পৌর বর্জ্য থেকে তেল ও গ্যাস তৈরী করতে চায় সাতক্ষীরার পীযুষ
স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরার সড়কে, গলিতে, পাড়ায় কিংবা মহল্লায় সর্বত্র ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়ি। দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলা দায়। কেমন হতো যদি এই আবর্জনা থেকে জ্বালানি তেল, বায়োগ্যাস কিংবা জৈবসার উৎপাদন করা যেতো?
তিনবছর গবেষনার পর বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল, পেট্রোলিয়াম গ্যাসসহ সাতটি পন্য উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তিগত ডিজাইন উদ্ভাবন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র পীযুশ দত্ত ও মো: রঞ্জু।
এদের মধ্যে পীযুশ দত্ত সাতক্ষীরা শহরের পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার ছেলে। ভবিষ্যতে সাতক্ষীরা পৌরসভার বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে এসব পন্য তৈরীর ইচ্ছা রয়েছে তার। ইতোমধ্যেই তারা ঢাকায় একটি পাইলট প্ল্যান্ট স্থাপন করে সফলও হয়েছেন।
এ ব্যাপারে পীযুষ দত্ত বলেন, এবিসি কনস্ট্রাকশন কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের আর্থিক সহায়তায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকার মাতুয়াইলে তুষারডাঙা এলাকায় সাত কাঠা জমিতে নিজেদের উদ্ভাবিত ডিজাইনে তৈরী প্ল্যান্ট থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদন শুরু হয়েছে। বর্জ্য সংগ্রহ করে প্রথমে প্ল্যান্টের সেপারেটিং সিস্টেমে দেওয়া হয়। সেখান থেকে প্লাস্টিক, মেটাল এবং কাঠ বা মাটিজাতীয় জিনিস আলাদা করা হয়। প্লাস্টিক আলাদা করে প্রক্রিয়ার পর সেখান থেকে জ্বালানি তেল তৈরী হয়। এছাড়া পচনশীল দ্রব্য থেকে বায়োগ্যাস এবং সার তৈরী হয়। অন্যান্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাক্টিভেটেড কার্বন সহ আরও কয়েকটি পন্য পাওয়া যায়। উৎপাদনকৃত গ্যাস এলপিজি গ্যাস হিসাবে বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায় এছাড়া সিএনজিতেও রূপান্তর করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তৈরী করা পেট্রোল ও ডিজেলের উৎপাদন খরচ হবে লিটারপ্রতি ২৫ টাকার মতো যা আমদানি করা যেকোন জ্বালানি তেলের চেয়ে সস্তা। এছাড়া কেজিপ্রতি মাত্র ৫টাকায় জৈবসার বিক্রি করা যাবে। বর্তমানে বাজারে যা ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। সাতক্ষীরায় এরকম একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করা গেলে ময়লাআবর্জনায় মানুষের দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি এসব পন্য উৎপাদনের জন্য শিল্প গড়ে উঠতো। বর্জ্য থেকে আমরা যে সাত ধরনের পন্য তৈরী করতে পারি তা হলো জ্বালানি তেল(পেট্রোলিয়াম), বায়োগ্যাস, বায়ো ইথানল(উন্নতমানের জ্বালানি তেল), এক্টিভেটেড কার্বন, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, জৈব সার, ড্রাই আইস।
অভিনব এই আবিষ্কার সম্পর্কে আরেক গবেষক মো: রঞ্জু বলেন, আমাদের প্ল্যান্ট থেকে জৈবসার, জ্বালানি তেল, গ্যাস সহ কয়েকটি পন্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া চলছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা আমাদের প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া প্রযুক্তিগত কিছু জিনিস সংযোজন করে এখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করাও সম্ভব। যার প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ পড়বে প্রায় ৬টাকার মতো।
গবেষনাকারী পীযুশ ও রঞ্জু আরও জানিয়েছেন, আমরা শিল্প মন্ত্রনালয় থেকে পেটেন্ট(স্বত্ত্ব) নিয়েছি এবং আইসিটি ডিভিশনে সাবমিট করেছি। আমরা একটি বিজনেস প্ল্যান দাড় করিয়েছি যেখানে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাও অর্থায়ন করতে পারে। এতে পরিবেশকে দূষনের হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়া সম্ভব।
পীযুশ ও রঞ্জুর উপদেষ্টা হিসাবে রয়েছেন ঢাবির ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক তসলিম উর রশিদ, প্রভাষক সাজিদুল ইসলাম ও বাংলাদেশ অ্যাডভান্স রোবটিক্স রিসার্চ সেন্টারের সিইও জিমি মজুমদার।
এই বিষয়ে এবিসি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের সিইও অতনু সমাদ্দার বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখেছি ছাত্রদের তৈরী করা সিস্টেমটি অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব এবং এতে প্রানী বা পরিবেশের কোনরকম ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র গবেষক পীযুষ দত্ত সাতক্ষীরা পৌরসভার বর্জ্য থেকে এসব পন্য তৈরী করতে চান। এজন্য তিনি ও তার দল পরিকল্পনাপত্রটি জমা দিয়েছেন সাতক্ষীরা পৌরসভার দায়িত্বরত কর্মকর্তা মাশরুবা ফেরদৌসের কাছে।
এ ব্যাপারে মাশরুবা জানান, ঢাবির শিক্ষার্থীদের দেওয়া পত্রটি তিনি পেয়েছেন। তবে তা এখনও খুলে দেখা হয়নি। শীঘ্রই এটি নিয়ে যাচাই-বাছাই ও আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।