সাইকেল মিস্ত্রীকে হত্যার পর লা/শ গাছে ঝুলিয়ে আ/ত্ম/হ/ত্যা/র প্রচার, আটক-৩
স্টাফ রিপোর্টার: জমির সীমানা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে অনিমেষ সরকার নামের এক সাইকেল মিস্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে নিম গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাতে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের লাঙ্গলদাাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার সকাল ১১টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে।
নিহত অনিমেষ সরকার আশাশুনির লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের নিরঞ্জন সরকারের ছেলে।
নিহতের মা শেফালী রানী সরকার জানান, তার স্বামী নিরঞ্জন সরকার প্যারালিসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। তার ছেলে অনিমেষ সরকারের(৩৫) মাড়িয়ালা মাসের সেটে সাইকেল ও ভ্যান মেরামতের একটি দোকান রয়েছে। এ ছাড়া অনিমেষ বাড়ি থেকে ২০০ গজ দূরে শ্রীউলা ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মালেক মল্লিকের বাড়ির পিছনে দুই বিঘার একটি ছোট মাছের ঘের রয়েছে। অনিমেষ চার বছরের সূর্য সরকার ও নয় মাসের ঈশানী সরকারের জনক। অনিমেষ প্রতিদিন রাতে দোকান বন্ধ করে ঘের থেকে ঘুরে বাড়িতে আসতো।
শেফালী রানী সরকার আরো জানান, তাদের বাড়ির পিছনে ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মালেক মল্লিক ও তার ভাই অহিদ মল্লিকের বাড়ি। সীমানা নিয়ে মালেক মল্লিক ও তার ভাই অহিদ মল্লিকের প্রায়ই ঝগড়া হতো। ৫ আগষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর অনিমেষ অনেক হুমকির মধ্যে ছিল। গত সোমবার একটি পুকুর থেকে অন্য পুকুরে জল সরানোর সময় মাছ লাফ দেওয়াকে কেন্দ্র করে মালেক, তার ভাই অহিদের সাথে অনিমেষের বিরোধ হয়। একপর্যায়ে অনিমেষকে মারপিট করে মালেক , তার ভাই অহিদসহ কয়েকজন। বিষয়টি অনিমেষ স্থানীয় বিএনপি’র সক্রিয় কর্মী বকচর গ্রামের আলমগীর হোসেন, মাড়িয়ালা গ্রামের আফছার আলী সরদারসহ কয়েকজনকে জানান। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে অনিমেষের বাড়িতে শালিসি বৈঠক বসে। মালেক বিএনপি’র সভাপতি হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। একপর্যায়ে শালিসদাররা অনিমেষকে দায়ী করে মালেকের হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বলে। অনিমেষ ক্ষমা চাইতে গেলে তাকে লাথি মেরে পুকুরে ফেলে দেয় মালেক ও অহিদ। এরপরও মালেক ও অহিদ তার ছেলে অনিমেষকে প্রকাশ্যে খুন করার হুমকি দেয়। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে দোকান থেকে ঘের হয়ে বাড়ি না আসায় রাতে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের আব্দুল খালেক মোল্লার ছেলে বাবুল আক্তার মোল্লার নিম গাছে নাইলনের দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান একই গ্রামের ইমদাদুল হকের স্ত্রী নারগিস খাাতুন। খবর পেয়ে তিনি ও স্বজনরা অনিমেষের লাশ দেখতে পান। অনিমেষকে হত্যার পর লাশের গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রাচর দেয় মালেক মল্লিক।
এ ব্যাপারে অহিদ মল্লিক বলেন, তিনি অনিমেষের মৃত্যু সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাহুল দেব রায় বলেন, অনিমেষকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নোমান হোসেন জানান, খবর পেয়ে তিনিসহ দেবহাটা সার্কেল অফিসার হাসানুর রহমান ও সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। বাবুল আক্তার মোল্ল্যার ছাদ থেকে মৃতের পরিহিত হাফ প্যান্ট, প্যন্টের পকেটে থাকা গ্যাস লাইটার ও মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া নিহতের ঝুলন্ত লাশের পাশ থেকে ভিকটিমের ব্যবহৃত আরো একটি সট প্যান্ট উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর আত্মহত্যার প্রচার দিতে লাশ দূরবর্তী বাবুল আক্তারের নিম গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ মালেক মল্লিক, তার ভাই অহিদ মল্লিক ও জিল্লুর রহমান নামে এক চায়ের দোকানদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। এ ঘটনায় নিহতের মা শেফালী রানী সরকার কারো নাম উল্লেখ না করে শনিবার রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা(১৮) দায়ের করেছেন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে অনিমেষের লাশ তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।