অনলাইনঅপরাধআইন আদালতসদরসাতক্ষীরা জেলা

ভোমরার মাদক ব্যবসায়ী শামীম মাদকসহ আটক, মুক্তির দাবীতে মাদক কারবারিদের মানববন্ধন

গাজী হাবিব: সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা স্থলবন্দর এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শামীম হোসেন (৩৩)কে রবিবার রাতে বিজিবি গ্রেপ্তার করলে তার মুক্তির দাবীতে আজ সোমবার (৯ জুন) সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে বেশ কয়েকজন মানুষ। অনেকে বলছেন যারা এ মানববন্ধন করেছে তারা সবাই শামীমের মাদক ব্যবসায়ের পার্টনার, কেউ ক্রেতা, কেউ বিক্রেতা।

জানা যায়, সাতক্ষীরায় ভোমরার নবাতকাটি এলাকায় বিজিবির অভিযানে ২৫ বোতল কোরেক্স সিরাপসহ শামীম হোসেনকে আটক করা হয়েছে। সে সাতক্ষীরা সদর থানার শাখরা কোমরপুরের কুলাটি গ্রামের মো. আরশাদ আলী সরদারের ছেলে। রবিবার (৮ জুন ২০২৫) রাত সোয়া ৯ টার সময় উক্ত মাদক উদ্ধার করা হয়।

সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আশরাফুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভোমরা বিওপির দায়িত্বাধীন নবাতকাঠি-বটতলা এলাকা হতে মাদক ব্যবসায়ী মাদকসহ আগমন করবে, এমন খবর আসে বিজিবির কাছে। উক্ত সংবাদ প্রাপ্তির পর ভোমরা বিওপি’র নায়েব সুবেদার মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর নেতৃত্বে একটি বিশেষ আভিযানিক দল মেইন পিলার-৩ হতে আনুমানিক ০২ কিঃমিঃ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নবাতকাঠি-বটতলা নামক স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে।

এ সময় উক্ত স্থানে মাদক বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে আগমনকালে মাদক ব্যবসায়ী মোঃ শামীম হোসেনকে নিজ মোটরসাইকেলসহ আটক করে। পরবর্তীতে তার হাতে থাকা ব্যাগ তল্লাশী করে ব্যাগের ভিতর হতে ২৫ বোতল ভারতীয় নেশাজাতীয় কোরেক্স সিরাপ, বাংলাদেশী নগদ-টাকা, ভারতীয় রুপি এবং ০২টি মোবাইল পাওয়া যায়। আটক ব্যক্তি সম্পর্কে অনুসন্ধান ও তার স্থায়ী ঠিকানায় যাচাইয়ান্তে তার পরিচয় নিশ্চিত ও বিশিষ্ট মাদক ব্যবসায়ী বলে জানা যায়।

আটককৃত ব্যক্তিকে তল্লাশী করে ২৫ বোতল ভারতীয় নেশাজাতীয় কোরেক্স সিরাপসহ আনুমানিক প্রায় ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের মালামাল জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে আটককৃত মাদক ব্যবসায়ীকে মাদক ও জব্দকৃত মালামালসহ পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সাতক্ষীরা সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে; যার মামলা নম্বর-১৬ তারিখ ০৯ জুন ২০২৫।

তবে, চলতি বছরের গত ১৪ মার্চ সাতক্ষীরার সকল স্থানীয় পত্রিকাসহ জাতীয় দৈনিকে ভোমরার এই মাদক সিন্ডিকেট নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন আর গা ঢাকা দেয় এসব মাদক ব্যবসায়ীরা। তৎকালীন ঈদুল ফিতরের সময় এসব ব্যবসায়ীরা মাদকের ব্যবসায় সুবিধা করতে না পারলেও গেল ঈদুল আযহায় তারা বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। রমরমা ভাবে চালায় মাদক ব্যবসা। এই ব্যবসায় বাধ সাধে বিজিবি। ২৫ বোতল ভারতীয় কোরেক্স সিরাপসহ গ্রেপ্তার করে শামীমকে।

এদিকে, শামীম হোসেনকে মৎস্য ব্যবসায়ী দাবী করে তাকে অন্যায়ভাবে ভারতীয় কোরেক্স সিরাপ দিয়ে আটক করা হয়েছে অভিযোগ এনে মুক্তির দাবীতে মানববন্ধন করেছে তার ব্যবসায়ীক পার্টনার, মাদক ক্রেতা ও মাদক কারবারির সাথে জড়িতরা। সোমবার (৯ জুন) সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন করে তারা।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা সীমান্তের নবাতকাটি এলাকার বাসিন্দা অমল মন্ডলের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, ভুক্তভোগী শামিমের স্থী তানিয়া খাতুন আঁখি, সেলিনা খাতুন, আফরোজা পারভীন, রাসেল হোসাইন, মিনার হোসেন, আয়শা খাতুন, খাদিজা সুলতানা, আবুল কাশেম, জাকির হোসেন, রকি ইসলাম, আনন্দ সরকার, হোসেন আলী, মহাদেব দাস, নুর জাহান প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রোববার (৮ জুন) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ব্যবসায়ী শামিম হোসেনসহ সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা সীমান্তে ডিউটিরত বিজিবি সদস্যরা নবাতকাটি এলাকায় অমলের চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলো। এমন সময় বিজিবির স্পেশাল টিমের সদস্য ইমরান তাকে একপাশে ডেকে নিয়ে যায় কথা বলার জন্য।

এদিকে, গত ১৪ মার্চ ‘সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রকাশ্যে ৩০ চক্রের মাদক বিক্রি ও সেবন’ শিরোনামে সকল স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়- সাতক্ষীরার সীমান্ত জুড়ে যেন মাদক চোরাকারবারীদের মহোৎসব চলছে। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় গড়ে ওঠা একাধিক সংঘবদ্ধ শক্তিশালী মাদক চোরাচালান চক্র। সবচেয়ে বেশি মাদক আসছে সাতক্ষীরা সদরের ভোমরার হাড়দ্দহা, লক্ষ্মীদাড়ি ২ নং, ঘোষপাড়া ও ঘোনা গাজীপুর সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে। এসব এলাকা দিয়ে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই শুরু হয় মাদক পারাপারের তোড়জোড়। ভোমরা সীমান্তে চিহ্নিত মাদক চোরাচালান চক্রের সক্রিয় সদস্যদের মধ্যে জেলার শীর্ষ মাদক চোরাকারবারি ভোমরা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের আরশাদ আলী ওরফে ভদু। ভদু’র ছেলে, দুই মেয়ে ও জামাই এরা সবাই পেশাদার মাদক চোরাকারবারি। তাছাড়া, ভদু একাধিক মাদক মায়লায় অভিযুক্ত হয়ে পুলিশের ভয়ে ৮ বছর ভারতে পালিয়ে থাকার পর গত তিন বছর আগে ফিরে আসে সাতক্ষীরায়। ভদু ও তার ছেলে শামিম, মেয়ে লিপি খাতুন, পাপিয়া খাতুন, জামাই হালিম মাস্টার এদের সবারই পৃথক মাদকের ব্যবসা রয়েছে।

এদের মধ্যে হালিম মাস্টার, তার স্ত্রী পাপিয়া খাতুন ভোমরা টাওয়ার মোড়ে বসবাস করলেও পুরো সীমান্ত জুড়ে রয়েছে তাদের বিস্তৃত মাদক কারবারি নেটওয়ার্ক। ভদুর মেয়ে পাপিয়া খাতুন নিজ বাড়িতে বসেই মাদকের পাইকারি ও খুচরা ব্যাবসা করে। হালিম মাস্টার নিজে টাওয়ার মোড়ে বসে দু’জন সহকারী দিয়ে মাদকের রমরমা ব্যবসা পরিচালনা করে।

এছাড়া ভদু’র ছেলে শামিম সীমান্ত এলাকায় ফেনন্সিডিলের ডিলার। ভোমরা এলাকার সবচেয়ে বড় ব্যাবসায়ী শামিম। ভোমরা গয়েশপুর এলাকায় নিজ বিলাসবহুল বাড়িতে বসে কয়েক জন সহযোগী রেখে খুচরা ও পাইকারি ফেনন্সিডিল ও সব ধরনের মাদকের চোরাকারবার করে। শামিম পুলিশ, বিজিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু সদস্যসের সাথে সুসম্পর্ক রেখে সাতক্ষীরা জেলাসহ ঢাকা, খুলনা, যশোর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদক চোরাচালান করে।

শামিম মামলা হামলা এড়াতে আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে মাদক ব্যবসা চালিয়েছে। তবে এখনও থেমে নেই তার সেই ব্যবসা। অর্থের প্রভাব খাটিয়ে মাদক কারবার চালাচ্ছে দেদারছে। এছাড়া ভদুর জামাই হালিম মাস্টারের নামে ৮টি মাদকের মামলা রয়েছে ও স্ত্রী পাপিয়ার নামেও মামলা রয়েছে। মাদকের রমরমা ব্যবসা করে তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। কিনেছে বিঘা বিঘা জমি। গড়েছে টাইলস বাধানো আলিশান বাড়ি।

অথচ এই শামীমের পক্ষে তার মুক্তির দাবীতে আজ মানববন্ধন করেছে তার স্বজনসহ তার মাদক ব্যবসায়ের পার্টনাররা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *