প্রধান শিক্ষক’র কাছে প্রাইভেট না পড়ায় উপবৃত্তির টাকা বন্ধ
ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, কালিগঞ্জ: কি যতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে, দংশনি যারে। কালিগঞ্জ উপজেলা সদরে অবস্থিত কালিগঞ্জ সদর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র মাহিম ওমর রোহান। সে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। অভাবের তাড়নায় পেটের খিদে নিবারণে বাজার গ্রামে বসবাস কারি বাবা জাহাঙ্গীর সোনালী ব্যাংকের পাশে সাইকেল, মোটর সাইকেলের গ্যারেজে কাজ করে। মা এ টিএম বুথ সংলগ্ন উপজেলা মাঠের দক্ষিণ পাশে চা, বিস্কুট বিক্রি করে। প্রতিদিন ১/২’শ রোজগারের টাকা দিয়ে উপজেলা খাদ্য অফিসের সহায়তায় খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির দেওয়া ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চাউল কিনে পরিবারের খিদে নিবারণ করে।
এ দিকে ছেলের স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলা-আমিন হোসেন ৫ম শ্রেণীর ছাত্র, ছাত্রীদের নিয়ে স্কুল ভবনে সারা বছর ধরে সকাল ৭টা হতে ৮টা পর্যন্ত জনপ্রতি ৫০০ টাকা নিয়ে প্রাইভেট /কোচিং করিয়ে থাকে। পঞ্চম শ্রেণীর ৮৭ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে মাহিম ওমর ফারুকের রোল ১৪। অসহায় বাবা দারিদ্রতায় ছেলে রোহান প্রধান শিক্ষক আলামীনের নিকট পড়তে যেতে পারেন না। প্রাইভেট/ কোচিংয়ের ৫০০ টাকা না পাওয়ার ক্ষোভে প্রধান শিক্ষক রোহানের উপবৃত্তির টাকা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়াও তাকে বিদ্যালয় উপস্থিতি না দেখিয়ে বেওয়ারিশ ছাত্র হিসেবে দেখাইয়ে নাম উপবৃত্তির নিবন্ধন তালিকায় পাঠায়নি। অথচ অনেক ও আমেদাবি ধনী শ্রেণীর ছেলেরা তালিকায় স্থান পেলেও গ্রহণের ভাগ্যে উপবৃত্তি জোটেনি। মেধাবী ছাত্র হিসেবে বিগত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীতে তাকে উপবৃত্তির টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে জানায়। বিষয়টি নিয়ে ওমর ফারুক রোহানের বাবা, মা একাধিকবার বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট ধরনা ধরেও মন গলেনি ওই পাষণ্ড প্রধান শিক্ষকের। অথচ উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ৫০০ গজ দূরে অবস্থিত সদর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে প্রকাশ্যে প্রাইভেট /কোচিং পড়ানো হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান।
বিষয়টি নিয়ে এ প্রতিনিধি জানতে পেরে প্রধান শিক্ষক আলামীনের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি বিষয়টি মিসটেক দেখবেন বলে ফোন কেটে দেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী কোন বিদ্যালয় ভবনে কোচিং বা প্রাইভেট পড়ানো নিষেধ থাকলেও বছরের পর বছর উপজেলা সদর সহ অধিকাংশ স্কুলে এইভাবে কোচিং বাণিজ্য চললেও দেখার কেউ নাই।
এ বিষয়ে ঘটনার সত্যতা জানার জন্য মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দীর নিকট জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে বিদ্যালয় ভবনে এই ধরনের কোচিং বাণিজ্য করার কোন অনুমতি আছে কিনা সে বিষয়ে তিনি অনুমতি নাই বলে এ প্রতিনিধিকে জানান।
তবে রোহানের উপবৃত্তি টাকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। বিষয়টি তদন্ত-পূর্বক জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে উপজেলা বাসী।