কৃষিসদরসাতক্ষীরা জেলা

ভোমরা হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের চেয়ার রক্ষায় মরিয়া বাবলু

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে শ্রমিক ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র না মেনে চেয়ার চিরস্থায়ী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পতিত সরকারের দোসর আশরাফুল ইসলাম বাবলু। নিজের আখের গোছাতে প্রকৃত শ্রমিক বাদ দিয়ে ব্যবসায়ী এবং তার আতœীয় স্বজন, বন্ধুসহ প্রতিবেশীদের ভোটার বানিয়েছেন। তার কর্মকান্ডে ভোমরা হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তার হাত থেকে রক্ষা পেতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী শ্রমিকরা।

শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দেড়শো জন অশ্রমিক ভোটার বানিয়ে নিজের পকেট থেকে মাসিক চাঁদা পরিশোধ করে। তারা শুধু নির্বাচনের দিন বন্দরে ভোট দিয়ে যায়। তারা বন্দর সংশ্লিষ্ট কোন কর্মে জড়িত না। আর এই অশ্রমিকের ভোটে সভাপতি পদ বাগিয়ে নেয় বাবলু। শুধু তাই নয়, ভোটের আগের রাত্রে বাবলু মনোনীত প্রার্থীদের প্রতিকে টিক চিহ্ন দেয়া নমুনা ব্যালট দিয়ে আসে। সেখানেই সেসব অশ্রমিকরা ভোট দিয়ে আসে। ফলে বাবলুর প্রতিদ্বদ্বি প্রার্থীসহ অন্যান্য প্রার্থীদের কৌশলে ক্ষতি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বাবলুর বানানো ভোটারদের কারনে প্রকৃত শ্রমিকদের মতামতের বহিপ্রকাশ হচ্ছে না। ফলে এ শ্রমিক ইউনিয়নে নতুন করে কোন প্রার্থী ভোটে অংশ নিতে অনিহা প্রকাশ করছে।

এর আগে ২০১৮ সালে প্রকৃত শ্রমিকদের বাদ দিয়ে অশ্রমিকদের ভোটার করার কারনে বাবলুকে মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিতে বাধা দেন কর্মরত শ্রমিকরা। পরবর্তীতে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলেও আওয়ামীলীগের ক্যাডারদের প্রভাবে প্রকৃত শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হন। বর্তমানেও ওইসহ অশ্রমিকদের বাদ দিয়ে প্রকৃত শ্রমিকদের ভোটার তালিকায় অন্তভুক্তির দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা।

২০২১ সালের ভোটের পূর্বে বাদপড়া প্রকৃত শ্রমিকরা ভোটার তালিকায় নাম তুলতে ইউনিয়ন অফিস ঘেরাও করে। সে সময় ইউনিয়নের সভাপতি এই বাবলু জানায়, ভোটের পরে ছাড়া আর কারো নাম তালিকায় উঠবেনা। কিন্তু ভোটের পরে সে প্রতিশ্রæতি রাখেননি।

এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় প্রকৃত শ্রমিকদের ভোটার তালিকায় অন্তভর্‚ক্তির দাবি জানালে একই ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতা লোভী বাবলু।

শ্রমিকরা জানান, ভোটার তালিকা বানানো, তালিকায় নাম দেয়া এবং ছাঁটাই করা একমাত্র তার ইচ্ছাতেই হয়। গঠনতন্ত্র তার কাছে কিছুই না। শ্রমিকরা চায় অশ্রমিকদের বাদ দিয়ে প্রকৃত শ্রমিকদের নিয়ে একটি স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রনয়ন করা, ফ্যাসিস্ট দোসরের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন।

এদিকে ভোমরা বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির পদ ব্যবহার ও তৎকালীন এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবির ছত্র-ছায়ায় থেকে দলীয় প্রভাব বিস্তার করায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। কৌশল করে দীর্ঘ দিন সভাপতি থাকায় শ্রমিক ইউনিয়নে তার একচ্ছত্র আধিপত্য মেনে নিত মুখ বুজে।

২০১৮ সাল পর্যন্ত এ ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত সক্রিয় শ্রমিক হাড়দ্দহা গ্রামের আব্দুল আলীম বলেন, আমি আগের নির্বাচনগুলোতে ভোট দিয়েছি। নিয়মিত মাসিক চাঁদা দেয়ার রশিদ আছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যখন আমি বাবলুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে ঘোষণা দিলাম তার কয়েকদিন পরেই শুনলাম ভোটার তালিকা থেকে আমার নাম কেটে দেয়া হয়েছে। সেসময় আমাকে প্রার্থী তো দূরের কথা, ভোটও দিতে দেয়নি বাবলু। শুনেছি আমার সিরিয়াল নাম্বারে অন্য মানুষের নাম লেখা। মোট কথা, বাবলুর বিরুদ্ধে গেলেই জেডিএলের গঠনতন্ত্র না মেনে তাকে ইউনিয়ন থেকে বাদ দেয়া হয়।

শ্রমিকরা জানান, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর প্রায় ২/৩ মাস বাবলু বন্দরে উঠেনি। পালিয়ে নিজেকে আত্মরক্ষা করেছে। রাজনৈতিক এ পট পরিবর্তনে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সভাপতির চেয়ারে বসে নিজের চেয়ার রক্ষায় বিভিন্ন ষড়যন্ত্র অব্যহত রাখে।

অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ভুক্তভোগী হাসানুজ্জামান বাবলু বলেন, বন্ধুত্বের সম্পর্কের জেরে ব্যবসার পার্টনার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার নিকট থেকে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বাবলু। তবে কিছুদিন তার সাথে রেখে শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য বানায়। পরে অবৈধ ব্যবসার সাথে বাবলুর জড়িত থাকার কথা জানতে পেরে আমি সরে এলে আমাকে টাকা ফেরত না দিয়ে ইউনিয়ন থেকে সরিয়ে দেয়। ইচ্ছামত সদস্য বানানো আর বাদ দেয়া বাবলু একহাতের খেল।

তিনি আরো জানান, প্রশাসনের হাত থেকে বাঁচার জন্য আশরাফুল ইসলাম বাবলু শ্রমিক ইউনিয়নের চেয়ারকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে স্বর্ন চোরাচালান, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, মদ ও গাঁজা ব্যবসা করার অভিযোগ আছে। তার এসব অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে নিতে ভোমরা বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ের এই চেয়ারটা যে কোন মূল্যে তার চাই ই চাই।

সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি: ১৯৬৪/০৯) সভাপতির চেয়ার ব্যবহার করে জিরো থেকে হিরো হয়েছেন হাড়দ্দহা গুচ্ছ গ্রামের আশরাফুল ইসলাম বাবলু। স্বর্ণ চোরাকারবারী এই বাবলু ভোমরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় দলের প্রভাব আর শ্রমিক ইউনিয়নের চেয়ার ব্যবহার করে হয়েছেন কোটিপতি। গাড়ী, বাড়ী থেকে শুরু করে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার জমি। আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর কয়েকমাস পালিয়ে থাকলেও পরিস্তিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এলাকায় ফিরে প্রভাব বিস্তারের পায়তারা চালাচ্ছেন বাবলু।

অবিলম্বে ওই চেয়ার লোভী বাবলুর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক ভোমরা বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি: ১৯৬৪/০৯) সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী শ্রমিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *