সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধ এলাকায় প্লাস্টিকের তৈরি ভেলার চাহিদা বেড়েছে
মেহেদী হাসান শিমুল: বন্যা কবলিত জলাবদ্ধতা এলাকায় মানুষের চলাচল জন্য নৌকা ছাড়া অন্য কোন যানবাহন না থাকায়। নৌকার বিকল্প হিসেবে অল্প খরচে সাধ্যের মধ্যে প্লাস্টিকের বোতল বা ড্রাম অথবা ককশিট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভেলা। ভেলা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়… প্লাস্টিকের বস্তা সেলাই করে বড় আকারের প্যাকেট তৈরি করে তার ভেতরে ককশিট ও প্লাস্টিকের পানির বোতল দিয়ে আনুমানিক ৮ ফুট লম্বা, ৫ ফুট চওড়া ও ৩ ফুট উচ্চতার ভেলা তৈরি করে উপরে হালকা কাঠের পাটাতন দিয়ে বসার উপযোগী করা হয়। প্রকার ভেদে ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের ভেলা তৈরি করতে দেখা যায়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার অতি বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা এলাকায় প্লাস্টিকের তৈরি ভেলার ব্যাপকহারে ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে একাধিক বাড়িতে এই ভেলা দেখা মেলে। রোববার সকালে ধুলিহর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়।
পাকা রাস্তার উপরে হাঁটু বা কোমর সমান পানি বসত ভিটায় পানি রান্না ঘরে পানি পায়খানা ঘর পানিতে ভেসে গেছে। দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতার কারনে পানি দূষিত হয়ে গেছে। এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গোবিন্দপুর গ্রামের নজরুল সানা জানান দীর্ঘদিন ধরে আমরা পানিবন্দি আমি মাছের ব্যবসা করি আমাকে দিনে ৩-৪ বার বাজারে যেতে হয়। এত পানির ভিতরে ভিজে পড়ে যেতে আমার কষ্ট হয় তাই আমি প্লাস্টিকের ভেলা তৈরি করেছি ভেলা তৈরি করে আমার অনেক উপকার হচ্ছে। শাহিনুর নামে এক ব্যক্তি জানান, আমাদের এলাকায় বন্যার কারণে পানি দূষিত হয়ে গেছে খাবার পানির খুব সংকট। আমি এই ভেলায় করে তিন থেকে চার কিলোমিটার দূর থেকে বিশুদ্ধ পানি আনি এবং আমার ভেলার মাধ্যমে অন্যদেরকেও পানি এনে দেয়। এতে করে আমাদের অনেক উপকার হচ্ছে। গোবিন্দপুর গ্রামের জাকির হোসেন কে একটি বড় ভেলা যাহা ৭ ফুট লম্বা ৫ ফিট চওড়া ও ৩ ফুট উচ্চতার ভেলা নিয়ে দেখা যায়, তার ভেলায় ২৫ কেজি ওজনের ৪ বস্তা পোল্ট্রি ফিড নিয়ে যাচ্ছে । তিনি জানান আমার পোল্ট্রির খামার আছে প্রতিদিন পোল্ট্রি খাবার ফিড লাগে আমাদের এলাকার রাস্তা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার কারণে ভ্যান, ইজিবাইক না আসায় ভেলায় করে পোল্ট্রি ফিড নিয়ে আসি।
আশিকুর রহমান আশিক নামে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্র জানান আমি আমার স্কুল ও প্রাইভেট পড়তে বাড়ি থেকে দুই তিনবার যেতে হয়। প্রতিদিন দুই টা ড্রেস জামা কাপড় ভিজে নষ্ট হতো। তাই আমার আব্বু আমার ভেলা তৈরি করে দিয়েছে ভেলায় করে আমি বাড়ি থেকে রাস্তায় উঠি এতে আমার অনেক সুবিধা হচ্ছে।
বালুইগাছা গ্রামের হাফিজুল বলেন, জলাবদ্ধতায় পানি দূষিত হওয়ায় হাত,পা চুলকায় তায় আমি ভেলায় করে প্রয়োজনীয় কাজ মেটায়। তিনি জানান আমার এই সময়ে নৌকা কেনার সামর্থ্য নেই। সেজন্য আমি প্লাস্টিকের বোতল কিনে ভেলা তৈরি করতে আমার সর্বমোট ১৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। ভেলা তৈরির জন্য প্লাস্টিকের বোতল ৩০ টাকা দরে ক্রয় করি।
সাংবাদিক দেখে এলাকাবাসী জানায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মধ্যে আমাদের ধুলিহরর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা বছরের ৬ মাস পানি বন্দী হয়ে থাকে। তবে এবারের জলাবদ্ধতা ভয়াবহ বন্যার আকার ধারণ করেছে। আমাদের পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আমাদের ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে আপনাদের মাধ্যমে আমরা অতি দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।