অনলাইনঅপরাধআইন আদালতআশাশুনিসাতক্ষীরা জেলা

আশাশুনির ভূমিহীন পল্লীতে হামলা-অগ্নিসংযোগ, ৭ আসামি জেলহাজতে

স্টাফ রিপোর্টার: আশাশুনি উপজেলার রাধাবল্লভপুর মদনপাড়ার ভূমিহীন পল্লীতে হামলা, মারপিট, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত দ্রুত বিচার আইনের মামলায় সাত আসামীর জামিন আবেদন না’মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (৪ এপ্রিল) আসামিরা মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক মোঃ নজরুল ইসলাম তা না’মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জামিন না’মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন- আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণতেঁতুলিয়া গ্রামের মোস্তফা মোড়লের ছেলে আলাল মোড়ল ও শরিফুল মোড়ল, এই গ্রামের মোকছেদ মোড়লের ছেলে ইদ্রিস মোড়ল, আবু সাঈদ মোড়লের ছেলে ইব্রাহীম মোড়ল, সরবৎ মোড়লের ছেলে মামুন মোড়ল, রইচউদ্দিন মোড়লের ছেলে জনি মোড়ল ও আলফাজউদ্দিন মোড়লের ছেলে লুৎফর মোড়ল।

অভিযোগ, মামলা আপোষ করে নিতে রাজী না হওয়ায় রবিবার সকাল ১০ টার দিকে আশাশুনির এক বিএনপি নেতা সোহাগ পরিচয়ে আসামীদের পক্ষ নিয়ে এলাহী বক্স গাজীর ছেলে নির্যাতিত মিজানুর রহমানকে স্টাম্প ভেন্ডরদের বসার স্থলের সামনে জামার কলার ধরে ধাক্কা দিয়ে মামলা তুলে না নিলে মামলা দিয়ে বদলা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, মরিচ্চাপ নদীর আশাশুনির রাধাবল্লভপুর মদনপাড়ার চরভরাটি জমিতে দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ৩৫ টি ভূমিহীন পরিবার শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছে। কিছু জমি তারা ডিসিআর পেয়েছেন। আবার ১৫টি পরিবার মৎস্যজীবি সমিতি গঠণ করে চরের ৩০ বিঘা জমি পেতে পানি উন্নয়ন বোর্ডে ডিসিআরের আবেদন করেন। সম্প্রতি মরিচ্চাপ নদী খননের ফলে তাদের অনেক জমি বেড়িবাঁধে চলে যায়। এরপরও ব্রাহ্মণ তেঁতুলিয়া গ্রামের জহিরউদ্দিন মোড়ল, তার চাচাত ভাই আবু সাঈদ, রইচউদ্দিন মোড়ল, নজরুল সরদার, বড়খোকনসহ একটি চক্র ভূমিহীনদের ওই জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলো।

বাধ্য হয়ে আজিজুল গাজী বাদি হয়ে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদসলতে রইচউদ্দিনসহ নয় জনের নামে ১৪৫ ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলার নোটিশ পেয়ে আবু সাঈদ ও জহির উদনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গত ২৭ ফেব্রুয়ারী সকালে মদনপাড়ার ভূমিহীন পল্লীতে হামলা, ভাংচুর ও ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটপাট শেষে পেট্রোল দিয়ে ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আহত ২০ জন ভূমিহীনদের আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় জাকির হোসেন বাদি হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি জামিন না’মঞ্জুর হওয়া ১৬ জনসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৮০ জনের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারি অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ সংশোধনী ২০০৯ এর ৪/৫ ধারাসহ পেনাল কোর্ডের ১৫টি ধারা ও নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে আশাশুনি থানায় মামলা(জিআর-৩১/২৫) দায়ের করেন। আসামীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তেঁতুলিয়া ব্রীজের পাশে মানববন্ধন করেন নির্যাতিত ভূমিহীনরা।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. আসাদুজ্জামান দিলু বলেন, এজাহারনামীয় ৩২ জনের মধ্যে জামিন না’মঞ্জুর হওয়া সাতজন আসামী গত ৬ এপ্রিল মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি বিচারপতি মোঃ মাহাবুব উল ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ হামিদুর রহমানের বেঞ্চ থেকে চার সপ্তাহের অস্তবর্তীকালিন জামিন লাভ করেন। ক্রিমিনাল মিস কেস নং ২৪৬৮৭/২৫। আদালত তাদেরকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করতে বলেন। তারই অংশ হিসেবে রবিবার সাতজন আসামী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বিচারক মোঃ নজরুল ইসলাম তাদের জামিন আবেদন না’মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এই মিস কেসের একজন আসামী জাহাঙ্গীর আলম ইতিপূর্বেই নিম্ন আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

অ্যাড. আসাদুজ্জামান দিলু আরো জানান, বাকী ২৪ জনের মধ্যে ১৬ জন মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হলে বিচারক মোঃ নজরুল ইসলাম গত ২৩ এপ্রিল তাদের জামিন আবেদন না’মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ নেন। বাকী আটজন আসামী ৮ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে চান সপ্তাহের অন্তবর্তীকালিন জামিন নিয়ে (ক্রিমিনিাল মিস কেস নং-২৪৯৫২/২৫) আগামি ৬ মে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করার কথা রয়েছে। এ মামলায় ২৩ জন আসামী জেল হাজতে রয়েছেন।

আসামিপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড. সৈয়দ ইফতেখার আলী। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুস সাত্তার ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. আসাদুজ্জামান দিলু।

মামলার ভিকটিম মিজানুর রহমান বলেন, তাদেরকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য সোহাগ নামের এক বিএনপি নেতা বার বার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। রবিবার সকাল ১০টার দিকে আদালত চত্বরে তাকে লাঞ্ছিত করেছেন ওই নেতা। এমনকি মামলা তুলে না নিলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করবনে বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *