অনলাইনঅপরাধকালিগঞ্জলিডশিক্ষাঙ্গনসাতক্ষীরা জেলা

কালিগঞ্জে স্কুল ছাত্রী অপহরণ, মামলা হলেও আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

স্টাফ রিপোর্টার: বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে দশম শ্রেণীর স্কুলছাত্রীকে জোরপূর্বক প্রাইভেট কার যোগে অপহরণ করে অস্ত্রের মুখে বিয়ের নাটক সাজিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনায় প্রেমিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী ইব্রাহীম ও তার সহযোগী যমুনা ক্লিনিক মালিক কথিত ডাঃ শরিফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও রয়েছে পুলিশের ধোরা ছোঁয়ার বাইরে।

বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে গত ১৩ ডিসেম্বর অপহৃতা স্কুল ছাত্রী নিজে বাদী হয়ে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী ২০০৩) এর ৯(১)/৩০ ধর্ষণও সহায়তা করার অপরাধের দণ্ডবিধিতে ১ টি মামলা দায়ের করলেও ১ সপ্তাহে পুলিশ কোন আসামিকে আটক না করায় উল্টো বাদীকে প্রতিনিয়ত মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি ধমকি দিয়ে চলেছে।

মামলার আসামিরা হলো উপজেলার শিতলপুর গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য শেখ আবদুল্লাহর পুত্র সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী প্রেমিক শেখ ইব্রাহিম খলিল (২৪ ) ছনকা গ্রামের শেখ আব্দুর রহমানের পুত্র যমুনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক কথিত ডাক্তার শেখ শরিফুল ইসলাম (৪৫), তার তৃতীয় স্ত্রী আসমা খাতুন, (৩২) জাফর ইকবালের পুত্র হাবিবুল্লাহ (২১), চরদহা গ্রামের শেখ আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র শাহাদাত হোসেন (২৪ ) এবং সাতক্ষীরা সদর থানার বকচরা পূর্ব পাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার মোল্লার পুত্র ম্যারেজ রেজিস্টার হোসাইন আলী। মামলার সূত্র থেকে জানা যায় কালীগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের ছনকা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রাণী সম্পদ উপ-সহকারী কর্মকর্তা ডাঃ আমিরুল ইসলামের কন্যা (আনজুয়ারা ছদ্মনাম) কালিগঞ্জ সদরে পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এর দশম শ্রেণীর ছাত্রী।

বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার পথে উপজেলা পরিষদের সামনে শীতলপুর গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য আব্দুল্লাহ পুত্র সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী বখাটে ইব্রাহিম খলিল প্রায় উত্ত্যক্ত ও প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বিষয়টি স্কুল ছাত্রী তার বাবা মাকে জানালে বাবা মা প্রেমিক ইব্রাহিম খলিলের পরিবারের নিকট প্রতিবাদ করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইব্রাহিম ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে বিয়ে করার হুমকি দিতে থাকে। তার ধারাবাহিকতায় পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে গত ১৬ জুন বিকাল আনুমানিক ৩ টার সময় কালিগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিত্যানন্দ স্যারের নিকট প্রাইভেট পড়তে আসে। ওই সময় রাস্তার পাশে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা একটি প্রাইভেট কার অপেক্ষা করছিল। নিত্যানন্দ স্যারের বাড়ির পাশে আসামাত্রই প্রাইভেট কারের মধ্যে থেকে ইব্রাহিম ও তার সহযোগীরা স্কুল ছাত্রী(আনজুয়ারার ছদ্মনাম)ভ্যানের গতি রোধ করে জোরপূর্বক মুখ চেপে ধরে প্রাইভেটকারের মধ্যে উঠাইয়া নেয়। ওই সময় সে দেখতে পায় গাড়ির ড্রাইভিং সিটে চালকের আসনে ক্লিনিক মালিক শরিফুল ইসলাম এবং পাশের সিটে তার স্ত্রী আসমা খাতুন বসা আছে।

এরপর প্রাইভেট কার সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে দ্রুত যাত্রা করে সন্ধ্যার দিকে সাতক্ষীরা সদর থানার পূর্ব বকচরা গ্রামের কথিত ম্যারেজ রেজিস্টার হাসান আলীর বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গলায় অস্ত্র ধরে ওই ছাত্রীর নিকট থেকে দুটি নীল কাগজে স্বাক্ষর করে নেয় প্রেমিক ইব্রাহিম ও তার সহযোগীরা। প্রেমিক ইব্রাহিম খলিল, শরিফুল ইসলাম ও আসমা খাতুন প্রাইভেট কারের মধ্যে তুলে কালীগঞ্জে উপজেলা পরিষদের সামনে প্রেমিক ইব্রাহিমের বাড়িতে নিয়ে আটকে রেখে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতে থাকে ।

স্কুল ছাত্রীর খোঁজ না পেয়ে জনৈক এক ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারে তার মেয়েকে অপহরণ করে জোরপূর্বক বিয়ে করে প্রেমিক ইব্রাহিমের বাড়িতে আটকে রেখেছে। তাদের বিয়ের যাবতীয় সহযোগিতা ও সাক্ষী হিসেবে হাবিবুল্লাহ এবং শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষর করেছে। ম্যারেজ রেজিস্টার হোসাইন স্বাক্ষর করেছেন। বিষয়টি নিয়ে স্কুল ছাত্রীর বাবা ও স্বজনরা ইব্রাহিম খলিলের বাবা-মাকে চাপ প্রয়োগ করলে শর্ত সাপেক্ষে অপরহ্নত স্কুলছাত্রীকে তার মা বাবার হাতে তুলে দেয়।

ওই সময় বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা করতে না পারায় ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রী বাদী হয়ে গত ২৪ নভেম্বর সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে উপরে উল্লেখিত ধারায় পিটিশন ৬১৭/২৪ নং মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় বিচারক মাহফুজা পারভিন মামলাটি এফ, আই ,আর হিসাবে গণ্য করে আগামী ২০ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলীর জন্য কালিগঞ্জ থানা কে নির্দেশ দেন। ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর বাবা আমিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান গত ১ সপ্তাহ যাবত মামলা রেকর্ড হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো আসামি না আটক করায় মামলা তুলে নেওয়ার জন্য উল্টো হুমকি ,ধামকি দিয়ে চলেছে।

এ ব্যাপারে ক্লিনিক মালিক শরিফুল ইসলাম জানান ওই স্কুল ছাত্রীর পিতার বিরুদ্ধে আমার স্ত্রীর দায়ের করা ধর্ষণ প্রচেষ্টা মামলা থেকে বাঁচতে পরিকল্পিতভাবে নিজের মেয়েকে দিয়ে এই হয়রানি মূলক মিথ্যা অপহরণ ও ধর্ষণ নাটক সাজিয়ে মামলা দায়ের করিয়েছে।

বিষয়টি সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে তিনি জানান।বিষয়টি নিয়ে এখন কালিগঞ্জ উপজেলা সদরে বিভিন্ন চায়ের দোকানে মুখরোচক আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়েই চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *