অনলাইনঅপরাধআইন আদালতজাতীয়সারাবাংলা

রোড ক্র্যাশ ইনভেস্টিগেশন নিয়ে পুলিশের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: রোড ক্র্যাশ তদন্তের দক্ষতা বাড়াতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপ (জিআরএসপি)। দু’দিনের এ প্রশিক্ষণে রোড ক্র্যাশের ঘটনা তদন্তে (ইনভেস্টিগেশনে) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কলাকৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। ঢাকা শহরের সড়কসমূহে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষায় কর্মরত ঢাকার পুলিশ কর্মকর্তাগণ রোড ক্র্যাশের ঘটনা তদন্তে (ইনভেস্টিগেশনে) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কলাকৌশল দেশীয় প্রেক্ষাপটে কাজে লাগানোসহ বৈশ্বিক সড়ক নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন।

কর্মশালার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ডিএমপি’র পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, এনডিসি। তিনি বলেন, সড়কে যানবাহনের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে অফিস খোলার দিনগুলোতে সড়কে রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহারের অনুরোধ করেছি। কারণ এ ধরণের কর্মসূচি ঢাকা শহরের সকল সড়ক ব্যবহারকারীর জন্য দুর্ভোগ নিয়ে আসে।

তিনি বলেন, এগুলো করতে গিয়ে রোড ক্র্যাশের ঘটনাগুলো তদন্তে পুলিশ পর্যাপ্ত সময় দিতে পারে না। কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে রোড ক্র্যাশের তদন্ত করে এর কারণসমূহ সঠিকভাবে চিহ্নিত করা গেলে তা ভবিষ্যতে সড়কে মৃত্যু কমিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সেজন্য কোনো রোড ক্র্যাশ ঘটলে তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তদন্ত করতে পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাফিক বিভাগ সড়কের দায়িত্বে থাকে, তবে ক্র্যাশের ঘটনা তদন্ত করে ক্রাইম বিভাগ। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা তদন্তে ট্রাফিক পুলিশকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে।’

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, রোড ক্র্যাশ প্রতিরোধে সড়ক ব্যবহারীদের ট্রাফিক নিয়মকানুন মেনে চলা প্রয়োজন। বিশেষ করে নির্ধারিত গতিসীমা না মানা, হঠাৎ লেন পরিবর্তন ও যত্রতত্র রাস্তা পাড়াপাড় ক্র্যাশের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ঢাকা শহরে অধিকাংশ রোড ক্র্যাশ মধ্যরাত থেকে সকালের মাঝে ঘটে যখন সড়ক তুলনামূলক ফাঁকা থাকে। রোড ক্র্যাশ প্রতিরোধ করতে তিনি পুলিশ সদস্যদের কঠোরভাবে সড়কে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণসহ বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) এর ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সুপারিন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মাহবুব আলম এ প্রশিক্ষণে অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। এ সময় জিআরএপি’র এশিয়া-প্যাসিফিক ম্যানেজার ব্র্যাট হারম্যান ও সিনিয়র রোড পুলিশিং এডভাইজর পিটার জোনস্, ডিএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

বিআইজিআরএস কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোড ক্র্যাশ প্রতিরোধে কার্যরত আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক জিআরএসপি রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ১৬ ও ১৭ জুন দুদিনব্যাপী কর্মশালাটি আয়োজন করে। এতে ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিটের ৬০ জন পুলিশ কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।

জিআরএসপি’র এশিয়া-প্যাসিফিক ম্যানেজার ব্র্যাট হারম্যান ও সিনিয়র রোড পুলিশিং এডভাইজর পিটার জোনস্ কর্মশালাটি পরিচালনা করেন। এই প্রশিক্ষণে, তারা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করে রোড ক্র্যাশ তদন্তে করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন। ক্র্যাশের ঘটনা তদন্তের ক্ষেত্রে দ্রুত ঘটনাস্থালে হাজির হওয়া, আলামত সংগ্রহ, ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ, চিত্র ধারণ, ক্ষতিগ্রস্থ যানবাহন ও টায়ারের নিশানা পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন। সেই সাথে তারা রোড ক্র্যাশ তদন্তে বৈশ্বিক অনুশীলন এবং হ্যাডন ম্যাট্রিক্স – ক্র্যাশের ঘটনা তদন্তের জন্য বহুল ব্যবহৃত একটি ম্যাট্রিক্স সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা করেন। কর্মশালায় আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় উভয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ক্র্যাশের তদন্ত কৌশল আলোচিত হয়, যার মূল লক্ষ্য হল সড়কে মৃত্যু ও গুরুতর আহত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করা।

কর্মশালায় ট্রাফিক সার্জেন্ট, উপ-পরিদর্শক, পুলিশ পরিদর্শক, সহকারী পুলিশ কমিশনার ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারগণ উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালা শেষে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সারওয়ার, বিপিএম-সেবা অংশগ্রহণকারীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন এনফোর্সমেন্ট কোঅর্ডিনেটর জনাব গোলাম হোসেন, ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেটর রেজাউর রহমান, সার্ভিলেন্স কোঅর্ডিনেটর ডা. তানভীর ইবনে আলী, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর টেকনিক্যাল এডভাইজর আমিনুল ইসলাম সুজন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *