বিদ্যালয়ে না এসেও প্রধান শিক্ষক উত্তোলন করেন বেতন
স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ ৫ মাস বিদ্যালয়ে হাজির না হয়েও প্রতি মাসে বেতন ভাতা উত্তোলন, অর্ধ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য, এম,পিও ভুক্তির নামে ঘুষ বাণিজ্য সহ প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে নানাবিধ অনিয়ম দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ।
ভুক্তভোগী শিক্ষক, কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক যুবলীগ নেতা ও থানা আওয়ামী লীগের সদস্য শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এমনই তথ্য উঠে এসেছে ।
বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে সড়ক- অবরোধ করে শিক্ষার্থী ,অভিভাবক এবং এলাকাবাসী আন্দোলন চালিয়ে আসছে । উক্ত আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে আন্দোলন থামলে ও অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডলের গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি আজও তদন্ত কার্যক্রমের আলোর মুখ না দেখায় আবারও ফুঁসে উঠছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এলাকাবাসী ।
তদন্ত কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ ও প্রভাবিত করার জন্য প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম মোটা অংকের মিশন নিয়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শঙ্কর কুমার দে সহ আরো ২ সদস্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাকি বিল্লাহ এবং উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আকরাম হোসেনের স্বচ্ছতা নিয়ে নানান সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে । তবে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহবায়ক ডাঃ শংকর কুমার দের নিকট জানতে চাইলে তিনি তদন্ত কার্যক্রম চলমানের কথা জানান। অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির বিষয়টি তার জানা নেই শিক্ষকদের মাধ্যমেই আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি আগামী মিটিংয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । তবে তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে দীর্ঘ ২২ বছর বিদ্যালয়ে চাকরি করে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষককে ঘুষ দিতে না পারায় তাদের আজও পর্যন্ত এমপিও ভুক্তির কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় মানবতার জীবন যাপনের পাশাপাশি অনেকের পরিবার ছেড়ে চলে গেছেন ।
অভিযোগের সূত্র থেকে জানা যায় উত্তর কালীগঞ্জ এলাকাবাসীর সহায়তায় ২০০১ সালে উপজেলার পূর্ব নারায়নপুর গ্রামের মৃত আজিজ গাজী ওরফে আজিজ কলুর স্ত্রী তার ছেলে শফিকুল ইসলামকে প্রধান শিক্ষক করার শর্তে ১ বিঘা দান এবং এলাকাবাসীর সহায়তায় আরো ১ বিঘা জমি ক্রয় করে প্রথমে কালিগঞ্জ আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে । সেই থেকে শফিকুল ইসলাম প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এমপিও ভুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করে । বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ডোনেশনের নামে প্রধান শিক্ষক প্রত্যেকের নিকট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ঘুষ-বানিজ্য করেছে বলে ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের জানান।
এছাড়াও প্রত্যেকের বেতন এমপিও ভুক্তি ছাড় করানোর জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম করে জনপ্রতি ২/৩ লক্ষ টাকা করে ঘুষ হাতিয়ে নিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের আরও জানান। সহকারি প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিনের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়েও দীর্ঘ ২৩ বছরে ও বেতন ভাতা এমপিও ভুক্ত হয়নি। অবশেষে আরও ঘুষের টাকা না দেওয়ায় তার জাল সার্টিফিকেট বলে আখ্যায়িত করে তৎকালীন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম এমপিও ভুক্তি কাগজপত্র আটকে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে ।
এ ছাড়াও নিজের আপন ভাই রফিকুল ইসলাম কে নৈশপ্রহরী এবং আপন খালা রেহেনা পারভীনকে শরীর চর্চা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে । এছাড়াও পরিচ্ছন্ন কর্মী আলমগীরের নিকট থেকে ৬ লক্ষ এবং দারোয়ান কাম- মালি পদে হাবিবুর রহমানের নিকট থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ আদায় করেছেন বলে তারা লিখিতভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে জানা যায় । এ ছাড়াও প্রদীপ কুমার পালের নিকট থেকে ২ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে দীর্ঘ ২৩ বছর বেকার খেটে খালি হাতে অবসরে গেলেও তার ভাগ্যে বেতন জোটেনি এবং তার দেওয়া ঘুষের টাকাও ফেরত পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে ।
বর্তমান জনরোষ থেকে নিজেকে বাঁচাতে মাসের পর মাস পালিয়ে বেড়ালেও প্রতি মাসে বেতন ভাতা উত্তোলনে কোন বাধা নেই। বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় দীর্ঘ ৫ মাসের অধিক সময় তার কোন হাজিরা স্বাক্ষর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিদ্যালয়ে হাজির না হয়ে সার্বক্ষণীক আওয়ামী রাজনীতির মাঠে দৌড়ঝাঁপ করে পার করলেও বর্তমানেও তাকে কোনদিন বিদ্যালয়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনতিবিলম্বে দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের অপসারণ ও শাস্তি দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।