শ্যামনগরে লিডার্সের উদ্যোগে বিনা চাষে উদ্ভাবনী ফসল উৎপাদনের প্রস্তুতি
মোঃ ইসমাইল হোসেন: শ্যামনগর: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন লিডার্স এর উদ্যোগে বিনা চাষে দ্বিতীয় ফসল উৎপাদনের প্রস্তুতি চলছে। আলু, ডাল, সরিষা, পেজ, রসুন, সূর্যমুখী, গম, ভুট্টা লাগানোর উৎসব মেতে উঠেছে কৃষকগণ। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা পৃথিবীতে খাদ্য উৎপাদন কমেছে, বাড়ছে খাদ্যের সংকট। পূর্বে এক সময়ে আমাদের এই এলাকার ছিল উৎপাদনে পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধশালী এলাকা। সোনার মাটিতে বীজ ফেললে , সোনার ফসল ফলতো। উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার কারণে ফসল উৎপাদনে অনেকাংশ কমে গেছে। ফলে কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকায় সুন্দরবন ও কৃষির উপরে ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়েছে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের অঞ্চলে বিকল্প কৃষি ব্যবস্থা উন্নতির মাধ্যমে টিকে থাকতে পারে এই অঞ্চলের কৃষক ও কৃষি শ্রমজীবী মানুষ। শ্যামনগর উপজেলায় কর্মসংস্থান সংকটের কারণে বড় সংখ্যক কৃষি শ্রমজীবী মানুষ কাজের জন্য বাইরে চলে যেতে হচ্ছে শহরের ইটভাটায় রিক্সা চালানো অথবা প্রতিবেশী রাষ্ট্রে শ্রমজীবন জীবিকায়। উপকূলের কৃষি শ্রমজীবী মানুষ এলাকায় টিকিয়ে রাখতে খাদ্য উৎপাদন এবং কৃষি ব্যবস্থার বিকল্প কোন উপায় সৃষ্টি হচ্ছে না ।
ইতিমধ্যে আমাদের এলাকায় অভিযোজিত কৃষির মাধ্যমে শ্যামনগর উপজেলায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন লিডার্স। এখানে লবণাক্ত এলাকায় দ্বিতীয় ফসল উৎপাদনে অভিযোজিত কৌশলে উদ্বু করে চলেছে সংগঠনটি।
উদ্ভাবনী অভিযোজিত কৃষিতে উপকূলীয় অঞ্চলে ফসল উৎপাদন কৌশলে লিডার্সের টিম লিডার অসিত মন্ডল বলেন।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ খাদ্য চাহিদা মেটাতে মানুষ ফসল উৎপাদনে মাটিকে ইচ্ছাদিমত ব্যবহার করেছে এবং একই জমিতে বছরে একাধিক বার ফসল উৎপাদনের ফলে মাটি তার আপন শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ফলে কৃষক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জমিতে অধিকহারে রাসায়ানিক সার ব্যবহার করছে। ফলোশ্রুতিতে দিনের পরদিন অধিক হারে রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির উর্বর শক্তি হারিয়ে ফেলেছে এবং মাটিতে জৈব উপাদান কমে গেছে। আমরা এখন যতই রাসায়নিক সার দেইনা কেন, ফসল আর আগের মত হচ্ছেনা এখন প্রয়োজন মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করা। এক্ষেত্রে উপকূলের জমির মাটিতে
গাছ নয়, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করি, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করি। উপকুলে উদ্ভাবনী কৌশলে অভিযোজত কৃষিতে খাদ্য চাহিদা মিটাতে পুষ্টিমান সম্পন্ন ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব বহন করছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির কাছে জানতে চাইলে
ইউপি সদস্য নিপা চক্রবর্তী বলেন গত কয়েক বছর ধরে শ্যামনগরের প্রত্যন্ত এলাকায় বিনা চাষে দ্বিতীয় ফসল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এলাকার কৃষকরা। সম্পন্ন জৈব পদ্ধতিতে রাসায়নিক কীটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এলাকার বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন লিডার্স। শ্যামনগর উপজেলায় আমন ধান তোলার পরে বিনা চাষে ফসল উৎপাদনে কৃষকরা ঝুকে পড়েছে।
কৃষাণী মলিনা রানী বলেন আমরা আগে বসত ভিটায় ফসল উৎপাদন করতাম। কিন্তু সেখানে সার কীটনাশক ব্যবহার করতে করতে এখন আর ফসল ভালো হচ্ছে না। ফলে আমাদেরএলাকায় বর্ষা কালীন ফসল উঠে যাওয়ার পরে কৃষি জমিতে আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন সহ গম ভূট্টা, তিল আমরা বিনা চাষে লিডার্সের কৃষি পরামর্শ নিয়ে ফসল উৎপাদন করে আসছি ।
শ্যামনগর উপজেলায় বিনা চাষে যে সকল বীজ প্রদান করা হয়েছে আলু ১১৯৪ কেজি, পেয়াজ ৩০০ কেজি, রসুন ১৪৯ কেজি, সরিষা ১৫০ কেজি সহ কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী শীতকালীন বিভিন্ন সবজির বীজ প্রদান করা হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলায় মুন্সিগঞ্জ বুড়িগোয়ালিনী, ঈশ্বরীপুর কাশিমাড়ী এ সকল কৃষি বীজ প্রদানের মাধ্যমে বিনা চাষে ফসল উৎপাদনে প্রস্তুতি চলছে কৃষকদের মাঝে। এ ছাড়া আশাশুনি ও কয়রাতে ফসলের বীজ প্রদান করা হয়েছে জানান সূত্রটি।
স্বল্প সময়ে, স্বল্প পানিতে ও পানি ব্যবস্থাপনায় মাধ্যমে অধিক ফসল উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পারে উপকূলের কৃষকরা।