অপরাধআশাশুনি

আশাশুনিতে নিলামে কেনা সোনালী ব্যাংকের বন্ধকী জমি ও বাড়ি দখল

স্টাফ রিপোর্টার: আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের ব্যবসায়ী অজয় পাইনের স্ত্রী বীথি পাইনের নামে নিলামে কেনা সোনালী ব্যাংকের বুধহাটা শাখার চন্দন দেবনাথের বন্ধকী বাড়িসহ ছয় শতক জমি জবরূখল করা হয়েছে। একই এলাকার মুজিবর রহমানের ছেলে আবু সাঈদ গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর জবরদখল করার পর বীথি বাইনের পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় দিনযাপন করছেন। প্রতিকার পেতে ছুঁটছেন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে।

সরেজমিনে শুক্রবার (৭ মার্চ) সকালে বুধহাটা বাজার সংলগ্ন স্বর্ণকার পাড়ায় যেয়ে দেখা গেছে সোনালী ব্যাংকের বুধহাটা শাখায় ২০০৯ সালের ৬ মে চন্দন দেবনাথের বন্ধক রাখা বাড়িসহ ছয় শতক নিলাম কেনা জমির মালিক বীথি পাইনের হলেও দখলে রেখেছেন একই এলাকার মুজিবর রহমানের ছেলে আবু সাঈদ। বাড়ির দেয়ালে এই জমির মালিক আবু সাঈদ বলে দুটি সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

পার্শ্ববর্তী আব্দুল জলিল ও মঞ্জুরুল ইসলাম মহিদ জানান, অজয় পাইনের স্ত্রী বীথি পাইনের নামে চন্দন দেবনাথের বন্ধক রাখা ছয় শতক বাড়িসহ নিলাম কেনা জমি বাড়িতে কেউ না-থাকার সূযোগে দরজার তালা ভেঙে দখলে নিয়েছে আবু সাঈদ। স্থানীয়রা শালিস ডাকলেও ওই জমি মালিক চন্দন দেবনাথের কাছ থেকে কিনেছেন দাবি করে সিদ্ধান্ত মানেননি।

তবে স্থানীরা জানান, গত বছরের ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সূযোগে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা দলিল মূলে দাবি করে হিন্দু হওয়ার সূযোগে বীথি বাইনের বাড়িসহ জমি দখল করতে সাহস পেয়েছে আবু সাঈদ।

অজয় পাইন জানান, বুধহাটার নিমাই দেবনাথের দুই ছেলে অগ্রদূত দেবনাথ ও দেবদূত দেবনাথ পৈতৃক সূত্রে ১৪৬৩ দাগের ছয় দশমিক ৩৩ শতক জমির মালিক হলেও তাদের কাছ থেকে চন্দন দেবনাথ ২০০৫ সালের ২৫ মে ২০৭৪ নং দলিলমূলে ১২ দশমিক ৩৩ শতক জমি লিখে নেন। ব্যবসার জন্য সোনালী ব্যাংক বুধহাটা শাখায় ২০০৯ সালের ৬ মে প্রকৃত সত্য মেনে নিয়ে ব্যাংকের নামে ছয় শতক জমির বন্ধক দলিল করে দিয়ে এক লাখ টাকা সিসি লোন নেন। টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় নিলাম বিক্রির ঘোষনা দেয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাতক্ষীরা অর্থঋণ ২য় আদালতে ৩/২৩ নং মামলা করে। ওই জমি ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর চন্দন দেবনাথের কাছ থেকে ৪৪৮৪ নং রেজিস্ট্রি কোবালা মূলে কিনেছেন মর্মে আবু সাঈদ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তখন নিলাম বন্ধ করে আবু সাঈদকে নিলামের ৬ লাখ ২০ হাজার টাকার ১০ শতাংশ জমা দিয়ে ২১ দিনের মধ্যে আদালতে পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য সাঈদকে পরামর্শ দেন। সাঈদ ওই নির্দেশ মানেননি।

একপর্যায়ে আবারো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অর্থ ঋণ আদালতে ৩/২৩ নং মামলা শুরু করে। একপর্যায়ে বীথি পাইন ৬ লাখ ২০ হাজার টাকায় নিলাম খরিদ করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আশাশুনী সাব রেজিস্ট্রার রিপন মুন্সির মাধ্যমে বীথি পাইনের নামে ৪০৭৩/২৩ নং বয়নামা দলিল করে দেন। পৃথক হোল্ডিং খুলে নিজের নামে ওই জমি নামপত্তন করে নেন বীথি। এরপর থেকে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে স্থানীয় বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক ডাব্লুসহ গন্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় ওই বাড়িতে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করতেন বীথি পাইন ও তার পরিবার।

অজয় পাইন আরো জানান, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে তিনি, তার স্ত্রী বীথি ও মা তপতী পাইন বাড়িতে না থাকার সূযোগে আবু সাঈদ তার বাড়ি ও ঘরের দরজার তালা ভেঙে জিনসপত্র লুটপাট করে জমি দখলে নেয়। স্থানীয়দের জানিয়ে কোন লাভ না হওয়ার ২৮ ডিসেম্বর তিনি থানায় ১০৯৭ নং সাধারণ ডায়েরী করেন। অবহিত করেন সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে। গত ৬ ফেব্রুয়ারী আদালত থেকে প্রসেস সার্ভয়র পাঠিয়ে ওই জমি বীথি পাইনকে দখল দিতে গেলে সাঈদ বাধা দেয়। একপর্যায়ে প্রসেস সার্ভয়র মোহাম্মদ আলী সংশ্লিষ্ট আদালতকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। আদালত সরকারি আইনজীবী ও পুলিশের সহায়তায় ওই জমি বীথি পাইনকে বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ ছাড়া চন্দন দেবনাথের ছয় শতক জমি পাওনা হলেও ১২ দশমিক ৩৩ শতক জমি দেখিয়ে সৃষ্ট কেনা দলিল দেখিয়ে আবু সাঈকে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বীথি পাইনের নামে নামপত্তনের আট মাস পর আবু সাঈদের নামে নামপত্তন করে দিয়েছেন আশাশুনি সহকারি কমিশনার (ভূমি)।

এ ব্যাপারে আবু সাঈদ জানান, তার দলিল অনুযায়ী ওই জমি তার। সেকারণে তিনি দখলে নিয়েছেন।
বুধহাটা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক তুষার কান্তি মাহাতো জানান, অজয় পাইনের করা সাধারণ ডায়েরী অনুযায়ী আবু সাঈদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

সোনালী ব্যাংক বুধহাটা শাখার ব্যবস্থাপক মোছাঃ মেরিনা আক্তার রিপা জানান, যেহেতু আবু সাঈদ তাদের নির্দেশনা না মনে মামলায় পক্ষভুক্ত হননি, সেক্ষেত্রে তার জমির দাবি অযৌক্তিক। তারা আইন অনুযায়ী বীথি পাইনকে জমি বুঝিয়ে দিতে সব ধরণের সহায়তা করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *