অপরাধআইন আদালতসদরসাতক্ষীরা জেলা

ধুলিহরে তুচ্ছ ঘটনায় ৫ কিশোরকে নির্যাতন: হামলা- পাল্টা হামলায় মামলা, গ্রেপ্তার-১

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৫ কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তিতে এই নির্যাতনকে কেন্দ্র করে হামলা- পাল্টা হামলার পর থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় নির্যাতনের শিকার হওয়া এক কিশোরকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

শনিবার (৩এপ্রিল) বেলা ১২ টার দিকে ওই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে বিকালে নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোরেরা হামলা-পাল্টা হামলা চালিয়ে নির্যাতনকারীদের একজনকে জখম করেছে।

স্থানীয় গ্রামবাসী সাথে কথা বলে জানা যায়, শনিবার দুপুরে ধুলিহর গ্রামের অহিদুল ইসলামের ছেলে শান্ত(১৮), আব্দুস সামাদের ছেলে আমিরুল (১৯), আব্দুল কাদেরের ছেলে কারিবুল্লাহ (১৯), আব্দুল মজিদের ছেলে আজমল হোসেন (১৮) ও জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী আকাশকে গাব চুরির অপরাধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখলে যে কেউ শিউরে উঠবে।

নির্যাতনকারীরা হলেন, একই এলাকার মৃত জাকের গাজীর ছেলে আব্দুল হান্নান (৫৭), সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার – প্রকাশনা সম্পাদক হাসান হাদী (৫৫) ও আব্দুল হান্নানের ছেলে ছেলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সুমন হোসেন (২৮)।

সরেজমিনে স্থানীয় গ্রামবাসী আরো জানান, গত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আব্দুল হান্নান ও হাসান হাদী দেড় বিঘা জমি ক্রয় করে মোট ১১ বিঘা খাস জমির সাড়ে ৫ বিঘা জমি পাকা পাঁচিল দিয়ে ঘিরে নেয়। এই পাঁচিলের গা ঘেঁষে একটি বড় গাব গাছ রয়েছে। উক্ত কিশোরেরা একজোট হয়ে ওই গাব গাছ থেকে গাব পাড়তে থাকে। ঘটনাটি আব্দুল হান্নান- হাসান হাদী জানতে পেরে তাদের ধরে তাদের পাঁচিলের মধ্যে বেঁধে বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। ক্ষমা চেয়েও রক্ষা পায়নি তারা। আব্দুল হান্নান সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে তাদের বিভিন্ন রকম ভয়- ভীতি ও দাপট দেখিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করে। দুপুরের পর ওই কিশোরদের তাদের গার্জিয়ানের কাছে দিয়ে দেয়। এ সময় ওই কিশোরদের শারীরিক অবস্থা দেখে এলাকাবাসী বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। যার ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে করে বিকালে ওই কিশোরেরা প্রতিশোধ নিতে আব্দুল হান্নান ও হাসান হাদিকে লক্ষ্য ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। ফলে ইটের আঘাতে হাসান হাদির মাথা ফেটে যায়।

এ ঘটনায় আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ শান্তকে গ্রেফতার করে।

গ্রামবাসীদের অনেকেই জানান, আব্দুল হান্নান সেনাবাহিনীর চাকরি করার সুবাদ গ্রামের মানুষকে মানুষ মনে করেন না। তাছাড়া তার ভাই হাসান হাদি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও তাদের ছেলে সুমন ছাত্রলীগের নেতা হওয়ায় ৫ আগস্ট এর আগে যা করেছে এখনো তারা তাই করছে। সামান্য গাব পড়ার ঘটনাকে তারা পরিকল্পিতভাবে চুরি দেখিয়ে উক্ত কিশোরদের যে নির্যাতন করেছে তা অমানবিক ও বর্বর। স্থানীয়ভাবে বসাবসি করে বিষয়টি মিটমাট করা যেত। কিন্তু তারা তা না করে আ’লীগের আমলের মত দাপট দেখিয়ে চলেছে। তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।

উক্ত কিশোরদের অভিভাবকরা জানান, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আমরা যাতে নায্য বিচার পাই সেজন্য পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অভিযুক্ত ও হামলার শিকার হাসান হাদি বলেন, তাদেরকে আমরা চড়-থাপ্পড় দিয়েছি বলে তারা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে আমাকে কুপিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *