ডুমুরিয়ায় গাছের ডাল বিক্রি: মরে যাচ্ছে গাছ, ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি
ডুমুরিয়া প্রতিনিধি: ভাইরাস আক্রান্ত শিরিষ গাছের ডাল বিক্রির গুজবে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছ ও পরিবেশ। চড়া দামে চোরকাবারকারীদের কাছে ভাইরাস আক্রান্ত গাছের ডাল বিক্রির গুজবে এ অঞ্চলের নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষ এখন দিনপাত করছেন রোগাক্রান্ত শিশু গাছের ডাল সংগ্রহ করতে। ব্যক্তি মালিকানার গাছ বিক্রি হলেও এবার খোদ ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের গাছও রেহাই পায়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এক কর্মচারী চড়াদামে বিক্রি করেছেন শিরিষ গাছের ডাল।
জানা গেছে, খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় কতিপয় চোরকারবারি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিরিষ গাছের রোগাক্রান্ত ডাল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এরকম লাভের আশায় সর্বত্র ডাল কিনে ডালের শেষ প্রান্তে ছত্রাক আক্রান্ত অংশটুকু সংগ্রহ করতে গিয়ে গাছের বড় অংশও কেটে নিচ্ছে। বড় গাছের ডাল কাটা পড়ায় একসময়ে পরিবেশ রক্ষাকারি এসব বড় বড় গাছ মরে যাচ্ছে। ডাল ক্রেতারা সহজে ভাইরাসের অংশ সংগ্রহ করতে গিয়ে বড় বড় ডাল কেটে ফেলেছেন। ভাইরাস সংগ্রহকারিরা ছোট অংশটুকু নিযে গেলেও ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের কর্মচারী মো. সেলিম শিকদার বড় অংশটুকু তার সরকারি বাসভবন উপজেলা ক্যাম্পাসের মল্লিকার সামনে স্তুপিকৃত করে রেখেছেন নিজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে। তবে কেউ কেউ বলছেন এটি সেলিম শিকদার জ্বালানি হিসেবে বিক্রির জন্য রেখে দিয়েছেন। মো. সেলিম শিকদার ডুমুরিয়া উপজেলায় প্রায় ৫ বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন। অনেকেই বদলি হলেও তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
মঙ্গলবার খুলনা উপজেলা ক্যাম্পাসের বড় বড় কয়েকটি শিরিষ গাছের ডাল বিক্রি করে দিয়েছেন। এ গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে গাছের ডাল বিক্রি করেছেন ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের কর্মচারী মো. সেলিম শিকদার। যদিও এ বিষয়ে মো. সেলিম শিকদার বলেন, ইউএনও স্যারের সাথে সিএ কথা বলে মৌখিক অনুমতি নিয়েছেন। তাই ২৫ হাজার টাকায় ডাল বিক্রি করা হয়েছে। তবে বড় বড় ডাল কেটে নিজের বাসার সামনে কেন রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
স্থানীয়রা জানান, শিশু গাছের এই রোগ বা ভাইরাস পোকাকে লাক্ষা বলা হয়। এই লাক্ষা আক্রান্ত ডাল একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা চড়া দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে বলছেন লাক্ষা আক্রান্ত ডালের কেজি চোরাবাজারে হাজারের উপরে বিক্রি হয়।
বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, রোগাক্রান্ত ডালের উপরের আঠা তুলে দেশের বাইরে পাচার করা হচ্ছে। এই আঠা অত্যন্ত মূল্যবান। এটা দিয়ে কাঠের আসবাবপত্র ও পিতল বার্নিশ করা, ওষুধের ক্যাপসুলের কোটিং, চকলেট ও চুইংগামের কোটিং, ডাকঘরের চিঠি বা পার্সেল সিলমোহর, পুতুল, খেলনা, টিস্যূ পেপার তৈরিসহ নানা ধরনের কাজে লাক্ষা পোকার আঠা ব্যবহার করা হয়।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, লাক্ষার আক্রমণে কোন গাছ মারা যায় না। লাক্ষা এক ধরনের ক্ষুদ্র পোকা। এ পোকার ত্বকের নিচে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা এক প্রকার গ্রন্থি থেকে আঠালো রস নিঃসৃত হয়, যা ক্রমশ শক্ত ও পুরু হয়ে শিশু গাছের ডালকে আচ্ছাদিত করে ফেলে। ভাইরাসের আক্রমন থেকে গাছকে রক্ষা করতে ভাইরাস সংক্রমণকারী পোকা দমন করতে ইমিক্লোরোফিড গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করলে পোকা মারা যায়। তিনি বলেন, ভাইরাস আক্রান্ত ডাল সংগ্রহের নামে বড় বড় ডাল কেটে ফেলানোর কারণে বড় গাছটিও মারা যেতে পারে।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো. আল আমিন জানান, গাছের ডাল বিক্রির টাকা উপজেলা পরিষদের মসজিদে দান করা হয়। তবে ডাল কাটলে গাছের ক্ষতি হতে পারে এমন বিষযটি আমার জানা নেই।