সাতক্ষীরা পাউবো-১ এর দূর্ণীতিবাজ কুক শেখ কামরুজ্জামানকে অবশেষে বদলী
স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে কুষ্টিয়ায় বদলী হয়েছে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর দূর্ণীতিবাজ কুক শেখ কামরুজ্জামান। আঞ্চলিক পত্রিকা ‘দৈনিক খুলনা প্রতিদিন’ এ সংবাদ প্রকাশের ১৫ দিন পর সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর শীর্ষ এ দূর্ণীতিবাজ কুক শেখ কামরুজ্জামান (কামরুল)কে অবশেষে কুষ্টিয়ার সেচ সম্প্রসারণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বদলী করা হয়েছে।
রবিবার (৫ জানুয়ারী) বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মচারী পরিদপ্তরের উপ পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) এসএম সরওয়ার জাহান ভূঁঞা স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, বদলির দপ্তরাদেশ জারির তারিখ হতে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর কুক শেখ কামরুজ্জামানকে অব্যাহতি প্রদান করবেন। অন্যথায় পরবর্তী কর্মদিবস হতে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অব্যহতিপ্রাপ্ত বলে গণ্য হবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ অফিসের গাড়ি চালান শেখ কামরুজ্জামান (কামরুল)। গাড়ি চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তার নিয়োগ হয়েছে ‘কুক (বাবুর্চি)’ পদে। তবে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এ কোন কুকের পদ না থাকলেও সাবেক এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবির ক্ষমতাবলে গাড়ী চালকের কাজ অব্যাহত রাখেন তিনি। সাবেক ওই এমপির প্রভাবে বাগিয়ে নেন জাতীয় শ্রমিক লীগের অধিনস্থ ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্রমিক-কর্মচারী লীগের অর্থ সম্পাদকের পদ।
আরো জানা যায়, সাতক্ষীরা পাউবো’র সব ঠিকাদারি কাজ হতো সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর কুক শেখ কামরুজ্জামানের আঙুলের ইশারায়। এমপি রবির অত্যান্ত আস্থাভাজন লোক হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি কামিয়েছে কোটি কোটি টাকা। নামে বেনামে গড়েছেন বিপুল সম্পদ।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেও কামরুল ছিলেন বহাল তবিয়তে। সাতক্ষীরা শহরের বাইপাস রোডে রয়েছে কোটি টাকার সম্পদ। খুলনার সোনাডাঙ্গা আবাসিকে রয়েছে ফ্ল্যাট। সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর ও সিরাজগঞ্জে একাধিক ব্যাংক হিসাব ও ডিপিএস আছে তার স্ত্রী, ভাই, সন্তান, মেয়ে, জামাতা ও নিজ নামে। সাতক্ষীরার প্রধান ডাকঘরেও সঞ্চিত আছে কয়েক লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।
এছাড়া বেশ কয়েকটি মালবাহী ট্রাক ও প্রাইভেট কারেরও মালিক তিনি। সিরাজগঞ্জ জেলার বাসিন্দা কামরুল চাকরির সুবাদে স্থায়ী হয়েছেন সাতক্ষীরার ইটাগাছা এলাকায়। স্থানীয় আ’লীগ নেতাদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ করেন সাতক্ষীরা পাউবো-১ এর যাবতীয় ঠিকাদারি কার্যক্রম। আ’লীগের সাবেক এমপির আস্থাভাজন হওয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলীরাও তাকে ব্যবহার করেছেন সব কাজে। এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের স্ত্রী, ছেলে ও ভাইয়ের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে ওপেন ঠিকাদারি কাজ করেন তিনি। তার ঠিকাদারি লাইসেন্সের নাম ‘মেসার্স রাফিদ এন্টারপ্রাইজ’। রাফিদ তার ছেলের নাম।
অভিযোগ রয়েছে, সাতক্ষীরা পাউবো ১-এর সাবেক দূর্ণীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়েরসহ ৬ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন কুক কামরুল।
সরকারী কর্মচারী বা তার পরিবারের সদস্যদের নামে কোন ঠিকাদারী লাইসেন্স থাকার নিয়ম না থাকলেও আবুল খায়ের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালীন সময়ে কুক কামরুজ্জামান নিজের ছেলের নামে করা লাইসেন্সে হাতিয়ে নিয়েছিলে ২০০ টির বেশী কার্যাদেশ। সেই সকল কার্যাদেশের কাজ করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
পাউবোর শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক যুগেরও বেশী সময় ধরে নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়িচালক হিসেবে কাজ করায় অফিসের সব তথ্য জেনে যেতেন কুক কামরুজ্জামান। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীদের কাছ থেকে জরুরি বাঁধ মেরামতের নামে শতাধিক কাজ বাগিয়ে নিয়ে হাতিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ পেয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী বর্তমানে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. আবুল খায়েরের সময়ে। শুধু জরুরি বাঁধ মেরামতই নয়, পরিবারের সদস্যদের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে সেসব লাইসেন্সের বিপরীতে বাগিয়েছেন বেশ কিছু বড় বাজেটের কাজ। বর্তমানে সাতক্ষীরা শহরের ওয়াপদার মোড় হতে পশ্চিম দিকে ইটাগাছা এলাকায় কোটি টাকার আলিশান বাড়ি আছে তার। তার নিয়োগকৃত কুকের কোনো পদ না থাকলেও নিয়মিত এ অফিস থেকে বেতন নিচ্ছেন তিনি। আবার অফিসে নিয়মিত কোনো গাড়িচালকের পদায়ন হলেও তারা টিকতে পারেননি কামরুলের অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে।
আরো জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এ গাড়ি চালকের পদটি তিন বছর যাবত শূন্য থাকার পরেও হেড অফিসে গাড়ি চালকের জন্য কোনো চাহিদা পাঠাতেননা সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের ও তার নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দীন। কারন দুর্নীতিবাজ কুক কামরুজ্জামানকে দিয়ে গাড়ি চালানো আর তাকে ব্যবহার করে কোটি টাকা কামানোই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।