অনলাইনকৃষিসদরসাতক্ষীরা জেলা

সুপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সাতক্ষীরা জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারন করেছে, দরকার প্রশাসনিক তৎপরতা

মেহেদী হাসান শিমুল: সাতক্ষীরায় বিগত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে সাতক্ষীরা পৌরসভার সহ সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় বিগত দিনের চেয়ে এবার ভারি বৃষ্টিপাতে সাতক্ষীরা পৌরসভার এক তৃতীয়াংশ পানির নিচে। প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবরের ভিতরে মৌসুমী জলবায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বাংলাদেশের জেলা দক্ষিণ আঞ্চলিক জনবহুল এলাকায় বৃষ্টি আসার সাথে সাথে পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় সাতক্ষীরা শহরের বেশিরভাগ অঞ্চলে স্থায়ী জলবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে।

বিশেষ করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, জজকোর্ট এলাকায়, সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন এলাকা,সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ এলাকায়, ঝুঁটিতলা, মাছখোলা ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ এলাকা, সাতক্ষীরা সুলতানপুর কাজীপাড়া, কাঠিয়া মেঠো পাড়া, পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস, ইটাগাছা ,কামালনগর, খড়িবল এলাকার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অল্প বৃষ্টিতে সৃষ্ট হয় তীব্র জলাবদ্ধতায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন, উল্লেখিত জলবদ্ধতা এলাকায় রাস্তা রাস্তাঘাটে পানি , মানুষের ঘরের ভিতরে পানি, টিউবওয়েল পানির নিচে, স্যানিটেশন ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে।

সাতক্ষীরা ইটাগাছা এলাকার ওয়ারিদ হাসান কাজল জানান আমার বসত বাড়ির চারিপাশে পানি, ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘরের ভিতরে বন্দী জীবন যাপন করতে হচ্ছ।, ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না, ভেলা ও নৌকা যোগে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের ঘুড়িরডাঙ্গী এলাকার সুলতান মাহমুদ জানান বৃষ্টি হলেই আমাদের এলাকায় জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। জলবদ্ধতার কারণে আমরা খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি , রান্না খাওয়ার এবং টয়লেটের ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের শাওন হোসেন জানান দীর্ঘ ৬ মাস ধরে আমরা পানিবন্দী অবস্থায় জীবন যাপন করি, পানির ভিতর হাঁটাচলা করতে গিয়ে পানি বাহিত রোগে ভুগছি আমরা খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি।

অল্প বৃষ্টিতেই এই জলাবদ্ধতায় দুর্বিষয় হয়ে পড়েছে জনজীবন প্রতিবছর জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অর্থাৎ ছয় মাস জলবদ্ধতার শিকার হতে হচ্ছে সাতক্ষীরা পৌরসভা সহ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কয়েক লক্ষ মানুষের। বছরের ছয় মাস জলবদ্ধতার কারণে নিন্ম আয়ের মানুষের জনদুর্ভোগের শেষ নেই ।সাতক্ষীরা শহরসহ পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বর্ষা মৌসুমীর স্থায়ী জলবরতার রূপ নিয়েছে। কয়েক ঘন্টা ধরে বৃষ্টি হলে সাতক্ষীরা শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতক্ষীরা জজ কোর্টের সামনে পলাশপুর এলাকায় রাস্তা ও নব-জীবন ইনস্টিটিউট এর রাস্তায় হাঁটু সমান পানি জমে থাকে। সাতক্ষীরা শহরের দীর্ঘদিনের পুরাতন পানি নিষ্কাশনের ড্রেন দিয়ে এখন ভালোভাবে পানি নিষ্কাশন না হওয়াই জলবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। পানি বন্দি মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। উপযুক্ত ড্রেন কালভার্ট না থাকার কারণে জলবদ্ধতার একমাত্র কারণ।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ২০ গ্রাম জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। গত ১ লা জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রায় ৫ টি ওয়ার্ড জলবদ্ধতা শিকার হয়েছে। পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে দক্ষিণ কাটিয়া মেটো পাড়া, লস্কর পাড়া, ঝুটি তলা এলাকায় জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।এছাড়াও পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বদ্দিপুর কলোনি, পুরাতন সাতক্ষীরা ঘুটিরডাঙ্গী সহ নিন্ম-অঞ্চলের পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রথখোলা, সরকারি কলেজ এলাকা, ছাকার মোড় এলাকায় রাস্তা পানির নিচে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পলাশপোল জজকোর্টের পাশে মধুমল্লারডাঙ্গী , কামালনগর বউবাজার এলাকার রাস্তার উপরে পানি। গত ৭-৮ বছর যাবত বেতনা নদীর তীরে অবস্থিত এই সব এলাকায় জলবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় হাজার হাজার মানুষকে। প্রতিবছর জুলাই মাস আসতে না আসতেই সামান্য বৃষ্টিতেই সাতক্ষীরার বেতনা নদীর তীরে অবস্থিত প্রতিটি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায় । সেইসাথে রাস্তাঘাট স্কুল কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাড়ি ঘর সহ সব ধরনের ভৌত অবকাঠামো পানিতে ডুবে যাচ্ছে ।এবং ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। সাতক্ষীরা পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও অব্যবস্থাপনার কারণে পৌরসভার পানি ইউনিয়নের খাল দিয়ে নদীতে পানি নিষ্কাশিত হতে না পারায় জলবদ্ধ হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ার কারণে নদীতে লোকালয়ের পানি প্রবেশ করতে না পারায় এবং জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

জলবদ্ধতার কারণে ফসলের ক্ষেত, শত শত বিঘা মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে জলাবদ্ধ থাকায় এসব এলাকার বিলগুলো আমন ধান চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে এলাকার কৃষকরা কৃষি বিমুখ হয়ে কাজের সন্তানের ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নে বিগত ৬-৭ বছর ধরে ভারী বর্ষণে প্রতিবছর ৬ মাস ধরে উপজেলার ধুলিহর সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থায়ী জলবদ্ধতা থাকে। জলবদ্ধতা নিরশনে বেতনা নদীর বিকল্প নেই । অপরিকল্পিত মাছের ঘের আর পাওবোর অপরিকল্পিত স্লুইস গেট সর্বনাশ ডেকে এনেছে এ অঞ্চলে । বেদনা নদীর নাব্যতা হারানোর কারণে জলবদ্ধতা সৃষ্টির কারণ উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় বেদনা নদী পূর্ণ খননের কাজ শুরু হলেও চার বছর ধরে এখনো নদী খননের কাজ শেষ হয়নি। সে কারণে চলতি বছরেও বেতনা নদীর দিয়ে পানি নিষ্কাশন হবে না বলে অনিশ্চয়তায় আছে বলে ধারণা স্থানীয় জনগণের। গত ১ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত ভারী বর্ষণে বিগত বছরের মতো বেতনা নদীর তীরবর্তী ২৫-৩০ গ্রামে ফসলি জমি, মৎস্য ঘের পুকুর পানিতে ডুবে গেছে।

জলাবদ্ধতায় নাকাল বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী মধ্যবর্তী ৬ ইউনিয়নের মানুষ। ইউনিয়নগুলো হল বল্লী ঝাউডাঙ্গা, লাবসা, ব্রহ্মরাজপুর ,ধুলিহর, ও ফিংড়ী। এছাড়াও সাতক্ষীরা পৌরসভার পূর্বাংশের মানুষের জলাবদ্ধতায় নাকানি- চুবানি খাচ্ছেন। জলবদ্ধতা এখন এ অঞ্চলের মানুষের অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবদ্ধতা নিরসনে সরকার টাকা বারাদ্ধ দেয়, সেই টাকা যায় জলে। কাজের কাজ কিছুই হয় না। বেতনা নদী খননের নামে খাল খনন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেই খালে পানি সরে না। আবার খননের নামে কাড়ি কাড়ি টাকা বরাদ্দ হয়। এভাবেই জলাবদ্ধতার কারণ সম্পর্কে বর্ণনা করছিলেন সাতক্ষীরার নাগরিক কমিটির নেতা আলী নূর খাঁন বাবলু ।

তিনি বলেন প্রতি বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় সাতক্ষীরা সদরের কয়েকটি ইউনিয়নের ২৫-৩০ টি গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। জলবদ্ধতা কবলিত বিলগুলো হলো-বুড়ামারা, পালিচাঁদ, ঢেপুরবিল, চেলারবিল, হাতিশালার (হাচ্চালার) বিল, কচুয়ার বিল, হাজিখালি বিল, ডাইয়ের বিল, রামচন্দ্রপুরবিল ও ঘুড্ডিরবিল। এসব বিলে বছরের পর বছর বর্ষাকালে পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। অপরিকল্পিতভাবে বেড়িবাঁধ দিয়ে করা হয়েছে মাছের ঘের। স্থানীয়রা বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও বৃষ্টি হলেই সাতক্ষীরা সদরের কয়েকটি ইউনিয়নের ২৫-৩০টি গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টির কারণে সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা এলাকা হতে শুরু করে ধুলিহর, ব্রহ্মরাজপুর ও ফিংড়ী ইউনিয়নের ২৫-৩০টি গ্রামে স্থায়ী জলবদ্ধতায় ধুলিহর ইউনিয়নের দামারপোতা, বাগডাঙ্গা, বড়দল, জিয়ালা, গোবিন্দপুর, নাথপাড়া, কাজিরবাসা, তালতলা, বালুইগাছা, ধুলিহর সানাপাড়া, জাহানাবাজ, কোমরপুর, দরবাস্তিয়া, ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের অধিকাংশ জায়গায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিয়ে স্থায়ী জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

এছাড়াও ফিংড়ী ইউনিয়নের ফয়জুল্যাপুর, বালিথা, শিমুল বাড়ীয়া, এল্লারচর, ফিংড়ী, গাভা, ব্যাংদহ, জোড়দিয়া, গোবরদাড়ী, সুলতানপুর, মজলিসপুর, হাবাসপুর ও কুলতিয়া সহ লাবসা ইউনিয়নের তালতলা, মাগুরা,গোবিনাথপুর,খেজুরডাঙ্গী,নলকুড়া, এছাড়াও ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের মাছখোলা,শাল্যে, নুনগোলা, রামচন্দ্রপুর, চেলারডাঙ্গা, বড়খামার, মেল্লেকপাড়া, উমরাপাড়া বাঁধন ডাঙ্গাসহ সাতক্ষীরা পৌরসভার ৫টা গ্রাম স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়।

গত কয়েক বছর যাবত বেতনা নদীর তীরে অবস্থিত এই এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ, গবাদিপশুসহ বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণী।

প্রতি বছর জুলাই মাস আসতে না আসতেই সামান্য বৃষ্টি হলেই সাতক্ষীরার বেতনা পাড়ে অবস্থিত এসব গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়।এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানিবন্দি এসব মানুষের মধ্যে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন পানি বাহিত রোগ বালাই। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয় ।

গত কয়েকদিন আগের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট ভয়াবহ স্থায়ী জলবদ্ধতার কারনে এসব এলাকার শতশত একর জমিতে আমন ধানের বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে। সেকারনে আমন ধান চাষ করা নিয়ে চিন্তিত চাষিরা। এছাড়াও কৃষকরা কিছু জমিতে আউশ ধান চাষ করলেও ভারী বর্ষনের ফলে ধানগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে একাধিক কৃষকরা জানিয়েছেন।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কারণে পৌরসভার পানি ধুলিহর ও ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেতনা নদীতে পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় এসব এলাকার মানুষকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা শিকার হতে হয় বলে জানান ধুলিহর ইউনিয়নের মেম্বার মিনহাজ মোর্শেদ। এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বেতনা নদী খননের পাশাপাশি এসব এলাকার খাল খননের দাবীতে জেলা পানি নিষ্কাসন ও বাস্তবায়ন কমিটি, জেলা নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন গত এক যুগ ধরে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। স্থানীয় দৈনিক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রতি বছর জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও মানুষের দূর্বিসহ ভোগান্তির বর্ণনা দিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করার ফলে সরকার ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেতনা নদীর খনন কাজ গত৩ বছর ধরে শুরু করলেও তা কবে নাগাদ শেষ হবে তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ধীর গতিতে চলছে নদী খননের কাজ ফলে জলাবদ্ধতার শিকার এসব এলাকার মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট সব পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনদুর্ভোগে অসহনীয় হয়ে পড়েছে বেতনা পাড়ের মানুষ। আবার অনেকেই বেতনা নদীর খনন কাজ দেখে আশার আলো না দেখে হতাশ হয়ে সাতক্ষীরা প্রাণ সায়ের খালের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন। তবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিগত কয়েক বছর ধরে এসব এলাকার খালে নেটপাটা অপসারণ করতে চিরুনি অভিযান চালিয়ে আসছেন। তারপরও কিছু অসাধু লোকজন নেটপাটা দিয়ে মাছ ধরে আসছে বলে একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামের সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন বাবু জানান-গত কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতায় আমার বসতবাড়ি সহ এলাকার অধিকাংশ বসতঘরের মধ্যে পানি ওঠায় আমরা অসহনীয় দূর্ভোগের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছি। অথচ শুধু পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে প্রতি বছর এসব এলাকার অসংখ্য রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে শতশত মাছের ঘেরসহ পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ায় অসংখ্য মৎস্যচাষীর মাথায় হাত উঠে যায়।

এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে প্রতি বছর কৃষকরা আমন ধান চাষ করতে না পারায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক সোহরাব হোসেন।

এছাড়া পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে রাস্তা ঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় এলাকায় জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

এলাকার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

জলাবদ্ধতার কারণে এলাকায় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় ধুলিহর গ্রামের গবাদিপশু চাষী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান-হালকা বর্ষণে বিচালী ও খড়গাদার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এসব গবাদিপশু নিয়ে চাষীরা বিপাকে পড়েছে।

প্রতিবছর জলাবদ্ধতার কারণে ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামের পালপাড়ায় মৃৎশিল্প হাড়ি, পাতিল, কলস, টালিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করার মাটি এবং কারখানা পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প আজ বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রমউপক্রম হয়ে পড়ছে।সচেতন এলাকাবাসী এলাকার স্থায়ী জলবদ্ধতা নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *