কালিগঞ্জে এডিপির রাস্তা ঢালাইয়ের অনিয়ম, দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় মারপিট: কাজ বন্ধ
কালিগঞ্জ প্রতিনিধি: এডিপি অর্থাৎ বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পের অর্থায়নে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকার রাস্তা ঢালাইয়ে কথিত মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দানকারী মাস্টার শাহাজান ঠিকাদারের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় দায়িত্বরত সহকারী প্রকৌশলী গৌরাঙ্গের সামনে ফেলে সুরোত আলী নামক এক বৃদ্ধ রোজাদার ব্যক্তিকে মারপিট ও লাঞ্ছিতের ঘটনায় এলাকাবাসীর প্রতিবাদে রাস্তার কাজ বন্ধ।
ঐ সময় ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ ব্যাপারে ঘটনার সত্যতা জানার জন্য তথ্য উদঘটনে রবিবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন তার ব্যবহৃত ফোন বিএনপি’র ক্যাডারদের হাতে দিয়ে সাংবাদিককে গালিগালাজ ও হুমকি প্রদান করে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকাল ৫ টার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের আমতলা বাইতুল রহমত জামে মসজিদ হতে জোয়ারদার পাড়া রাস্তার উপর। মোটা অংকের নগদ নারায়ণ কাম পার্সেন্টেজ দিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ জমাট বাধা সিমেন্ট মেশিনে দিয়ে ৫ ইঞ্চির পরিবর্তে ৩ ইঞ্চি ঢালাই দেওয়াসহ ৭ ফিট রাস্তা চওড়ার স্থলে ৬ ফুট রাস্তা নির্মাণে ঢালাই দেওয়াকে কেন্দ্র করে মাস্টার শাহাজান ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে এই মারপিটের ঘটনা ঘটে।
বাজার গ্রাম রহিমপুর গ্রামের মনি, শাহাজান, বাবু, আব্দুল্লাহ, আল মামুন হাফিজুল সহ বসবাসকারী ভুক্তভোগী শত শত গ্রামবাসী সাংবাদিকদের জানায়, গত ২০২৪ – ২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পের অর্থায়নে (এডিপি) কুশুলিয়া ইউনিয়নের আমতলা জামে মসজিদ হতে জোয়ারদার পাড়া অভিমুখী ১৭২ মিটার লম্বা এবং ৭ ফুট চওড়া রাস্তাটি ৫ ইঞ্চি ঢালাই কাজ বাস্তবায়নের জন্য সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা টেন্ডারের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হয়। উক্ত কাজটি সাতক্ষীরার আরিফ এন্টারপ্রাইজ লটারির মাধ্যমে পায়।
কাজটি অগ্রিম ১ লক্ষ টাকার ও অধিক লাভ দিয়ে কালীগঞ্জের পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আলোচিত ঠিকাদার কথিত মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দানকারী শেখ শাহজাহান আলী কিনে নেয় উক্ত প্রকল্প সহ আরো প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার বেশ কয়েকটি প্রকল্প। কাজটি কিনে নিয়ে দায়সারা ভাবে যেন তেন ভাবে অধিক মুনাফার আশায় নিজের আপন ভাইপো নিষিদ্ধ সংগঠন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনকে দিয়ে কাজ করিয়ে আসছে।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের সহকারী প্রকৌশলী গৌরাঙ্গকে মোটা অংকের পার্সেন্টেজ দিয়ে গত ৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উক্ত রাস্তায় ঢালাইয়ের কাজ শুরু করে।
ঐ সময় স্থানীয়রা জানতে পারে সাহেবের দোকান থেকে অধিকাংশ মেয়াদ উত্তীর্ণ সহ প্রায় ৯২ ব্যাগ সিমেন্ট দিয়ে মেশিনে ফেলে বালু ,খোয়া, মিশ্রনে ঢালাই কাজ শুরু করলেও উপস্থিত সহকারী প্রকৌশলী গৌরাঙ্গ কিছুই বলেননি।
বিষয়টি স্থানীয় উপজেলার অন্য ঠিকাদারের মাধ্যমে এলাকাবাসী জানতে পারে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকার ১৭২ মিটারের প্রকল্পটি ৭ ফুট চওড়া এবং ৫ ইঞ্চি ঢালাই দিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। ওই সময় স্থানীয় গ্রামবাসী ওই রাস্তায় যেয়ে ওই প্রকৌশলী দিয়ে মেপে পরীক্ষা করে দেখে ৫ ইঞ্চির স্থলে ৩ ইঞ্চি ঢালাই এবং নিম্নমানের কম, সিমেন্ট, বালু খোয়া দিয়ে মোটা অংকের লাভের আশায় দায় সারা ভাবে কাজ প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছে। এতে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে সহকারী প্রকৌশলী গৌরাঙ্গের উপস্থিতিতে ঠিকাদার শাহজাহান মাস্টারের সামনে ভাইপো জাকির হোসেন স্থানীয় মসজিদের মুসল্লী সুরোত আলীকে মারধর করে লাঞ্ছিত করে বলে ভুক্তভোগী স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানায়।
উক্ত ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় গ্রামবাসী সহ ইউপি সদস্য খায়রুল ইসলাম, স্থানীয় প্রকৌশলী কলেজের অধ্যক্ষ হাসানুজ্জামান বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম সহ শত,শত গ্রামবাসী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানান। এবং সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ওই সময় কাজ বন্ধ করে দেয় উত্তেজিত জনতা।
এ ব্যাপারে দুপুরে ঘটনা সম্পর্কে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে গেলে তাকে না পেয়ে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে ফোন দিলে ব্যস্ততার কারণে বাহিরে থাকায় ফোন রিসিভ করেননি।