বুশরা বিবি কারামুক্ত, ইমরান খান কী মুক্তি পাবেন!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে বনি গালা ভবনের বাইরে গতকাল বৃহস্পতিবার শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। পাকিস্তানের কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবিকে স্বাগত জানাতে তাঁরা জমায়েত হয়েছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ৯ মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন বুশরা।
গত জানুয়ারিতে রাষ্ট্রীয় উপহারসামগ্রী অবৈধভাবে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে এক মামলায় গ্রেপ্তার হন বুশরা বিবি। গত বুধবার তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়।
কারামুক্তির পর একটি গাড়িবহর বুশরাকে নিয়ে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেল থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশে রওনা দেয়। এ সময় সমর্থকেরা তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ফুল ছিটিয়ে দেন।
১৪ কোটি রুপির বেশি মূল্যের রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে গত জানুয়ারিতে বুশরা বিবি এবং ইমরান খানকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ইমরান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে রাষ্ট্রীয় কোষাগার বা তোশাখানা থেকে উপহারগুলো বিক্রি করেছিলেন তাঁরা।
এর পর পরই কর্তৃপক্ষ এই দম্পতির বিরুদ্ধে আরেকটি তোশাখানা মামলা করে। এই ধাপের অভিযোগটি বুশরা বিবিকে সৌদি যুবরাজের গয়নার সেট উপহার দেওয়াসংক্রান্ত।
পাকিস্তানের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো অভিযোগ করেছে, ইমরান এবং বুশরা অবৈধভাবে গয়না সেটটি নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছিলেন এবং পরে ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বেশি দামে তা বিক্রি করেছেন।
সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান এখনো কারাগারে আছেন। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ইমরানের দাবি, তাঁকে কারারুদ্ধ করে রাখার জন্য সরকার এবং ক্ষমতাশালী পক্ষ অপপ্রচার চালাচ্ছে।
যে সপ্তাহে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বিতর্কিত সাংবিধানিক সংশোধনী পাস হলো, ওই একই সপ্তাহেই মুক্তি পেলেন বুশরা বিবি। ওই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তনের পাশাপাশি শীর্ষ বিচারপতিদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের ক্ষমতা আরও বেড়েছে।
ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) এই সংশোধনীর বিরোধিতা করেছে এবং দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে।
গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, সংশোধনীতে পিটিআইর সমর্থন দেওয়ার শর্তে বুশরাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বুশরা বিবির মুক্তি নিশ্চিত করতে পিটিআই পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। তবে পিটিআই প্রধান গহর আলী খান সে গুঞ্জন নাকচ করে দিয়েছেন।
রাওয়ালপিন্ডিতে আদিয়ালা কারাগারের বাইরে সাংবাদিকদের গহর আলী খান বলেন, আমাদের যদি তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তিই করতে হতো, তাহলে তো ৯ মাস ধরে বিবিকে (বুশরা) এবং ১৬ মাস ধরে খানকে (ইমরান) কারাগারে থাকতে হতো না।
খানের ওপর চাপ তৈরি করতেই তাঁকে (বুশরা) কারাগারে রাখা হয়েছিল। তবে খোদার ইচ্ছায় শিগগিরই তিনি (ইমরান) মুক্তি পাবেন। আর তা আইনি প্রক্রিয়াতেই হবে, কোনো চুক্তির মধ্য দিয়ে নয়।
ইমরান খানের মুক্তির ব্যাপারে গহর আলী খানের মতো করেই আশাবাদ জানিয়েছেন ইমরানের আইনজীবী দলের সদস্য নাইম হায়দার পানজুথা।
আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘তাঁদের (ইমরান ও বুশরা) বিরুদ্ধে একই অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সুতরাং এই মামলায় ইমরান খানকে কারাগারে রাখার কোনো কারণ নেই। তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোনো রায় ঝুলে নেই। ৯ মে–সংক্রান্ত কিছু মামলা আছে। আমাদের আশা, এগুলোতে জামিন নিয়ে তাঁর মুক্তি নিশ্চিত করতে পারব।’
গত বছরের ৯ মে অল্প সময়ের জন্য ইমরান খানকে আটক করা হয়েছিল। এতে পিটিআই সমর্থকেরা দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের একপর্যায়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ভবন ও সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়। একে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ১০০ জনকে সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।
ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং পিটিআই নেতা সাইদ জুলফি বুখারিও আশাবাদ জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিগগির মুক্তি পেতে পারেন।
বুখারি আল-জাজিরাকে বলেন, স্ত্রীর মতো করেই তাঁকে অবৈধভাবে কারাগারে রাখা হয়েছে। কোনো চুক্তি করে এ মুক্তি (বুশরার মুক্তি) নিশ্চিত করা হয়নি। বরং আদালতে তাঁর আইনজীবীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে এমনটা সম্ভব হয়েছে। আর ইমরান খানের মুক্তির জন্যও আমরা একই করব। পাশাপাশি তাঁর মুক্তির দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ করব।
রাজনীতি বিশ্লেষক জাইগাম খানের ধারণা, পিটিআই-এর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে ‘রাজনৈতিক হিসাব কষে’ বুশরা বিবিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ইমরানকে নিয়ে দলের ভেতর কোনো বিরোধ না থাকলেও, দলের অন্য নেতারা বিভিন্ন উপদল বা অংশে ভাগ হয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।
জাইগাম খান আল–জাজিরাকে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুরের শাসনাধীন খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ একটি ক্ষমতাকেন্দ্র। আরেকটি অংশ দলের মহাসচিব সালমান আকরাম রাজার অনুগত। তবে বিবি (বুশরা) নিজের জায়গা থেকে খুব শক্তিশালী। খান তাঁকে পুরোপুরি ভরসা করেন। স্বাভাবিকভাবে দলের অনেকেই তাঁর প্রতি অনুগত।
রাজনীতি বিশ্লেষক মুনিব ফারুক আল–জাজিরাকে বলেন, বিবির বিরুদ্ধে মামলাগুলোর কোনো ভিত্তি ছিল না। তিনি আগে অন্য মামলাগুলোতে খালাস ও জামিন পেয়েছেন। এ মামলাটিও দুর্বল ছিল। সুতরাং তাঁকে জেলে আটকে রাখার কোনো মানে ছিল না।
সূত্র: আল জাজিরা।