ইতিহাস ঐতিহ্যজীবনযাপনফিচারবিনোদনশ্যামনগরসদরসাতক্ষীরা জেলা

সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চস্থ হলো ‘‘অমীমাংসিত বাঘ বিধবা’’

বিশেষ প্রতিনিধি: দর্শক হৃদয় স্পর্ষ করে সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চ কাপালো ‘‘অমীমাংসিত বাঘ বিধবা’’।

দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সুজিত পাল বললেন অনেক বড় বড় নাট্যকার থাকা স্বত্ত্বেয় সাতক্ষীরার মঞ্চে অনেক দিন ভালো পরিবেশনা প্রদর্শিত হচ্ছে না। তার মধ্যে সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলের বনজীবীদের জীবন জীবিকাকে ঘিরে প্রদর্শিত নাটক ‘‘অমীমাংসিত বাঘ বিধবা’’ সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চ রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছে।

নাটকের প্রতিটি চরিত্রের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল অভিনেতা অভিনেত্রীরা। এই নাটকের চরিত্রগুলো সাতক্ষীরার পলিমাটিকে স্পর্ষ করে জীবনকে রাঙিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল। মাটির সরল সন্তানদের দুঃখগাঁথাকে যেনো চিরে চিরে প্রদর্শন করছিল নাটকটি।

১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় অনুষ্ঠিত নাটকটি দেখতে সময়ের আগেই দর্শক আসন বলতে ভরপুর ছিল।

নাট্যকার আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশনা ছিল একেবারে মারদাঙ্গা মার্কা। অভিনয় শিল্পীদের মনের কথাগুলো যেন দর্শকরা বুঝতে পারছিলো কী পরিশ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করতে পারলে এমন পরিবেশনা দেখানো যায় তা হাড়ে হাড়ে বুঝেছে। নির্দেশনা সহকারিও যে কতটা কাংখিত হতে পারে তাও সম্ভবত শাহ মাহমুদুর রহমানের কাজেই বুঝেছেন নির্দেশক রাজ্জাক।

সেট লাইট ও প্রপসও করেছেন নির্দেশক নিজে। পনের দিনের সময় স্বল্পতা না হলে হয়তো সেটিও দর্শক হৃদয়ে দাগ কেটে থাকতো। শুভজিত দাসের পোস্টার ডিজাইনেও ছিল সমান পারদর্শিতা।
আর সবকিছু সমন্বয় করে দেখিয়েছেন জেলার সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা ফাইজা হোসেন অন্বেষা। নিজে যেন ছিলেন নিজেরই প্রতিদন্দী। দুর্বল মঞ্চ, দুর্বল সাউন্ড লাইটকেও কীভাবে কাটিয়ে উঠে সবল সফল দেখাতে হয় তা দেখিয়েছে তরুণ এই সংগঠক।

নাটকে লেজকাটা বাঘের চিত্রায়ন ঘটিয়েও বাঘের চরিত্র হাতির মতো বড় করে প্রদর্শন করেছে সুজন মৃধা। বনবিবির মতো বড় চরিত্রের রুপায়ন ছোটবয়সী হয়েও কেমন করে করতে হয় তা দেখিয়েছে নুসরাত আমিন প্রাপ্তি। মৌয়ালদের মধ্যে মনিরুল ইসলাম মিলন ও প্রতীক চন্দ্র চাঁদ সূর্য্য দেখিয়েছে দর্শকদের। মনিরুল ইসলাম সুদী মহাজনের চরিত্র রুপ দিয়েছে একেবারে চরম সুদখোরদের মতো করেই।

মাহফুজা পারভিন লিপি, সমর, ছাদিক, হিরন্ময়, মিথিলা মিরন অভিনয়ে পারদর্শিতা দেখাতে মঞ্চে যেন রিলে রেস করেছে।
সাবরীনা ইয়াছমিন প্রমা ও শাহাদাত জামান শান্ত’র কাজগুলোও দর্শক দেখেছে মনোযোগ দিয়ে।

তবে খুটিয়ে খুটিয়ে সব বলতে পারা প্রধান অতিথি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রিপন বিশ্বাসের কথা ঢকঢক করে গিলেছেন দর্শকরা।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রিপন বিশ্বাস নাটক শেষে সময় নিয়ে বলেছেন নাটকটিতে সুন্দরবন উপকূলের মানুষের জীবনকে নিখুঁত কারুকার্যে মঞ্চে তুলে ধরেছেন নির্দেশক ও শিল্পীরা। যেখানে সঠিক ও ভুল মিথ যা আছে তাও ফুটে উঠেছে। বনজীবী মৌয়াল বাওয়াল জেলেদের উপর মহাজন, বাঘ, কুমিরসহ সব সংকটগুলো কীভাবে আটকে ফেলে তা উঠেছে। আবার তাকে বনজীবী নারীরা কীভাবে মোকাবেলা করে সেটাও দেখা গেছে।
পনের দিনের রিহার্সালে প্রযোজনা ভিত্তিক নাটক স্ক্রিপ্ট নির্মাণ করে নাট্য কর্মশালায় শহীদ মুনীর চৌধুরীকে স্মরণ করে প্রথম বারের মতো জাতীয় নাট্যোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা নাট্যআন্দোলনের পথে গতি সৃষ্টি করবে বলে জানিয়েছেন জেলা ফাইজা হোসেন অন্বেষা।

নাটক পরিবেশনা শেষে অনুষ্ঠিত আলোচনায় সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বাসুদেব বসুর সরস আলোচনা মনোযোগ দিয়ে শুনেছে দর্শকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *