Uncategorized

মাছ কত দিন ফ্রিজে রাখা যায়?

রাফিয়া আলম: ব্যস্ত নাগরিক জীবনে রোজ রোজ বাজার করার ফুসরত কই? সময় বাঁচাতে অনেকেই তাই সপ্তাহ বা মাসের বাজার একবারে করে রাখেন। বা সুবিধামতো বাজার করে লম্বা সময়ের জন্য সংরক্ষণ করে রাখেন। এ ক্ষেত্রে সহজেই পচে যায়, এমন খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করাটা খুবই জরুরি।

রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান বলছিলেন, এসব খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে গুণগত মান ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি জীবাণুও ঢুকতে পারে। ফলে ওই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিও থাকে। মাছের ক্ষেত্রেই এটা বেশি হয়ে থাকে। সংরক্ষণের ভুলে মাছ নষ্ট হয়ে যায়। বদলে যায় স্বাদ ও ঘ্রাণ। বাজার থেকে আনার পর ভুলভাবে সংরক্ষণের জন্য অনেক সময় মাছ নষ্ট হয়ে যায়।

তবে ভালো মানের ডিপ ফ্রিজে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে দু-তিন মাস অবধি ভালো থাকে মাছ। ছোট মাছের ব্যাপারটা অবশ্য একটু আলাদা। এগুলো খুব সহজেই পচে যায়। এসব মাছ টাটকা অবস্থায় খেয়ে ফেলাই ভালো। ভালোভাবে ফ্রিজে রাখলেও সর্বোচ্চ এক মাস ভালো থাকে ছোট মাছ। মাছ সংরক্ষণ বিষয়ে এমন নানা তথ্য জানালেন রন্ধনশিল্পী জেবুন্নেসা বেগম। ফ্রিজে রাখার আগে সামুদ্রিক মাছের টুকরায় সামান্য লেবুর রস মাখিয়ে নিতে পারেন।

মিঠা পানির মাছ
মাঝারি বা বড় আকারের মাছ আস্ত অবস্থায় সংরক্ষণ করতে পারেন। গোটা অবস্থায় রাখলে লেবুর রস মাখিয়ে রাখতে পারেন। এসব মাছ টুকরা করেও রাখা যায়। এভাবে রাখলে লবণ-হলুদ মাখিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে পারেন। সবশেষে লেবুর রস মাখিয়ে নিন। কিংবা চাইলে না ধুয়ে একবারেই লবণ আর লেবুর রস মাখিয়ে রেখে দেওয়া যায়।

সামুদ্রিক মাছ
একটি মাছকে তিন-চারটি বড় টুকরা করে নিন। এবার বায়ুরোধী একটি বাক্সে এমনভাবে পানি নিন, যাতে মাছের টুকরাগুলো পুরোপুরি ডুবে থাকে। এভাবে বাক্সটি ডিপ ফ্রিজে রেখে দিলে মাছের টুকরাগুলো সুন্দরভাবে বরফে থাকবে। গোটা মাছটাই এভাবে বরফ করে রাখতে পারলে বেশি ভালো হয়, তবে সাধারণত ফ্রিজে এতটা জায়গা থাকে না। মাছের টুকরায় সামান্য লেবুর রস মাখিয়ে নিতে পারেন।

ইলিশ মাছ
ইলিশ মাছের সংরক্ষণপদ্ধতি একটু আলাদা। ইলিশ মাছ ফ্রিজে রাখার আগে ধোয়া যাবে না। ইলিশ অবশ্যই গোটা অবস্থায় সংরক্ষণ করতে হবে। মাছের গায়ে ময়লা থাকলে হাত দিয়ে সরিয়ে ফেলুন।

শুঁটকি মাছ
শুঁটকি মাছ ফ্রিজের বায়ুরোধী বাক্সে বা পলিথিনে মুখ ভালোভাবে আটকে রেখে দিতে পারেন। ঘ্রাণ ঠিক থাকবে। শুকনা শুঁটকি বাইরেই রাখা যায়। ভেজা ধরনের শুঁটকি অবশ্য ফ্রিজ বা ডিপ ফ্রিজে রাখতে হয়।

সব মাছের ক্ষেত্রেই যা খেয়াল রাখতে হবে
যেকোনো মাছ কেনার সময়ই দেখেশুনে নেওয়া উচিত। বাজার থেকে কেনার সময়ই যদি মাছে কিছুটা পচন ধরে গিয়ে থাকে, তাহলে তা ভালোভাবে সংরক্ষণ করেও তেমন লাভ হবে না। মাছ সংরক্ষণের সময় কোনো মাছ নরম হয়ে গেছে মনে হলে পেট পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নিতে পারেন। এটি আর ফ্রিজে না রাখাই ভালো।

বায়ুরোধী বাক্সে মাছ সংরক্ষণ করা যেতে পারে। যেসব মাছ পলিথিনে রাখা হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে পলিথিনের মুখ ভালোভাবে মুড়ে রাখুন। আর ছোট মাছ পলিথিনে রাখতে হলে অবশ্যই ভালো মানের পলিথিন বেছে নিন।

মাছ এমনভাবে ভাগে ভাগে রাখা উচিত, যাতে কোনো ভাগ একবার ফ্রিজ থেকে নামানো হলে আবার ওঠানোর প্রয়োজন না পড়ে। অর্থাৎ, একবার যতটুকু প্রয়োজন হবে, একটা ভাগে কেবল ততটুকুই রাখতে হবে।

প্রতিটি ভাগে একটি মোটা কাগজে সংরক্ষণের তারিখ লিখে রেখে দিতে পারেন। কাগজটা এমনভাবে রাখবেন, যাতে প্যাকেট বা বাক্সটি হাতে নিলেই তারিখটা দেখা যায়। তাহলে ফ্রিজে রাখার পর খুব বেশি দিন পার হয়ে গিয়ে মাছ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমবে। সুত্র: প্রথম আলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *