তালাসাতক্ষীরা জেলা

কয়েকদিনের অতিবৃষ্টিতে তালার নিন্মাঞ্চলে জলাবদ্ধতা: শঙ্কিত এলাকাবাসী!

সেকেন্দার আবু জাফর বাবু, তালা: তালায় কয়েকদিনের অতিবৃষ্টিতে খাল-বিলের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা পাটের ক্ষেত, ধানের বীজতলা সহ অন্যান্য ফসল। কর্মহীন হয়ে পড়েছে শ্রমজিবী মানুষ। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না হলে এবছর চাষাবাদ করা সম্ভব না হওয়ার আশঙ্কায় কৃষক।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, উপজেলার খেশরা ও তেতুলিয়া ইউনিয়নের শিরাশুনি, লাউতাড়া, সুভাশিনী, মদনপুর, শুকদেবপুর, নওয়াপাড়া ও কেশবপুর উপজেলার হিজলডাঙ্গা, বাউশলা, পশ্চাক্রা, শ্রীফলা, আঠন্ডা, লক্ষীনাথকাটি এলাকায় অতিবৃষ্টির ফলে খাল-বিল সহ বিস্তৃর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

শিরাশুনি এলাকার মিজানুর রহমান, জিয়াউর রহমান, নওশের আলী, আক্তারুজ্জামান, কুদ্দুস শেখ সহ অনেকেই বলেন, গত বছর এই এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। মানুষের ঘর, উঠান, রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত ছিল। ক্ষেতের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। বীজতলা নষ্ট হওয়ায় অধিকাংশ অধিকাংশ কৃষক ধান চাষ করতে পারেনি। এই অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রায় ৬ মাস পানিবন্দি জীবন যাপন করা সহ হাজার হাজার শ্রমজিবী মানুষ বেকার বসে থাকার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করেছে।

তারা বলেন, জলাবদ্ধ হলে অনেক ছুটে আসেন, সমাধানের আশ্বাস দেন তবে পানি নেমে গেলে কেউ মনে রাখে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম পরিকল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলে জানান তারা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান, মনিরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, আমিনুর রহমান বলেন, এই অঞ্চলের জলাবদ্ধতার মূল কারণ অপরিকল্পিত মাছের ঘের। ছোট ছোট মাছের ঘেরে পানি সরানোর ব্যবস্থা না থাকা এবং রাস্তার উপর নির্মিত কালভার্টের মুখ আটকিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

তারা বলেন, এলাকার ঘের মালিকরা ছোট-বড় সকল কালভার্টের মুখে বালুর বস্তা ও লোহার গ্রীল দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। সে কারণে বৃষ্টির পানি কোনো ভাবেই খালে বা নদীতে নামতে পারছে না। ছোট লাউতাড়া, সুভাষিণী, শিরাশুনি, হিজলডাঙ্গা, নরনিয়া অঞ্চলের কালভার্টের মুখ পরিস্কার করতে পারলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে জানান তারা।

উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান বলেন, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণের আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতায় উপজেলা পানি কমিটি ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে মিলে এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘবে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালিয়েছে। তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা নিরসনে এই অঞ্চলের সকল খাল পরিষ্কার ও কালভার্টের মুখ পরিস্কার করে পানি সরানোর ব্যবস্থা করেছে। ধান উৎপাদনের জন্য কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সাংবাদিক সম্মেলন, মানববন্ধন করা, পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেছিল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকা পরিদর্শন ও পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছুই করেনি বলে তিনি জানান।

তেঁতুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এম এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, যশোর জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার একাংশ ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলা একাংশের পানি ভদ্রা নদী দীয়ে প্রবাহিত হয়। আমাদের এই অঞ্চলের পানি চুকনগর অঞ্চলের নরনিয়া খাল দিয়ে ভদ্রা নদীতে পড়ে। ভদ্রা নদীর তলদেশে পলি জমে সমতল থেকে উঁচু হওয়ার কারণে মনিরামপুর ও কশবপুরের পানি উঠানামা করতে পারে না। তালার এই অংশ অপেক্ষাকৃত নীচু হওয়ায় ঐ অঞ্চলের পানি এদিকে ঢুকে পড়ে। নরনিয়া খালের প্রায় ১ কিলোমিটার পলি পড়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ভদ্রা নদীতে পানি পড়তে পারে না। এই অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে হলে ভদ্রা নদী ও নরনিয়া খাল খননের ব্যবস্থা করতে হবে। নরনিয়া স্লুইস গেট থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত আপার ভদ্রানদী খনন করা না হলে গত বছরের তুলনায় এবছর আরও অধিক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপা রাণী সরকার বলেন, আমি তালা উপজেলায় যোগদান করেই জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। আজ সকাল ৭টা থেকে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সাথে নিয়ে উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াপাড়া থেকে দেওয়ানিপাড়া পর্যন্ত খালের নেটপাটা অপসারণ করিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সকলের মরামর্শ দেয়া হয়েছে সরকারী খালের নেট পাটা ও কালভার্টের মুখ পরিস্কার করার জন্য। আগামীতে এই অভিযান অব্যহত থাকবে। জলাবদ্ধতার আগেই সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করা যাবে।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, আপার ভদ্রা নদীর নরনিয়া থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে পলি অপসারণের কাজ শুরু হবে। এই অংশের পলি অপসারণ হলে জলাবদ্ধতার ঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *