সংঘাতে অশান্ত পাহাড়, নিহত ৪
হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতায় উত্তপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি। সংঘাতময় পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার খাগড়াছড়িতে তিনজন নিহত হয়েছে। খাগড়াছড়ির সংঘর্ষের জেরে উত্তাল ছিল রাঙামাটি। সেখানেও প্রাণ গেছে একজনের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
খাগড়াছড়িতে নিহতরা হলেন– ধনঞ্জয় চাকমা (৫০), রুবেল ত্রিপুরা (২৫) ও জুনান চাকমা (২০)। গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রাঙামাটি সদরে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ, দোকানপাট ও বাড়িঘরে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। জেলা সদরের বনরূপা, উত্তর কালিন্দীপুর, কালিন্দীপুর এবং বিজন সরণি এলাকার দেড় কিলোমিটারজুড়ে সংঘাত চলে। সংঘর্ষের ঘটনায় একজন পাহাড়ি যুবক নিহত; আহত হয়েছেন দু’পক্ষের শতাধিক।
এদিকে গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বিবৃতিতে জানিয়েছে, খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে তিনজন নিহত হয়েছে। সেনাবাহিনী বলছে, তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছে। এ পরিস্থিতির জন্য পাহাড়িদের সংগঠন ইউপিডিএফ দায়ী; বলছে সেনাবাহিনী। আইএসপিআর জানায়, চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে। সেখানে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে তিন পার্বত্য জেলায় সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বার্তায় এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে পাহাড়িদের ওপর ‘হামলা’র প্রতিবাদে শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ হয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাঙামাটিতে শুক্রবার সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হয়েছেন। নিহতের নাম অনিক কুমার চাকমা। তাঁর গ্রামের বাড়ি রাঙামাটি সদরের নোয়াদমের জীবতলী ইউনিয়নে।
হামলাকারীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ কার্যালয়ে রাখা বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করলে কার্যালয়ের নিচের অংশ পুড়ে যায়। একটি বৌদ্ধমন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর, বিভিন্ন স্থাপনা ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট চালায় এবং বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাঙামাটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। তবে পরিস্থিতি এখনও থমথমে। শহরে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ। তবে অনিক নামে যে যুবক মারা গেছেন, তিনি কোথায় এবং কীভাবে মারা গেছেন, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। হাসপাতালে তাঁকে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় আগের দিনের সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জেলা জিমনেশিয়াম চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বনরূপায় পৌঁছলে একটি ভবনের ওপর থেকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। এতে একজন পাহাড়ি মাথায় আঘাত পেলে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। পরে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দোকানে হামলা করেন। পরে মিছিলটি জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বরে চলে যায়। এক পর্যায়ে বাঙালিরা দা, কিরিচ ও লাঠিসোটা নিয়ে মিছিলের দিকে এগোলে উভয় পক্ষের মধ্য ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে উভয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা পিছু হটলে এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় বাঙালিরা। পরে তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ে রাখা বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করলে কার্যালয়ের নিচের অংশ পুড়ে যায়। এ ছাড়া হামলাকারীরা বনরূপা, কালিন্দীপুরসহ কয়েকটি স্থানে পাহাড়িদের দোকানপাট ও কাঁঠালতলী মৈত্রী বিহারে গিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় হামলাকারীরা সেখানে জেলা মহিলা অধিদপ্তরের গেটের তালা ভেঙে সেখানে রাখা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। এর মধ্যে সমকালের রাঙামাটি অফিসের স্টাফ রিপোর্টার ও প্রথম আলোর প্রতিনিধির মোটরসাইকেলও রয়েছে। কয়েক ঘণ্টা এ অবস্থা চলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে ১৪৪ ধারা জারি করলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, তবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, পৌরসভা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে এবং জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা রয়েছে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাঙামাটি শহরে শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বহাল থাকবে।
খাগড়াছড়িতে ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
খাগড়াছড়ি সদরে বুধবার মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মো. মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে পাহাড়িরা। মামুন খাগড়াছড়ি সদরের শালবন মধ্যপাড়ার মৃত নূর নবীর ছেলে। তাঁর মৃত্যুর পর ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠী। মামুনকে হত্যার প্রতিবাদে পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে দীঘিনালায় বাঙালি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় লারমা স্কয়ার বাজারে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ৫০টির বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে যায়। আহত হন পাঁচজন।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শহীদুজ্জামান জানিয়েছেন, শুক্রবার হাসপাতালে যাদের আনা হয়, তার মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। অপর দু’জনের হাসপাতালে আনার পর মৃত্যু ঘটে। আহতদের মধ্যে চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আরও পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শওকত আকবর খান জানান, শুক্রবার হাসপাতালে আহত অবস্থায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৪ জনকে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে একজন নিহত হয়েছেন। ৫৪ জনের মধ্যে ১৯ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, নিহতদের মধ্যে জুনান চাকমা ও রুবেলের বাড়ি খাগড়াছড়ি সদরে এবং ধনঞ্জয় চাকমার বাড়ি দীঘিনালায়।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি বাতেন মৃধা জানান, নিহতদের মরদেহ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় খাগড়াছড়িতে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা বা কেউ আটক হননি। দীঘিনালা থানার ওসি নুরুল হক জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কোনো মামলা বা আটকের খবর নেই।
এদিকে ঘটনার পর শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসক মো. শহীদুজ্জামান, দীঘিনালা সেনা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওমর ও পুলিশ সুপার আরিফিন জুয়েল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা দীঘিনালার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তদন্ত কমিটি গঠনসহ দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচারের আশ্বাস দেন।
তিন জেলায় ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ডাক
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর হামলা, খুন, বিহার ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলায় আজ শনিবার থেকে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এ ছাড়া সংগঠনটি ঢাকায় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা আয়োজিত সমাবেশ থেকে ঘোষিত তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
বিবৃতিতে ইউপিডিএফ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পাহাড়িদের ওপর এ ধরনের বর্বর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাঁর সরকার এ হামলার দায় এড়াতে পারে না।
আজ যাচ্ছে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল আজ শনিবার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পরিদর্শন করবে। এ দলে আরও থাকছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানা গেছে।
তিন জেলায় দাঙ্গার শঙ্কা
আইএসপিআর বিবৃতিতে জানায়, ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে উচ্ছৃঙ্খল জনতার পিটুনিতে মামুনের (৩০) মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বিকেলে দীঘিনালা কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় ইউপিডিএফের (মূল) সন্ত্রাসীরা মিছিলের ওপর হামলা করে ও ২০-৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে।
আইএসপিআর আরও জানায়, পরে সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার ব্রিগেড ও স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় আগুন নেভায়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশপাশ এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতিকে ক্রমেই উত্তেজনাকর করে। দ্রুততার সঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়িসহ সব উপজেলায় যৌথভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে টহল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সব পক্ষকে সহিংস কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল সকাল সাড়ে ১০টায় একজন মুমূর্ষু রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে ইউপিডিএফ (মূল) বাধা সৃষ্টি করে। এ সময় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল দলের সদস্যদের ওপর গুলি করে। আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। এ গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হন বলে জানা যায়। আইএসপিআর আরও জানায়, একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনসাধারণ কয়েকজন যুবকের মোটরসাইকেল থামিয়ে তাদের ওপর হামলা ও লাঠিপেটা করে। সেই সঙ্গে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে ফায়ার ব্রিগেডের অফিসে ভাঙচুর করা হয়।
আইএসপিআর জানায়, শুক্রবার সকালে পিসিজেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা সদরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে রাঙামাটি জিমনেশিয়াম এলাকায় সমবেত হয়। এ সময় ৮০০-১০০০ জন উত্তেজিত জনতা মিছিল নিয়ে বনরূপা এলাকার দিকে অগ্রসর হয়। তারা বনরূপা বাজার মসজিদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কিছু লোকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
আইএসপিআরের আশঙ্কা, চলমান উত্তেজনার জেরে তিন পার্বত্য জেলা ভয়াবহ দাঙ্গাকবলিত হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। আইএসপিআর বলেছে, যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে আইএসপিআর।
ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়িদের ওপর ‘হামলা’র প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন পাহাড়ি ছাত্র-জনতা। গতকাল দুপুরে ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সকালে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশ থেকে পাহাড়িদের বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সতেজ চাকমা বলেন, ‘আমরা বারবার বলে এসেছি– পাহাড়ের সমস্যাকে জিইয়ে রাখার কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের ওপর হামলা হচ্ছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালাসহ রাঙামাটি এবং পুরো পাহাড়ে জুম্মদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের জন্য অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হোক।’
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘ইন্ডেজিনাস স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’। এ ছাড়া বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা।
সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে মশাল মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সহসাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য হাসান মারুফ রুমি, সমগীতের সাধারণ সম্পাদক বীথি ঘোষ, নারী সংহতির সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারশনের সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।