কালিগঞ্জের আলোকিত নরসুন্দর পরিতোষের হারিকেনের আলোয় সেবা
মাসুদ পারভেজ কালিগঞ্জ: আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে গেছে চারপাশ। সেলুনে এখন এসি, ডিজিটাল ট্রিমার, দামি কাচি। কিন্তু সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগরের এক বৃদ্ধ নরসুন্দর আছেন, যিনি এখনো পুরনো হারিকেন হাতে, হৃদয়ে মানবতা নিয়ে ছুটে চলেন মানুষের সেবা দিতে।
তিনি পরিতোষ বাবু। বয়স প্রায় ৭৫, কিন্তু শরীরে নেই ক্লান্তি-মন যেন এক তরুণের মতো সতেজ। জীবনের দীর্ঘ ৬০টি বছর ধরে করে যাচ্ছেন নরসুন্দরের কাজ। তবে সেটা শুধু চুল-দাড়ি কাটার পেশা নয়, বরং মানবসেবার এক জীবন্ত সাধনা।
প্রতিদিন সকালেই শুরু হয় তাঁর পথচলা। গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে চুল-দাড়ি কাটেন, কেউ অসুস্থ হলে বাসায় গিয়ে সেবা দেন। তারপর বাজারের ছোট্ট একটি দোকানে বসেন দুপুর অবধি। বিকেলে আবার ছুটে যান হাটে-বাজারে।
সন্ধ্যা নামলেই হাতে জ্বলে ওঠে হারিকেন। অন্য দোকানপাট বন্ধ হলেও তিনি তখনো কাজ করেন। কেউ ডাকলেই যান, কারো দরকার হলে বিনা পয়সায়ও সেবা দেন।
পরিতোষ বাবুর নেয়া পারিশ্রমিক যেন সময় থেমে থাকা এক মূল্যে-মাত্র ৫ থেকে ৩০ টাকা। আর কেউ অসহায় হলে তা-ও নেন না।
লোভ নেই, বিলাস নেই। তাঁর চোখে একটাই আনন্দ-মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তিনি বলেন, “সেবা দিয়েই আমি শান্তি পাই। টাকা বড় নয়, মানুষের প্রয়োজনটাই বড়।
এমন মানুষ সমাজে দুর্লভ। পরিতোষ বাবু যেন হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধ, নিষ্ঠা ও সহানুভূতির এক নিরব প্রতিনিধি।
হারিকেনের আলোয় যিনি শুধু চুল কাটেন না, ছড়িয়ে দেন আলোর আভা—একজন সত্যিকারের আলোকিত নরসুন্দর।