প্লাস্টিক ও পলিথিনসহ নানান দূষণ-সংকটে সুন্দরবন
নাজমুল আলম মুন্না: “প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণ বন্ধ করি- সুন্দরবন রক্ষা করি” এই প্রতিপাদ্যে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চল সমূহের দূষণ কমানো এবং বাস্তুসংস্থান উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘সুন্দরবনের জন্য সাংবাদিকতা’ বিষয়ক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টায় সাতক্ষীরার অগ্রগতি রিসোর্ট সেন্টারে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম খোকন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রূপান্তরের প্রকল্প সমন্বয়কারী শুভাশিস ভট্টাচার্য ও সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল।
সুন্দরবন প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারি গোলাম কিবরিয়ার সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক মুজিবর রহমান, রুহুল কুদ্দুস, গোলাম সরোয়ার, আমিরুজ্জামান বাবু, প্রভাষক সামিউল মনির, আসাদুজ্জামান সরদার, সুকুমার দাস বাচ্চু, আহসান রাজিব, নাজমুল আলম মুন্না ও আখতারুজ্জামান বাচ্চু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন সুন্দরবন দুই ভাবে দুষণ হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক অন্যটি মানবসৃষ্ট। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার জনগণসহ টুরিস্টদের প্লাস্টিক ও পলিথিনের মাধ্যমে দূষণ সম্পর্কে অবগত করার পাশাপাশি দূষণ প্রতিরোধে দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজনিজ স্থান হতে কার্যকর ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।
সুন্দরবনকে বাচাতে হলে আমাদের সকলকে দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি সুন্দরবনের সংকট নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখিসহ টিকটক ও অন্যন্য প্রচার মাধ্যমগুলোতে প্রচারনা বাড়াতে হবে। এছাড়া সুন্দরবন রক্ষায় মানুষের আচরণ পরিবর্তন করে সুন্দরবনকে ভালবাসতে হবে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের ৬০ শতাংশ এলাকা বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা ও সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত। উপকূলীয় এসব এলাকার জনজীবনের সুরক্ষা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সুন্দরবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের মৎস্য, বনজ ও জলজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল, যা তাদের জীবন-জীবিকার প্রধান উৎস এবং দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে সুন্দরবন চরম প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।
১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবন সংলগ্ন ১০ কিঃমিঃ এলাকাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসাবে ঘোষণা করে যা, উপরোক্ত ৫টি জেলার ১৭টি উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে ‘সুন্দরবন ইমপ্যাক্ট জোন’ হিসেবে। তবুও, মানুষের অপরিকল্পিত ও খামখেয়ালিপনা কার্যক্রমের কারণে এই অঞ্চলে দূষণ বাড়ছে। প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের ফলে নদী, খাল ও জলাশয় গুলোকে প্রভাবিত করছে, যা শেষ পর্যন্ত জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে সুন্দরবনে প্রবেশ করছে এবং বনের মাটি, পানি ও পরিবেশ দূষিত করছে। এর ফলে গাছপালা, বন্যপ্রাণী ও জলজ প্রাণীর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যা সুন্দরবনের উৎপাদনশীলতা হ্রাস করছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে ফেলছে।এমতাবস্থায় সুন্দরবনের মতো একটি গুরুত্বপুর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা এবং এ সংলগ্ন এলাকার জনগণকে পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি।
সভা শেষে মাছরাঙা টেলিভিশন ও আমাদের সময়ের সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জলকে আহবায়ক ও সামিউল মনির, সুকুমার দাস বাচ্চু, এস.কে হাসানকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং এখন টিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আহসানুর রহমান রাজিবকে সদস্য সচিব করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট জার্নালিজম ফর সুন্দরবন নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।