কলারোয়াকৃষিসাতক্ষীরা জেলা

তালা – কলারোয়া উপজেলার লবণাক্ত ও অনাবাদি জমিতে চাষ হবে লাভজনক সূর্যমুখী

কলারোয়া প্রতিনিধি: ‘আমন ধান চাষের পর যে সকল জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যায়। বৃথা পরিশ্রম হবে ভেবে কৃষকরা চাষাবাদের চেষ্টাও করেন না। তবে এসব পতিত জমিতে খুবই সম্ভাবনাময় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে কম খরচে অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হবেন কৃষকেরা।’

এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সূর্যমনি প্রকল্পের (SuRJaMoNI Project ) অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূর্যমনি প্রকল্প ( SuRJaMoNI Project ) সূত্রে জানা গেছে, কেয়ার বাংলাদেশ এইচএসবিসি ব্যাংক এর আর্থিক সহায়তায় অভিযোজিত কৃষি অনুশীলন (adaptive agricultural practices), বাজার – ভিত্তিক পদ্ধতি (market-based approaches) এবং সবুজ উদ্ভাবনী (green innovative) কৃষি যান্ত্রীকরণ পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষকদের স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে “Developing Sunflower value chain for sustainable farm household income at the Southwest coastal region of Bangladesh” শীর্ষক পরিকল্পটি তৈরি করেছেন।

মঙ্গলবার ( ১৫ই অক্টোবর ) সকাল দশটায় উপজেলা নির্বাহী অফিসের কনফারেন্স রুমে সূর্যমুখী প্রকল্প অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৃষকদের অনাবাদি ও লবণাক্ত জমিতে সূর্যমুখীসহ লাভজনক চাষাবাদ এর পরামর্শ দিয়ে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: জহুরুল ইসলাম। এই প্রকল্পটি HSBC ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে কেয়ার বাংলাদেশ CARE BANGLADESH.

কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শুভ্রাংশু শেখর দাস এর সভাপতিত্বে প্রকল্পের সারসংক্ষেপ, সুবিধাভোগী লক্ষ্যমাত্রা, প্রকল্পের অবস্থান, প্রকল্পের উদ্দেশ্য, প্রকল্পের সুযোগ, মূল কর্মক্ষেত্র ও প্রত্যাশিত ফলাফল সহ প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তার আলোচনা করেন বিশেষ অতিথি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, গ্রিন ইনোভেশন হিউম্যানিটারিয়ান এন্ড ক্লাইমেট একশন প্রোগ্রাম, মোঃ আবিদ উল কবির।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি সহ সকলের মতামত ও পরামর্শ শুনে তিনি বলেন, সাতক্ষীরা জেলার তালা ও কলারোয়া উপজেলায় আমন ধান চাষের পর যে সকল জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যায়। অন্য কোন ফসলে চাষ করেও কৃষকরা লাভবান হতে পারেন না সেই সকল জমি সূর্যমুখী তেল চাষের জন্য খুবই উপযোগী । এজন্য উপজেলার যে সকল অঞ্চলে সূর্যমুখী চাষাবাদ করা যাবে আমরা ইতিমধ্যে জরিপ করেছি গবেষণা করেছি কৃষকরা যদি আমাদেরকে সহযোগিতা করেন তাহলে অবশ্যই এই সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য যে গবেষণা প্রয়োজন, উৎপাদন বৃদ্ধি, বাজার ব্যবস্থাপনা করা, প্রক্রিয়াকরণ ও যে সকল যান্ত্রীকরণ দরকার সকল ধরনের সুবিধা দিয়ে কৃষকদের পাশে আমরা থাকতে চাই। প্রকল্পের লক্ষ্য উচ্চমূল্যের ফসল প্রবর্তন, ধান ভিত্তিক শস্যবিন্যাসকে পরিপূরক করে এবং বাজার এর সাথে সংযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে সূর্যমুখীর ভেল্যু চেইন শক্তিশালী করা।

এ প্রকল্পের মূল কর্মক্ষেত্রের বিষয়ে আলোচনা করে প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রোডাকশন এন্ড ভেল্যু চেইন, সূর্যমনি প্রজেক্ট, হিউম্যানিটারিয়ান এন্ড ক্লাইমেট একশন প্রোগ্রাম মোঃ শাহাবুদ্দিন শিহাব বলেন,

এ প্রকল্পের মূল কর্মক্ষেত্র:
১.গবেষণা: সূর্যমুখী ভ্যালু চেইনের সম্ভাবনা এবং চাহিদা চিহ্নিত করা।

২.উৎপাদন বৃদ্ধি; এক হাজার থেকে ১২০০ বিঘা পতিত বা কম উৎপাদনশীল জমিতে একটি নতুন ফসল সূর্যমুখী প্রবর্তন করা হবে। অভিযোজিত প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেমন সূর্যমুখীর জন্য ড্রিপ সেচের ব্যবহার; লবণাক্ত সহনশীল জাত ব্যবহার ও লাইনে বীজ বপন। বাসা বাড়িতে সবজির উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন অভিযোজিত প্রযুক্তি মাচা, বস্তা বাগান, বোতল ড্রিংস, ভার্মি কম্পোস্টিং, ফেরোমন ফাঁদ ইত্যাদি প্রবর্তন করা। অভিযোজিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ৫ থেকে ১০ % উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

৩. বাজার সংযোগ: স্থানীয় পর্যায়ে বাজারের সাথে কৃষকদের সংযুক্তির মাধ্যমে সূর্যমুখী ভেল্যু চেইন তৈরি করা। সূর্যমুখী চাষীদের বার্ষিক আয় ৩ থেকে ৫ গুণ বৃদ্ধি করা।

৪. প্রক্রিয়াকরণ এবং যান্ত্রিকরণ: শ্রমিক খরচ কমানো এবং ২৫% পর্যন্ত ফসল কর্তন পরবর্তী ক্ষতি কমাতে সূর্যমুখী থ্রেসার মেশিন প্রবর্তন করা। ২০% পর্যন্ত লাভ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সূর্যমুখী শস্য সংরক্ষণের জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে আধুনিক শস্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।

এছাড়াও এই প্রকল্পের কৃষকদের কৃষিতে উন্নতি করনের মধ্য দিয়ে কৃষকদের নিরাপদ ও উচ্চ ফলনশীল ফসল চাষাবাদের মধ্য দিয়ে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে এজন্য স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষকদের সহযোগিতা পেলে অবশ্যই লবণাক্ত ও অনাবাদি জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে বলে ধারণা করছে সুধীমহল।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ মন্ডল, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা এস এম এ সোহেল সহ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বৃন্দ, কৃষক , কীটনাশক ডিলার, সার বীজ ডিলার, এবং বিভিন্ন উদ্যোক্তাবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *