এক হাতে বাদাম বিক্রেতা তালার মাহবুর ভ্যান ক্রয়ের জন্য পেলেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের আর্থিক সহায়তা
মেহেদী হাসান শিমুল: সাতক্ষীরা কালেক্টরেট চত্বরে রাস্তার পাশে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালান মাহবুর মোড়ল। হতদরিদ্র এই মানুষটির একটি হাত নেই, তবুও হারাননি মনোবল। ভিক্ষা না করে তিনি ব্যবসার মাধ্যমে জীবন-জীবীকা নির্বাহ করেন। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকা্র সাংবাদিক মেহেদী হাসান শিমুল একটি সংবাদ প্রকাশ করেন। সংবাদটি জেলার বিভিন্ন পত্রিকা ও দৈনিক কালের চিত্র অনলাইনে প্রকাশিত হয়। সংবাদের বিষয়টি সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমা্য়ুন কবিরের নজরে আসে।
মাহবুর মোড়লের এই সংগ্রামী জীবনকে স্বীকৃতি দিয়ে তার জীবিকা নির্বাহ সহজ করতে রবিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাহবুবুর মোড়লকে রোববার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির তাকে একটি ভ্যান ক্রয়ের জন্য ৫ হাজার টাকা ও চালসহ ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করেন। জেলা প্রশাসনের এই মানবিক সহায়তা উপস্থিত অনেকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এর আগে জেলা প্রশাসক মানবিক সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিক মেহেদী হাসান শিমুলকে ধন্যবাদ জানান।
মাহবুর মোড়লের মতো সংগ্রামী মানুষদের জন্য এ ধরনের সহায়তা শুধুমাত্র আর্থিক নয় বরং এটি তাদের মনোবল বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমন মানুষদের প্রতি সহানুভূতির দৃষ্টি রেখে সহায়তা করা সমাজের সকলের দায়িত্ব। জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ সমাজের অন্যান্য স্তরের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা যায়।
এ বিষয়ে মাহবুবুর মোড়ল বলেন, আমার পরিবারের ৫ জন সদস্যের আমি এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার এক হাত না থাকায় সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাজা বাদাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য ডিসি স্যারকে ধন্যবাদসহ তাঁর নেক হায়াত কামনা করছি। স্যারের মত মানবিক ডিসি এদেশে বিরল। মহান আল্লাহ তাঁকে উত্তম প্রতিদান দিবেন।
উল্লেখ্য ২০২০ সালের দিকে বিচুলি কাঁটা বা খড় কাঁটার মেশিনে তালা উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের হাতবাস গ্রামের মৃত আফছার মোড়লের ছেলে মাহবুবুর মোড়লের ডান হাত কেটে যায়। সেখান থেকে ২ বছর ধরে ধার দেনা করে কয়েক লক্ষাধীক টাকা টাকা খরচ করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে । প্রায় ৩ বছর ধরে বাদাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসিতেছে, ৩ কাঠা বসত ভিটার জমি ছাড়া তার আর কোন জমি যায়গা নেই বললেই চলে। দুই সন্তানকে নিয়ে খুব অসহায় অবস্থায় কষ্টে আছি। এজন্য শুকরিয়া আদায় করছি।
মাহবুর মোড়লের প্রতিটি দিনই সংগ্রামের গল্প। তার সাহসিকতা আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা। সাতীরা জেলা প্রশাসন এই সহায়তার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে মানবিকতা এখনও বেঁচে আছে এবং সমাজের অন্যদেরও এমন মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে উৎসাহিত হওয়া উচিত। এই সহায়তা মাহবুর মোড়লের জীবনের চাকা সচল রাখার পাশাপাশি তার আত্মবিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করবে।