়নে একটি মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের তিনি একান্ত আপনজন। শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরে অবস্থানকালে এসব অঞ্চলের মাটি ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। শিলাইদহ ও পতিসর অঞ্চলেই তিনি রচনা করেছিলেন ‘ছিন্নপত্র’র সিংহভাগ এবং অসামান্য কিছু গান।

জেলা কালচারাল অফিসার ফাইজা হোসেন অন্বেষা তার বক্তৃতায় বলেন, শিশুসহ নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠা করেছেন শান্তি নিকেতন। সেইসঙ্গে তিনি পুথিগত শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। মানবতাবাদী কবি রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার ক্ষেত্রে চিরকাল বিশ্বের জানালাকে খুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। জীবনের প্রতিটি সমস্যা-সংকট, আনন্দ- বেদনা এবং আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্রসৃষ্টি আমাদের চেতনাকে আন্দোলিত করে।

সমাপনি বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন বলেন, ‘বাঙালির আবেগ-অনুভূতি, সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ, আনন্দ-বেদনা প্রভৃতি স্থান খুঁজে পায় রবীন্দ্র লেখনীতে। বিশ্বজুড়ে যে সংকট, অশান্তি, যুদ্ধাবস্থা, সমাজের সকল অনাচার-অবিচার দূরীকরণ এবং সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমাদের কবির কাছ থেকে অনেক কিছু জানার ও শেখার রয়েছে।’

অনুষ্ঠানের গান, কবিতা ও নাচে সাধারণ বিভাগ থেকে অংশ নেন, বৃষ্টি গাইন, মন্দিরা সরকার, রথি মন্ডল, মিতু মন্ডল, দিশা পোদ্দার, সাগর মজুমদার, রুপালি দে, পুষ্পিতা চক্রবর্তী অর্পা, শ্রেয়সী মুখার্জী ও সবুজ তরফদার। শিশু কিশোর বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করে, অন্বেষা মজুমদার, পায়েল ঘোষ, অর্ঘ্য ঘোষ, অতৃ দাস, আগমনী বর্মন, অর্থি গায়েন, অন্বেষা গায়েন, রূপম মন্ডল , প্রিয় মলি¬ক, উৎস মজুমদার, রনিত মন্ডল , দামিনী হালদার, অত্রি দাস, ঐশী মলি¬ক, প্রতিমা রায়, মেধা দাস, মনীষা মন্ডল, উষসী মজুমদার, প্রিন্স ঢালী, অগ্নিভ বিশ্বাস, অদ্রি রায় , অরণ্য চক্রবর্তী, সমৃদ্ধ হোড়, মৌমিতা বিশ্বাস, মনি দেবনাথ, তমা ব্যানার্জি, হেমা মুখার্জি, তীর্যক কুমার মন্ডল ও অগ্রঃ।

জীবন আলেখ্যের ধারা বর্ণনা করেন, সাবরিনা ইয়াসমিন প্রমা, তীর্যক কুমার মন্ডল, সমৃদ্ধ হোড় ও বৃষ্টি।

‘‘রবীন্দ্রনাথ আকাশে থাকেন, তবুও আমাদের গানের ভেতর এসে বসেন” বলল শিশু অন্বেষা মজুমদার। প্রয়াণ দিবসে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার কণ্ঠে উচ্চারণ: “রবীন্দ্রনাথের অবস্থান বাংলার পুরো আকাশের সমান”

বিশ্বকবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রদ্বীপ প্রজ্জ্বলন ও পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করে, সাংবাদিক আমিনা বিলকিস ময়না, অধ্যাপক শেখ হেদায়েতুল ইসলাম, প্রতাপ কুমার সরদার, আতিকুর রহমান জাকু, নয়ন ভট্টাচার্য্য, তুষার মিত্র, মিঠুন দেবনাথ, প্রিতম রায় চৌধুরী ও রঘু রায় চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন, সংস্কৃতিজন মোস্তফা নুরুজ্জামান, অধ্যাপক শুভ্র আহমেদ। বক্তব্য রাখেন জেলা কালচারাল অফিসার ফাইজা হোসেন অন্বেষা।

অতিথি ছিলেন নবারুণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক, কবি মনিরুজ্জামান মুন্না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অনুষ্ঠানের আয়োজক সংগঠন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ্ সাতক্ষীরা শাখার আহ্বায়ক শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *