কৃষিশ্যামনগরসাতক্ষীরা জেলা

বাঁধ রক্ষায় চর বনায়ন ও বনজীবী নারীদের কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ করছে লিডার্স 

মোঃ ইসমাইল হোসেন, শ্যামনগর: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্যামনগরের উপকূলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা কে মোকাবেলা করে। উপকূলের টেকসই উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বেসরকারি সংস্থা লিডার্স।

লিডার্স ১৯৯৬ সাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ও অভিযোজন কৌশল উদ্ভাবন, যুব সমাজকে সামাজিক কাজে সম্পৃক্তকরণ, দরিদ্র পরিবারে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, বাঘ বিধবাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, শ্রমিকদের অধিকার প্রতিকষ্ঠাসহ উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পানি সংক্রান্ত কাজের জন্য লিডার্স ২০১৫ সালে পৃথিবীর মধ্যে তৃতীয় সংগঠন হিসাবে আন্তর্জাতিক পুরস্কার ওয়াটার শোকেজ প্রাপ্ত, ২০২০ সালে দুর্যোগ যোদ্ধা হিসাবে স্টান্ডার্ড চাটার্ড চ্যানেল আই এ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জায়েদ সাসটেইন্যাবিলিটি প্রাইজ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।

বর্তমান লিডার্সের বাস্তবায়নে মেরিডিয়ান ইনস্টিটিউট ও ইউ ল্যাবের আর্থিক সহযোগিতায় সুন্দরবনে মৎস্যজীবীদের জন্য টেকসই মৎস্যসম্পদ এবং জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের লক্ষ্যে ব্লু কার্বন ও প্রতিবেশী সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায়।

শ্যামনগর উপজেলার ২ টা ইউনিয়ন মুন্সিগঞ্জ ও বুড়িগোয়ালিনীর সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল নারীদেরকে নিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। পাশাপাশি উপকূল রক্ষার বাঁধ রক্ষায় চর বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের নীলডুমুরে ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সিংহরতলী গ্রামে মোট ৫০ জন বনজীবী নারীকে আর্থিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেও। যার মধ্যে রয়েছে মুদি দোকান, দর্জি ও সিট কাপড়ের দোকান, মুরগির ফার্ম, সবজি চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন।

এছাড়া উপকূলের জরাজীর্ণ বাঁধ সুরক্ষায় সিংহরতলি গ্রামের ভাঙ্গন কবলিত বাঁধের চরে সুন্দরী,গেওয়া, গরান, কেওড়া, বাইন, গোলপাত ৬ প্রকার চারা দিয়ে ১.৫ একর জমিতে বনায়ন তৈরি করা।

উপকার ভোগের মধ্যে নীলডুমুর গ্রামের জাহানারা বেগম জানান, আমি নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরতাম লিডার্স থেকে প্রশিক্ষণ মাধ্যমে সহযোগিতা পেয়ে সবজি বাগান করতেছি। এখান থেকে সবজি উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতে পারবে।

একই গ্রামের সালমা খাতুন বলেন, জীবিকা নির্বাহের জন্য সুন্দরবনের নদীতে মাছ কাকড়া ধরতাম। লিডার্স এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পেয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করে টাকা আয় করছি। এখন আমার সংসার ভালো চলে ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করাতে কষ্ট হয় না।

মুন্সিগঞ্জ সিংহরতলী গ্রামের পঞ্চী রানী মন্ডল বলেন, সুন্দরবনে নদীতে মাছ কাঁকড়া ধরা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ তারপরেও ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া ও মানুষ করার জন্য যেতে হয়। লিডার্স আমাকে দর্জি প্রশিক্ষণ ও সিট কাপড় দিয়ে সহযোগিতা করায় আমি আমার ছেলে মেয়েকে সুন্দরভাবে লেখাপড়া শিখাতে পারছি।

মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল বলেন, আমাদের বাড়ির সামনে বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। ভবিষ্যতে যাতে না ভাঙ্গে সেজন্য লিডার্স নদীর চরে বনায়ন করেছে যাতে বাঁধটি না ভাঙ্গে।

প্রকল্পের টিম লিডার রেখা খাতুন বলেন,জলবায়ু পরিবর্তননের ফলে ব্লু কার্বন  ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় ও নারী সংগঠনগুলোর দাবী আদায়ের সমক্ষমতা বৃদ্ধি করা। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে মাল্টি একক্টর প্লাট ফরমের ব্লু কার্বন সিষ্টেম এর ভূমিকা সম্পর্কে কার্বন মার্কেটের জন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি ww করতে ও করনীয় নির্ধারনে একশন রিসার্স করা।

ব্লু কার্বন ইকো সিষ্টেম ও কার্বন বাজারের অধিকার ধারধারকদের (কমিউনিটি) ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক মাপের মডিউল ও প্রটোকল তেরী করা। সুন্দরবন নির্ভরশীল কমিউনিটিরা আলোচনার মাধ্যমে ব্লু কার্বন বাজারে প্রবেশ করার দক্ষতা বৃদ্ধি করা। কার্বন সংরক্ষণ করা। উপযোগী বাস্তুতন্ত্রের অধিকার নিশ্চিত করা।

লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলের মানুষ প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি এ সকল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার। ইতিমধ্যে আমরা কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি যেখানে বনজীবী নারীদেরকে উন্নত মানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। উপকূলের মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বেড়িবাঁধ। এ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে লিডার্স ভাঙ্গন কবলিত বাঁধের সামনে চরবনায়ন শুরু করেছে। এছাড়া বনায়নের মাধ্যমে অক্সিজেন সংরক্ষণ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *