ছয় দফা দাবিতে সাতক্ষীরায় পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
স্টাফ রিপোর্টার: ছয় দফা দাবিতে সাতক্ষীরার খুলনা রোডের মোড়ে সড়ক অবরোধ করেছে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) বেলা ১২ টার দিকে তারা সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোডের মোড়ে ২ ঘন্টাব্যাপী তারা সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধে সাতক্ষীরা সরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করে।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে সাতক্ষীরা- খুলনা, সাতক্ষীরা-শ্যামনগর, সাতক্ষীরা- আশাশুনি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধ আর যানজটের কারণে সড়কে চলাচলকারী মানুষ পড়েছে সীমাহীন দুর্ভোগে। অবরোধের কারণে সৃষ্ট যানজট খুলনা রোডের মোড় থেকে নিউমার্কেট, সঙ্গীতা মোড় পর্যন্ত চলে গেছে।
যানজটের বিষয়টি নিশ্চিত করে সাতক্ষীরা ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তা বলেন, পুরো রাস্তা ব্লক। অবস্থা খুব খারাপ।
সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ছুটে আসেন সদর থানার ওসি শামিনুল হক। তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে প্রধান সড়ক ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। এসময় তিনি বিশৃঙ্খলা এড়াতে ছাত্রদের সাথে বারবার কথা বলেন। এর কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি নেমে এলে ছাত্ররা সড়ক ছেড়ে দেয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল টেকনোলজির সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোমিনুল ইসলাম, এফডিবির সাতক্ষীরা সভাপতি আব্দুর রহমান, সরকারি পলিটেকনিকের সিভিল টেকনোলজির ৭ম ব্যাচের ছাত্র শাহরিয়ার শাওন, নিশিতা তাসনিম, পঞ্চম ব্যাচের আশরাফুজ্জামান, আব্দুল্লাহ অর্ক, সপ্তম ব্যাচের মোহাম্মদ মানিক প্রমুখ।
এ সময় তাদের কেন্দ্র ঘোষিত ছয়টি দাবিসহ ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগ করা সমস্ত নিয়োগ বাতিল করার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ল্যাব সহকারীরা আমাদের শিক্ষক হতে পারেন না। কারিগরি শিক্ষার জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে কমিশন গঠন করতে হবে। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতদের নিয়োগ দিতে হবে। আমরা আগেও একাধিকবার এই দাবি উত্থাপন করেছি, কেউ কর্ণপাত করেনি। এখন আমরা রাস্তা অবরোধ করেছি। এবিষয়ে কথা বলতে হলে ডিসি স্যারকে আসতে হবে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি শামিনুল হক শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ছাত্ররা জাতির ভবিষ্যৎ। তারা যদি কোন বিশৃঙ্খলা করে তাহলে তা কারোর জন্য মঙ্গল নয়। যাতে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা আমাদের দায়িত্ব। এ সময় তিনি প্রধান সড়ক ছেড়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানান।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
আর ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।