কালিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখিয়ে নাজিমগঞ্জ বাজারে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার: কালিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখিয়ে নাজিমগঞ্জ বাজারে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের জার্সি খুলে বিএনপি’র তকমা গায়ে লাগিয়ে স্থানীয় কথিত বিএনপি নামধারী বখাটেদের মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে উপজেলা প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখিয়ে সরকারী পেরিফেরিভুক্ত ঐতিহ্যবাহী নাজিমগঞ্জ বাজারে কোটি টাকার সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে রাতারাতি সাইদুর বস্ত্রালয়ের ভবন নির্মাণ শুরু করেছে।
সরকারি পেরিফেরিভুক্ত দেড় বিঘা জমি কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে লিজ ছাড়াই অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে দখল করে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে আসলেও দেখার কেউ নাই।
জানা যায়, উজয়মারি গ্রামের সুরত আলী মোড়লের পুত্র নাজিমগঞ্জ বাজারের সাইদুর বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী সাইদুল মোড়ল, সিরাজুল মোড়ল এবং মনিরুল মোড়ল শীতলপুর মৌজার বিআরএস ১ নং খাস খতিয়ানের ৭৭৮ দাগে হাট শ্রেণীর প্রায় দেড় বিঘা জমি দখল করে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে একাধিক দোকান ভবন, গোডাউন, বাসস্থান নির্মাণ করে ব্যবসা করে আসছে।
এরমধ্যে ০.১৬ একর জমির উপরে গোডাউনের ছাদ নির্মাণ করতে গেলে স্থানীয় তহশিলদার মোহাম্মদ আলী গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল আনুমানিক ৭ টার সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার জন্য নিষেধ করে আসেন। কিন্তু তারা নিষেধ অমান্য করে পুনরায় কাজ শুরু করলে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস ঘটনাস্থলে যেয়ে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেন।
অথচ, উক্ত নির্দেশ উপেক্ষা করে স্থানীয় বিএনপি নামধারী কিছু বখাটেদের মোটা অংকের টাকায় রফা দফা করে গত (রবিবার ১৫ সেপ্টেম্বর) রাতারাতি ভবন নির্মাণের কাজের ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করে। উক্ত ঘটনায় মথুরেশপুর ইউনিয়নের বসন্তপুর ভূমি অফিসের সহকারি তহশিলদার গাজী মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ১৫১ নং স্মারকে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমির) মাধ্যমে সাইদুর বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী সাইদুল মোড়ল তার ভাই সিরাজুল এবং মনিরুল মোড়লের নামে কালিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, সাইদুর বস্ত্রালয়ের আরেক স্বত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম মোড়ল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ আ ফ ম রুহুলকের এপিএস এর নিকট আত্মীয় মোসায়েদের প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগের জার্সি পরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
বিগত সংসদ নির্বাচনে ভোল পাল্টে বিএনএম এর প্রার্থী ১৪দলীয় জোটের হয়ে এইচ এম গোলাম রেজার নোঙ্গর প্রতীক নিয়ে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে। গোলাম রেজা হেরে পোল্টি মারলে আবারো ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগের তোকমা গায়ে লাগিয়ে বসন্তপুর নৌ বন্দরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের প্রধান অতিথি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর আগমন উপলক্ষে গাছে গাছে তার পোস্টার সম্বলিত ছবি ঝুলতে দেখা যায়।
গত ৫ আগস্ট রাতারাতি ভোল পাল্টে নিজের অবৈধ স্থাপনা ও কোটি কোটি টাকা রক্ষা করতে বিএনপির জার্সি গায়ে লাগিয়ে বিএনপি বিভিন্ন সভা সমাবেশে যোগদানে ব্যস্ত সময় পার করে চলেছে।
বিষয়টি নিয়ে নাজিমগঞ্জ বাজারসহ উপজেলা জুড়ে রাজনৈতিক মহলে টক অফ দা টাউন এ পরিণত হয়েছে এ ব্যাপারে আলোচিত স্বত্বাধিকারী মনিরুল মোড়লের নিকট জানতে চাইলে তিনি অবৈধ সরকারি কার জন্য দখল এবং লিজের কাগজপত্রের কোন সঠিক সদোত্তর দিতে পারেনি।
বসন্তপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি তহশিলদার গাজী মোহাম্মদ আলীর নিকট ঘটনার সত্যতা জানার জন্য গেলে তিনি জানান আমি একাধিকবার তাকে নিষেধ করলেও সে ভূমি অফিসকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে কাজ অব্যাহত রাখে বিষয়টি আমি আমার স্যারকে মিটিংয়ে জানাই। তিনিও নিজে গিয়ে নিষেধ করার পরও সে রাতারাতি ছাদ ঢালাই এর কাজ সম্পন্ন করে, যে কারণে আমি স্যারের নির্দেশে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি ) অমিত কুমার বিশ্বাস জানান, বিষয়টি জানার পর আমি নিজে তাদেরকে ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে, মালামাল অপসারণের নির্দেশ দেই। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে রবিবার তারা রাতারাতি ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করে। আমি দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে মামলা ছাড়াও ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে বলে জানান।