ভিক্ষা না করে বাদাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তালার মাহবুবুর
মেহেদী হাসান শিমুল: জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে অবিচল যুবক সাতক্ষীরা তালা উপজেলায় তেঁতুলিয়া ইউয়নের হাতবাস গ্রামের মৃত আফছার মোড়লের ছেলে মাহবুবুর মোড়ল (৩৫) ।
মাহবুবুর মোড়ল বিচুলি বা খড় কাঁটা মেশিনে গ্রামে গ্রামে বিচুলি কেটে জীবিকা নির্বাহ করতো। ২০২০ সালের দিকে বিচুলি কাঁটা মেশিনে তার ডান হাত কেটে যায়। সেখান থেকে প্রায় ২ বছর ধার দেনা করে কয়েক লক্ষাধীক টাকা খরচ করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়। এবং তার হাত অপারেশন করে ডান হাতের কোনুই পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে । ৫ জন সদস্যের পরিবার মাহবুবুর মোড়লের এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সে । বসত ভিটার ৩ কাঠা জমি ছাড়া তার আর কোন জমি যায়গা নেই বললেই চলে। পরিবারে স্বামী-স্ত্রী ও মা, ২ ছেলেমেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। মাহবুবুর মোড়লের ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র, মেয়ের বয়স মাত্র ৫ বছর । এক হাত না থাকায় তিনি কোন কঠোর পরিশ্রমের কাজ করতে না পারায় তিনি দিশাহারা হয়ে পড়ে। তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নেয় কোন একটা কিছু করার ।
তবে তার ব্যবসা করার মত কোন মূলধন না থাকায় ভাজা বাদাম বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়। তিন বছর ধরে বাদাম নিয়ে বিভিন্ন বাজারে বাজারে বা প্রতিষ্ঠানে বাদাম বিক্রি করতে থাকে। প্রতিদিন সকালে তালা উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের হাতবাস গ্রাম থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূর থেকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল এলাকা ও সাতক্ষীরা জজ কোট এলাকায় ঝুড়িতে করে বাদাম নিয়ে গলায় ঝুলিয়ে বাদাম বিক্রি করতে থাকে। তার ডান হাত না থাকাই কাঁটা হাতের অবশিষ্ট অংশ দিয়ে বাদাম বিক্রয়ের কাগজ মুড়িয়ে বাদাম বিক্রি করতে থাকে। প্রতিদিন তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কেজি বাদাম ভেঁজে বিক্রয়ের উপযোগী করে। দিন শেষে এগুলো বিক্রি হয় প্রায় ১৫০০ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বাদাম বিক্রি টাকা রোজগার করে তার সংসার চালায়।
একহাত না থাকা সত্বেও জীবিকার উদ্দেশ্যে ভিক্ষাবৃত্তি বা সাহায্য না চেয়ে কষ্ট করে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালানো যুবক মাহবুবুর মোড়ল এই সমাজে হার না মানা যোদ্ধা।