কালিগঞ্জের ইউএনও ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলায় বাড়িঘর ভাঙচুর, নারী ও শিশুসহ ১০ জনকে পিটিয়ে জখম
ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি: তিন যুগ ধরে বসবাসকারী ভূমিহীনদের সরকারি খাস জায়গা জোর পূর্বক দখল ও ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে উপজেলা পরিষদে যেয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার অপরাধে বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের পোষ্য ভূমিহীন নামধারী সন্ত্রাসীরা মধ্যযুগীয় কায়দায় তান্ডব চালিয়ে বসবাসকারী ৪০ টি ভূমিহীন পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর ও বেধড়ক পিটিয়ে নারী-পুরুষ, শিশুসহ প্রায় ২০ জনকে আহত করার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) ইফতারের আগ মুহূর্ত হতে ৩ ঘন্টা ব্যাপী সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের ভূমিহীন অধ্যুষিত শহিদ জাহেদা নগর, ভাঙ্গনমারী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সন্ত্রাসী হামলায় আহতরা হলো জাহেদা নগরের ভূমিহীন নেতা আব্দুল ওহাব (৬৫) ,মৃত ইশার আলীর পুত্র জহুরুল (৪০), নজরুল সরদারের পুত্র আল মামুন (৩৮), মৃত নাজির আলীর পুত্র মহাসিন (৪৫ ), নজরুলের স্ত্রী অরিজিনা খাতুন, (৩২)আজগর শেখের পুত্র আব্দুল গফুর (৩৮) এবং শাজাহান শেখের শিশু পুত্র সুমন (১২ )। এদের মধ্যে ৪ জনকে কালিগঞ্জ হাসপাতালে, ২ জনকে নলতা হাসপাতালে এবং শিশু সুমনকে প্রথমে দেবহাটা থানার সখিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শিশু সুমন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে বলে জানা যায়। বাকি আহতদের স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তান্ডবের পরে আহতরা যন্ত্রণায় ছটফট করলেও হাসপাতালে আসতে বাধা দিয়ে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হওয়ায় আহতরা অন্য উপায়ে চুরি করে বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকে এসে ভর্তি হয়। ভূমিহীন নেতা ওহাব আলী সরদার, মহাসিন, জহুরুল সহ একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানায় গতকাল মঙ্গলবার ভাঙ্গানমারি ভূমিহীন এলাকায় বসবাসকারী ১০৭টি ভূমিহীন পরিবারের প্রায় ১ শত বিঘা সরকারি খাস জমি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের কথিত ভূমিহীন নামধারী সন্ত্রাসীরা গত ১ মার্চ জোর পূর্বক দখল করে নেয়। উক্ত ঘটনা কে কেন্দ্র করে অভিযোগ জানাতে মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক ১০ টা থেকে ৩/৪,শ ভুক্তভোগী ভূমিহীন নারী-পুরুষ উপজেলা সদরে জমায়েত হতে থাকে । ঐ সময় বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডল তাদের সঙ্গে পরে কথা বলবে বলে তিনি বাজার মনিটরিং এর কাজে বেরিয়ে যান।
এ সময় ভূমিহীনরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে বাড়ি চলে যায়। বিকালে ভূমিহীন নেতা ওহাব আলী কালিগঞ্জ উপজেলা জামায়াত ইসলামের অফিসে যাকাত শীর্ষক একটি কর্মশালা শেষ করে বাড়িতে যাওয়ার পথে কাজলা গ্রামের ডাঃ আবু নেছার বাড়ির নিকটে পৌঁছানো মাত্রই চেয়ারম্যান আজিজুর কালিগঞ্জ গেছস কেনৌ কৈফিয়ৎ চায়? এই কথা বলে ভূমিহীন নেতা ওহাব আলী সরদারকে গালিগালাজ করে হুমকি দেয়। পরে বাকি রোজাদার ভূমিহীনরা ইফতারের আগে বাড়িতে পৌঁছানো মাত্র চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের কথিত সন্ত্রাসী মমিন, রফিকুল, সেকেন্দার ওরফে সেকেন, গফুর পাড়, ইয়াদ শেখ, শরিফুল গাজী ,মেহেদী এর নেতৃত্বে ৩০/৪০ জনের একটি সশস্ত্র গ্রুপ প্রায় ৩ ঘন্টা তান্ডব চালিয়ে ৪০ টি ভূমিহীন পরিবারের বাড়ি ,ঘর, মোটরসাইকেল আসবাবপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় বলে ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের জানান। ঐ সময় সন্ত্রাসীদের বেধড়ক লাঠিপেটায় নারী, পুরুষ, শিশুসহ প্রায় ২০ জন কে পিটিয়ে আহত করে।
উক্ত ঘটনায় গুরুতর আহতদের হাসপাতালে নিতে বাধা দেয় বলে ভুক্তভোগী ভূমিহীনরা সাংবাদিকদের জানায়। অবস্থা বেগতিক দেখে বিষয়টি কালিগঞ্জ থানা কে জানালে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় ৯৯৯ ফোন দেওয়া হয়। সেখান থেকে থানায় নির্দেশ দেওয়া হলেও সেখানে কোন পুলিশ যায়নি বলে সাংবাদিকদের জানায়।
উল্টো চেয়ারম্যান ঐ সমস্ত কথিত ভূমিহীন নামধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করবে বলে হুমকি দিয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়েছে বলে ভুক্তভোগী ভূমিহীনরা সাংবাদিকদের জানায়।
এ ব্যাপারে ঘটনার সত্যতা জানার জন্য চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
ঘটনার সত্যতা জানার জন্য কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমানের নিকট ফোন দিলে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হারুনার রশিদ মৃধার নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান এ বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।