কালিগঞ্জে ভ্রাম্যমান আদালত চলাকালীন হামলা, মূল হোতাদের নাম বাদ দিয়ে মামলা
তাপস কুমার ঘোষ, কালিগঞ্জ: বারবার নোটিশ,নিষেধ অমান্য করে কালিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখিয়ে রাতারাতি নির্মিত অবৈধ স্থাপনা অপসারণে সময় ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি )কর্মচারীদের উপর হামলার নির্দেশ দাতা, নেতৃত্বদানকারী সাইদুর বস্ত্রালয়ের মালিকদের নামে মামলা না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নাজিমগঞ্জ বাজারের সরকারি খাস পেরি পেরি ভুক্ত জায়গায় অবৈধ স্থাপনার ছাদ অপসারণ করতে গেলে গত ৩ নভেম্বর সকাল ১০ টার দিকে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস এবং তার কর্মচারীদের উপর সাইদুর বস্ত্রালয়ের মালিক সাইদুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম এবং মনিরুল ইসলামের নির্দেশে ও নেতৃত্বে হামলা মারপিট লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে।
উক্ত ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বসন্তপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী তহশীলদার মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর কালিগঞ্জ থানায় অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে মামলা হলেও মূল হামলাকারী সাইদুল বস্ত্রালয়ের মালিক ৩ সহোদরকে বাদ দিয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া মারপিট জখমের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করে । উক্ত মামলায় ২ ব্যবসায়ী ও সাইদুর বস্ত্রালয়ের ১ কর্মচারীকে আটক করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ । বর্তমান তারা জেল হাজতে থাকলেও মূল হোতারা রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে ধরাছোঁয়ার বাহিরে ।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার ভূমি ) অমিত কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান ওই ৩ জন মাফ চাওয়ায় তাদের নামে মামলা দেওয়া হয়নি। রহস্যজনক কারণে মূল হোতাদের মাফ করার সুযোগ দিলেও অন্যান্য অপরাধীদের কেন সুযোগ দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর মেলেনি।
কালিগঞ্জ উপজেলার উজয়মারি গ্রামের সুরত আলী মোড়লের পুত্র সাইদুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম এবং মনিরুল ইসলাম ৩ ভাই মিলে নাজিমগঞ্জ বাজারের সরকারি পেরিভুক্ত প্রায় ৩ বিঘা সরকারি খাস জমি কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়া জোরপূর্বক দখল করে অবৈধ দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে সাইদুর বস্ত্রালয় নামে একটি কাপড়ের দোকান পরিচালনা এবং অবৈধভাবে বাসভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে আসছিল । এর পরেও আরো কিছু সরকারি পেরিফেরিভুক্ত খাস জায়গায় পুনরায় অবৈধ স্থাপনা তৈরি করতে গেলে স্থানীয় বসন্তপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বাধা দেয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিজে যে স্থাপনার কাজ করতে নিষেধ করে। নিষেধ অমান্য করায় সহকারী কমিশনার ভূমি অমিত কুমার বিশ্বাস স্বাক্ষরিত গত ১৫ অক্টোবর ১৫৪০ নং স্মারকে এবং গত ২১ নভেম্বর ১৬০৯ নং স্মারকে নোটিশ দিয়ে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
উক্ত নির্দেশ উপেক্ষা করলে গত ৩ ডিসেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি ) ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার বিশ্বাস ও তার অফিসের কর্মচারী ও পুলিশ ফোর্স নিয়ে অবৈধ স্থাপনা ভাঙতে গেলে সাইদুর বস্ত্রালয়ের মালিক সাইদুল ইসলাম ,সিরাজুল ইসলাম, মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে ভাঙতে বাধা দেওয়া সহ এসিল্যান্ড ও তার কর্মচারীদের উপর হামলা মারপিট করে ২ কর্মচারীকে জখম করে হাসপাতালে পাঠায় ।
ঘটনার পরপরই উপজেলা পরিষদের সামনে শতশত লোকজন জড়ো করে দেড় কোটি টাকা লুটপাট ও ১০ টি তালা ভাঙার অভিযোগ এনে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত বিশ্বাসের অপসারণ দাবি করে ।পরদিন ৪ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডলের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট সাহা এবং থানার অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমান ঘটনাস্থলে যেয়ে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করেন । ওই সময় বাজারে জনসমক্ষে তিন ভাই ক্ষমা চেয়ে রেহাই পায় ।
উক্ত ক্ষমায় মূল হোতারা রেহাই পেলেও তার কাজে সহায়তা করায় চুনাপুটিরা এবং দিনমজুররা এখন মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ।অজ্ঞাত আসামী হিসাবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে ।
এ অবস্থায় স্থানীয় সচেতন মহলের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।