সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গায় স্বামীকে হ’ত্যা করে স্ত্রীর আ’ত্ম’হ’ত্যা
গাজী হাবিব: প্রবাসী স্বামী আলমগীরকে ফাঁকি দিয়ে এক সন্তান হওয়ার পরেও কাপড় ব্যবসায়ী আবুল কালামের পরকীয়া প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নাজমিন। এই সংসারের বাধা ছিল আবুল কালামের মা, প্রথম স্ত্রী শারমিনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। ফলে আবুল কালাম নিজের পৈতৃক ভিটে ছেড়ে ২-৩ মাস আগে ঝাউডাঙ্গার ওয়ারিয়া গ্রামে মোহন কুমার পালের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন।
অতি সম্প্রতি পারিবারিক কলহের জেরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে নাজমিন। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় স্বামী কাপড় ব্যবসায়ী আবুল কালামকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পেটের উপর ‘সরি জান আই লাভ ইউ’ সহ সাদা কাগজে কয়েকটি চিরকুট লিখে নাজমিন আক্তার গলায় ওড়না বেঁধে ফ্যানের সিলিংএ ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।
শুক্রবার (২৮ফেব্রুয়ারি) সকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ওয়ারিয়ার পালপাড়ার মোহন কুমার পালের বাড়ী (ভাড়া বাড়ি) থেকে পুলিশ কালাম-নাজমিন দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতরা হলেন- আবুল কালাম আজাদ (৪৫) ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমিন আক্তার (৩০)। আবুল কালাম আজাদ কলারোয়া উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুল মাজেদ মোল্লার ছেলে। সে ঝাউডাঙ্গা বাজারে কাপড় ব্যবসা করে।
বাড়ির মালিক মোহন কুমার পাল জানান, ঝাউডাঙা বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ি আবুুল কালাম তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমিন আক্তারকে নিয়ে দুই-তিন মাস যাবৎ তার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বৃহস্পতিবার রাত ১২ টার পর স্বামী ও স্ত্রী ভাত খেয়ে শুয়ে পড়ে। সকালে তারা বের না হওয়ার তিনি উপরে উঠে কালামের লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। পাশের ঘরে সিলিং ফ্যান ঝোলানোর ক্লাম্পের সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে নাজমিনকে ঝুলে থাকতে দেখেন। নিহত কালামের গলায় নাইলনের সুতা দিয়ে ফাঁস দেওয়া হয়। পাশে কয়েকটি চিরকুট পড়ে ছিলো।
চিরকুটে লেখা ছিল—আমি কিছু শেষ করে দিলাম। আমি ২.৩১ মিনিটে মারছি, এবার আমিও মরছি। একা হলেও বাঁচবো না, কারণ শারমিন ও তার পরিবার আমাকে শেষ করে দেবে। তাই আমরা দুইজন মরে গেলাম। এবার তোমরা সংসার করো, ভালো করে। আর কেউ বিরক্ত করবে না। আমার ছেলে কষ্ট পাবে, তার পরও কালামের জন্য আমি সবাইকে কষ্ট দিলাম। তবুও সে আমাকে কষ্ট দিল, শয়তান একটা।” তাছাড়া, নাজমিন তার পিতা মাতা, সন্তান ও প্রথম স্বামী আলমগীরকে জড়িয়ে অনেক আবেগঘন কথাবার্তা লিখে গেছেন। লেখার মধ্যে তিনি আবুল কালামের প্রথম স্ত্রী, তার মা এবং তার কয়েকজন বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে অনেক আবেগঘন কথা লিখেছে।
হত্যার পর আবুল কালাম আজাদের বুকের ওপর কলম দিয়ে নাজমিন লেখেন—”সরি জান, আই লাভ ইউ”। পরে নিজেই আত্মহত্যা করেন।
স্থানীয়রা জানান, আবুল কালাম আজাদের দুই স্ত্রী ছিলেন। তবে বড় স্ত্রী শারমিনের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল না। ছোট স্ত্রী নাজমিন একসঙ্গে বসবাসের দাবি জানিয়ে বড় বউ শারমিনকে ফোন করেন। কিন্তু শারমিন রাজি না হওয়ায় ক্ষোভ থেকেই এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামিনুল হক বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। স্বামীকে হত্যার পর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে মর্মে ধারণা করা হচ্ছে।