কানের দুল ছিনতাই করতে শি/শু রাহীকে হত্যা করে জনি
স্টাফ রিপোর্টার: আশাশুনির চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী নুসরাত জাহান রাহিকে হাত, পা বেঁধে ও গলায় গেঞ্জি পেঁচিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি রেজোয়ান কবির জনিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার রেজোয়ান কবির জনি (২২) আশাশুনি উপজেলার আগরদাঁড়ি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক সরদারের ছেলে। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে হাত-পা বাধা অবস্থায় বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি পুকুর থেকে নুসরাত জাহান রাহির মরদেহ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। ভিকটিম নূসরাত জাহান রাহি (৯) আশাশুনি উপজেলার আগরদাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেনীর ছাত্রী। তার পিতার নাম মোঃ রবিউল ইসলাম।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশাশুনি থানার এসআই ফয়সাল বলেন, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আগরদাড়ি গ্রামের রবিউল ইসলামের ৯ বছরের শিশু কন্যা নুসরাত জাহান রাহিকে শনিবার সকাল থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। বাড়ীর স্বজনরা তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নেওয়ার পর এক পর্যায়ে দুপুর ২ টার দিকে বাড়ীর পাশ্ববর্তী সোলাইমান আজিজের পুকুরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তার মরদেহ ভাসতে দেখতে পায়। পরে সেখান থেকে এলাকাবাসীর সহায়তায় রাহির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় রাহির বাবা বাদী হয়ে আশাশুনি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আশাশুনি থানার মামলা নং-০৪, তারিখ-১৫/১২/২০২৪ খ্রি., ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও খোঁজ খবর নিয়ে রবিবার ভোর রাতে মামলার প্রধান আসামি রেজোয়ান কবির জনিকে তার বাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের প্রাথমিক জিঙ্গাসাবাদে বখাটে রেজোয়ান কবির জনি হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
পুলিশ জানায়, আসামী মোঃ রেজোয়ান কবির জনি (২২) এর সম্পর্কে আসামীর প্রতিবেশী ভাতিজি। আসামী জনি ইতিপূর্বে ঢাকার একটি লিফট কোম্পানীতে চাকুরী করতো। চাকুরী করা কালীন একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে ০৯ (নয়) মাস আগে বিয়ে করে। বিগত ৪/৫ মাস আগে আসামীর চাকরী চলে যাওয়ায় সে ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসে। আসামীর চাকুরী না থাকার কারণে সে অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগতেছিল এবং নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তার পিতার নিকট বিভিন্ন সময় টাকা চেয়ে না পেয়ে সে বিকল্প চিন্তা করে। তখন তার ভিকটিম নুসরাত জাহান রাহি’র কানে থাকা স্বর্ণের এক জোড়া রিং এর কথা মনে পড়ে। ভিকটিম নুসরাত জাহান রাহি তার বান্ধবী মিতা বসু (০৮) এর বাড়ীর সামনে খেলা করছিল। সে সময় আসামী ভিকটিমকে মোড়ে যাওয়ার নাম করে ডাক দিয়ে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে যাওয়ার সময় মাওলানা মোঃ সোলাইমান আজিজীর পুকুরের পাশে যেয়ে আসামী ভিকটিমকে বলে চলো আমরা হলুদ তুলতে যাই। তারপর হলুদ ক্ষেতে গিয়ে ভিকটিমের কানে থাকা স্বর্ণের রিং জোড়া হাত দিয়ে খুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। ভিকটিম স্বর্ণের রিং জোড়া দিতে অস্বীকার করে এবং বাড়ীতে গিয়ে বাবা-মাকে বলে দিতে চায়। একপর্যায়ে আসামী মোঃ রেজোয়ান কবির জনি ভিকটিম নূসরাত জাহান রাহির কানে থাকা স্বর্ণের কানের রিং জোড়া জোরপূর্বক খুলে নেয় এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপরে ভিকটিমের লাশটা যেন কেউ খুজে না পায় তার জন্য ভিকটিমের গায়ে থাকা গেঞ্জি ছিড়ে হাত এবং পা বেধে হলুদ ক্ষেতের পাশে পুকুরের মধ্যে ফেলে দেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জনি জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই স্কুল ছাত্রীর স্বর্ণের কানের দুল ছিনতাই করার জন্য চেষ্টা করছিল জনি। শনিবার তাকে একা পেয়ে একটি হলুদ খেতে নিয়ে তার কানের দুল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় স্কুলছাত্রী রাহি আত্মচিৎকার করার চেষ্টা করলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে হাত-পা বেঁধে পুকুরে ফেলে দেয়।
আশাশুনি থানার ওসি নজরুল ইসলাম বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামী রেজোয়ান কবির জনিকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে স্বর্ণের দুলের জন্য শিশু রাহীকে হত্যা করা হয়েছে সে স্বীকার করেছে। তাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।’