কালিগঞ্জে শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানিসহ নানান ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার: কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান বাবলুর নানান ষড়যন্ত্রের শিকার তারই বিদ্যালয়ের এক সহকারি শিক্ষিকা আফরোজা সুলতানা। প্রতিনিয়ত ঐ প্রধান শিক্ষকের যৌন হয়রানি ও মিথ্যা অভিযোগ, ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রেহাই পেতে গত ৭ জুলাই ভুক্তভোগী শিক্ষিকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। ঘটনাটি সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ৪৬ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষিকার লিখিত অভিযোগ সূত্রে এবং ভুক্তভোগীর পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সহকারি প্রধান শিক্ষক জাফরুল্লাহ সরদার সাংবাদিকদের জানান আমার মেয়ে বিগত ২০১১ সালে সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করে গত ৭/৯/২০১১ ইং তারিখে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করে। সেখানে দু,’বছর চাকরি করার পর গত ২৩/২/২০১৩ সালে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ৬৭ নং কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসে। সেখান থেকে নিয়মিত বদলি হিসাবে ২০২০ সালে ৪৬ নং দক্ষিণ শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে অদ্যবধি চাকরি করে আসিতেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা জানান আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলার বাজার গ্রাম রহিমপুর গ্রামের মৃত রহিম বক্স পাড়ের পুত্র ওয়াহিদুজ্জামান বাবলু আমার যোগদানের আগে ভদ্রখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সেখানে সে ঐ বিদ্যালয়ে নানান দুর্নীতি, অপকর্ম ,অসামাজিক কার্যকলাপ ছাড়াও ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় ঝাঁটা পেটা সহ অভিভাবক এলাকাবাসী গণ ধোলাই দিয়ে ওই স্কুল থেকে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাড়িয়ে দেয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আসলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তাকে দক্ষিণ শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্র তার যোগদানের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ দক্ষিণ শ্রীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ,অভিভাবক এবং এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান বাবলুর বিরুদ্ধে লিফলেট সহ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে। পরবর্তীতে তার মান সম্মান রক্ষার্থে অন্যান্য শিক্ষক দের আমি অনুরোধ করে ঐ বিদ্যালয়ে যোগদানের সহায়তা করি। অতঃপর বিদ্যালয়ে যোগদান করার কিছুদিন পর হতে প্রায় সে আমাকে কু-প্রস্তাব এবং ১০/১৫ দিন ছুটি নিয়ে তার সঙ্গে প্রমোদ ভ্রমণে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে আমি রাজি না হলে সহপাঠী অন্যান্য শিক্ষকদের দিয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে মোবাইলে উত্যক্ত করা ও রাজি করানোর চেষ্টা করছিল। এতেও কাজ না হওয়ায় সে আমার আমার বিয়ের বিভিন্ন সম্বন্ধ আসলে তাদের কাছে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে অদ্যবধি বিবাহ ভেঙে দিয়ে আসছে। এতেও তার কথামতো রাজি না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রভাব কাটিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের স্বাক্ষরে বাধ্য করে গত ২৯/ ৪ /২০২৪ ইং তারিখে আমার বিরুদ্ধে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। এর প্রেক্ষিতে আমি গত ৫/৬/২০২৪ ৩ তারিখে প্রতিকার চেয়ে খুলনা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট আবেদন করি কিন্তু আমি সেখানে কোন প্রতিকার পাইনি। এতে ক্ষ্যান্ত না হয়ে গত ৭/১০/২০২৪ ইং তারিখে প্রধান শিক্ষক পুনরায় আবারও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আমার বিরুদ্ধে আরো একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্টের পরে একটি দলীয় পরিচয়ে প্রভাব খাটি এক তরফা ভাবে আমার বিরুদ্ধে সমস্ত আনা সব অভিযোগের মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলেও আমারটা তদন্ত ছাড়াই মিথ্যা বলে জানায়। উপায়ান্তর না পেয়ে আমাকে যৌন হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করতে আমার পিতা গত ৭/২ /২৫ ইং তারিখে কালিগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জের নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান বাবলু জেল ,জরিমানার ভয়ে নিজেকে রক্ষা করতে সহপাঠী শিক্ষক সহ আমার পিতার নিকট ক্ষমা চেয়ে জীবনে এ কাজ করবে না প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ১০/২/২৫ ইং তারিখে থানা থেকে অভিযোগটি লিখিত ভাবে আমার বাবাকে দিয়ে প্রত্যাহার করিয়ে নেয়। এরপর আবারো নতুন ভাবে আমাকে হয়রানি সহ উপজেলা সহকারী এক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিয়ে আমাকে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করে ঐ সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কে এম মোস্তাফিজকে দিয়ে আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মেসেঞ্জারে অশ্লীল ছবি দিয়ে হয়রানি করতে থাকে।
এছাড়াও নিজেরা শ্রেণীকক্ষে ছাত্রদের ক্লাস না নিয়ে মোবাইল নিয়ে খোশ গল্পে মত্ত থাকলেও আমার বিরুদ্ধে যত নিষেধাজ্ঞা চলতে থাকে। কারণ শুধু একটাই আমি প্রধান শিক্ষকের কথামতো চলতে না পারা। বর্তমান আমি কিভাবে চাকরি করি এবং কিভাবে এই বিদ্যালয়ে থাকি প্রধান শিক্ষক এর শেষ না দেখে চাকরি থেকে বিদায় নেবে বলে আমাকে প্রতিনিয়ত আমাকে হুমকি দিয়ে চলেছে। আমি উপায়ান্তর না পেয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছি। এর মধ্যে আমাকে শাস্তি মূলক ৬ মাসের জন্য মৌতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে পাঠায়। সেখানে আমি ৬ মাস অতিবাহিত করে পুনরায় আবার নিজ বিদ্যালয়ে চাকরি করে আসিতেছি।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান বাবলুর নিকট ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয় অস্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান সহকারী শিক্ষক আফরোজা সুলতানা পুরোপুরি মানসিক ভাবে সুস্থ না। কখন কি বলে সে নিজেও জানে না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তার অভিযোগ মিথ্যা ,ভিত্তিহীন উপজেলার শিক্ষক সংগঠনের গ্রুপিংয়ের সুযোগ নিয়ে একটি পক্ষ তাকে ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুৎসা রটিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে সমাজে হেও প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছ।