আজ ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শারদোৎসবের সূচনা
ডেস্ক রিপোর্ট: শারদোৎসবে মাতোয়ারা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি মানুষ। বোধন শেষে আজ বুধবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটছে বাঙালির শারদোৎসব।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। প্রতিটি মন্ডপেই আধুনিক থিমের সঙ্গে ডিজিটাল আলোকসজ্জায় উদ্ভাসিত চারিদিক। আজ শুরু হয়েছে আগামী ১৩ অক্টোবর রবিবার প্রতীমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনি, আর ভক্তকূলের আবহনের মন্ত্রোচ্চারণে দেবী দুর্গার স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আগমন ঘটেছে। পূজার মন্ত্রোচ্চারণ, মন্দিরে মন্দিরে ধূপ-ধুনোয় ভক্তদের নৃত্য আরতি, আর ঢাক-ঢোল, কাঁসর-মন্দিরার পাশাপাশি মাইকের আওয়াজ আর বর্ণাঢ্য আলোকচ্ছটায় আজ সারাদেশের পূজামন্ডপগুলো উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে।
দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে দুর্গতিনাশিনীর আগমন আনন্দে বিহ্বল বিশ্বের কোটি হিন্দু সম্প্রদায়। প্রতিমা তৈরি শেষ। বাহারি রঙ চড়েছে প্রতিমার গায়। নিপুণ শিল্পী তার তুলির আলতো ছোঁয়ায় জাগিয়ে তুলেছেন মা দুর্গাকে। জেগে উঠবেন সরস্বতী। গণেশের গায়ে উঠেছে নক্সীদার কুচির দুধসাদা ধুতি। মা লক্ষ্মীর হাসি ঝরে পড়ছে মন্ডপগুলোতে। আজ ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে খুলে যাবে মা দুর্গার সিগ্ধ শান্ত চোখ। জেগে উঠবেন দশভুজা। আশীর্বাদ দেবেন মনোবাঞ্ছা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পূজারীকে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমী।
এর আগে মঙ্গলবার সারাদেশের পূজাম-পগুলোতে দুর্গা দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা পূজা করা হয়। মন্ডপে-মন্দিরে পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এই বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিযে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দুর্গতিনাশিনী দুর্গা এসেছেন বিশ্ব শান্তির জন্য তথা সবার মঙ্গলের তরে। কিন্তু অসূরবিনাশিনী জগজ্জননী দেবী দুর্গা বাঙালিগৃহে আসেন অন্যভাবে। কৈলাশ ছেড়ে প্রতিবছর তিনি আসেন বাবার বাড়িতে কন্যারূপে। দেবী দুর্গার সঙ্গে প্রতি শরতে মর্ত্যে আসেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। এই চালচিত্রে দেব-দেবীদের শিবও বাদ যান না। লক্ষ্মী সমৃদ্ধি ও সরস্বতী জ্ঞানের প্রতীক। কার্তিক হচ্ছেন দেব সেনাপতি, শত্রুনাশকারী। আর গণেশ হচ্ছেন সর্বসিদ্ধিদাতা অর্থাৎ মানুষের কামনা পূরণকারী। বাঙালি হিন্দুরা যে কোনো শুভ কাজে ইষ্টনাম হিসেবে দেবী দুর্গাকে স্মরণ করে থাকেন। পূরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লঙ্কা যাত্রার আগে শ্রী রামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে, যা শারদীয় দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। দেবীর শরৎকালের পূজাকে এজন্যই হিন্দুমতে অকাল বোধনও বলা হয়।
এ বছরে দেবী দুর্গার আগমন হবে দোলায় বা পালকিতে। ওই পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে ফলাফল হয় মড়ক। দেবী দুর্গার ২০২৪ সালে মর্ত্যে আগমন যেহেতু দোলায় হচ্ছে, তার ফলাফল হতে পারে মড়ক। যা শুভ ইঙ্গিত নয়। এছাড়াও দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্র মতে দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হয়। সেই নিরিখে ২০২৪ সালে দেবীর গমন ঘোড়ায় হওয়ার জেরে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হতে পারে। শাস্ত্রমতে এই ঘোটকে গমনের ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক এলোমেলো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। এটি যুদ্ধ, বিগ্রহ, আশান্তির ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।.
লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজ ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাষ্টমী ও ১২ অক্টোবর মহানবমী এবং দশমী পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন এবং ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসবের। দুর্গোৎসব চলাকালে পূজার প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগআরতির আয়োজন করা হবে। এছাড়া দেশজুড়ে দুর্গোৎসব চলাকালে মন্ডপে মন্ডপে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, নাটক, নৃত্যনাট্যসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হবে।
পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়েছে। সারাদেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মণ্ডপ। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সারাদেশে এ বছর ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। ঢাকা মহানগরে এ বছর ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে। রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মন্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।